—ফাইল চিত্র।
কড়া পাহারায় অনাড়ম্বর ভাবে পালিত হল ভীমা কোরেগাঁও লড়াইয়ের বার্ষিকী। ইংরেজি বছরের প্রথম দিনে প্রতীকী অনুষ্ঠানে জনা তিনেক মন্ত্রী ছাড়া হাতে গোনা কয়েকটি সংগঠনের প্রতিনিধিদের শ্রদ্ধা জানাতে দেওয়া হলেও কোনও সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি। তিন দিন আগে থেকেই পুলিশের বিশাল বাহিনী ‘জয়স্তম্ভ’ ঘিরে রেখেছিল। এ দিন আরও পুলিশ মোতায়েন করা হয়। তবে এলগার পরিষদ জানিয়েছে, ৩১ ডিসেম্বর তাঁদের সমাবেশ করতে না-দেওয়া হলেও ৩০ জানুয়ারি তাঁরা তা করবেনই। প্রশাসন অনুমোদন না-দিলে পুণের রাস্তায় সমাবেশ করবে তারা।
পয়লা জানুয়ারি উচ্চবর্ণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জয়ের বার্ষিকী পালন করেন ভীমা কোরেগাঁওয়ের জনজাতি ও দলিত সম্প্রদায়। উচ্চবর্ণের হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি আবার এর ঘোর বিরোধী। ২০১৭-য় প্রভাবশালী হিন্দুত্ববাদী নেতা মিলিন্দ একবোটের নেতৃত্বে উচ্চবর্ণের লোকেরা অস্ত্র নিয়ে দলিত সমাবেশের উপরে চড়াও হলে এলাকায় হিংসা ছড়িয়ে পড়ে। তখনকার বিজেপি সরকার মিলিন্দ একবোটেকে আড়াল করে যাবতীয় দায় চাপায় উমর খলিদ, জিগ্নেশ মেবাণী, রোহিত ভেমুলার মা রাোধিকা ভেমুলা, দলিত নেতা প্রকাশ অম্বেডকর, মানবাধিকার কর্মী সোনি সোরির মতো এলগার পরিষদের সমাবেশে উপস্থিত দলিত নেতা-নেত্রীদের। পুলিশ চার্জশিটে দাবি করে, আগের দিন এঁদের উস্কানিমূলক বক্তৃতার কারণেই উচ্চবর্ণের লোকেরা ক্ষুব্ধ হন। এলগার পরিষদের সংগঠকদের বিরুদ্ধে মাওবাদীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার অভিযোগ এনে জেলে পুরেছে বিজেপি সরকার। স্ট্যান স্বামী, সুধীর দাওয়ালে, গৌতম নওলখা, সুধা ভরদ্বাজ, ভারাভারা রাওয়ের মতো প্রবীণ বিদ্বজনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুর করেছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা বা এনআইএ।
এ বার করোনা পরিস্থিতির কারণ দেখিয়ে পুণে জেলা প্রশাসন জানিয়ে দেয়, ভীমা কোরেগাঁওয়ে সমাবেশ করতে দেওয়া হবে না। হিন্দুত্ববাদী একবোটের সংগঠন এবং দলিতদের কবির কলা মঞ্চ— দু’পক্ষের আবেদনই খারিজ করে দেওয়া হয়। এ দিন প্রতীকী অনুষ্ঠানে ভীমা কোরেগাঁয়ের জয়স্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান মহারাষ্ট্রের তিন মন্ত্রী অজিত পওয়ার, নিতিন রাউত এবং অনিল দেশমুখ। তার পরে সরকারি তালিকা মেনে একে একে শ্রদ্ধা জানান কয়েকটি সংগঠনের দু-এক জন করে প্রতিনিধি। গোটা ময়দান ছিল পুলিশে ছয়লাপ।
তবে এলগার পরিষদের অন্যতম আয়োজক অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি বি জি কোলসে পাটিল বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়েছেন, ৩১ ডিসেম্বর তাঁরা দলিত সম্মেলন করতে চাইলেও প্রশাসন অনুমতি দেয়নি। এর পরে ৩০ জানুয়ারি পুণে শহরের গণেশ কলা ক্রীড়া মাঠে তাঁরা এই সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পাটিল বলেন, “প্রশাসন সেখানে করার অনুমতি দিলে ভাল। আর না-দিলে রাস্তাতেই সেই সমাবেশ হবে। মোট কথা, দলিত সমাবেশ হবেই হবে।” সব রাজ্য থেকে দলিত ও জনজাতিরা সেখানে যোগ দেবেন বলেও জানান এলগার পরিষদের আহ্বায়কেরা।