Narendra Modi

Economy: পুরনোয় পৌঁছেই ‘অল ইজ় ওয়েল’!

সোমবার মোদী সরকারের আর্থিক সমীক্ষা জানাল, কোভিডের ধাক্কা কাটিয়ে অর্থনীতি আবার কোভিডের আগের অবস্থায় পৌঁছে গিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৬:২৬
Share:

আর্থিক উপদেষ্টা ভি অনন্ত নাগেশ্বরন। ছবি: পিটিআই

‘অল ইজ় ওয়েল’! তবু ‘অল ইজ় নট ওয়েল’!

Advertisement

সোমবার আর্থিক সমীক্ষার পাতায় উঠে আসা দেশের অর্থনীতির ছবি সম্পর্কে অনেকটা এমনই মূল্যায়ন অর্থনীতিবিদদের এক বড় অংশের। তাঁদের যুক্তি, আগের তুলনায় অর্থনীতির অবস্থা বেশ খানিকটা ভাল। কিন্তু এখনও সব কিছু ভাল নয়।

সোমবার মোদী সরকারের আর্থিক সমীক্ষা জানাল, কোভিডের ধাক্কা কাটিয়ে অর্থনীতি আবার কোভিডের আগের অবস্থায় পৌঁছে গিয়েছে। গত দু’বছরে কোভিডের মোকাবিলায় মোদী সরকার যে সব পদক্ষেপ করেছে, তাতেই এই সুফল মিলেছে। কিন্তু সেই সমীক্ষাতেই সংশোধিত হিসাব বলছে, কোভিড হানার আগের বছরে (২০১৯-২০) বৃদ্ধির হার ছিল আসলে ৪ শতাংশেরও নীচে (৩.৭%)। প্রাক্তন মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যনের প্রশ্ন, ‘‘স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে, করোনার ধাক্কার আগেই ধুঁকছিল দেশের অর্থনীতি। তবে কি সেই মাপ এবং শামুক-গতির বৃদ্ধি ফিরে পাওয়াকেই সাফল্য বলে মনে করা হচ্ছে?’’

Advertisement

শুধু তা-ই নয়। অর্থনীতি মুখ তুলতে শুরু করেছে বলে দাবি করলেও, সমীক্ষা যে কথা স্পষ্ট ভাবে জানাল না, তা হল, বাজারে কেনাকাটা এখনও কোভিডের আগের জায়গায় পৌঁছতে পারেনি। সমীক্ষায় স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে, অর্থনীতির যে ক্ষেত্রে সব থেকে বেশি চাকরি হয়, সেই পরিষেবা ক্ষেত্র এখনও কোভিডের আগের জায়গায় পৌঁছতে পারেনি। হোটেল, পর্যটন, ব্যবসা, পরিবহণ, যোগাযোগের মতো ক্ষেত্রগুলিতে পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রেখে কাজ হওয়া কঠিন। সেখানে ছবি কোভিডের আগের তুলনায় বেশ খারাপ। প্রিন্সিপাল আর্থিক উপদেষ্টা সঞ্জীব স্যান্যালের মতে, সিংহ ভাগ মানুষের টিকাকরণ হয়ে যাওয়ার পরে অর্থনীতির এই সব ক্ষেত্র খুলে দেওয়াই একমাত্র উপায়। বাইরে থেকে দাওয়াই দিয়ে লাভ নেই।

বাজারে কেনাকাটার পরিমাণ নিয়ে চিন্তার কারণ আছে বলে সরকারের আর্থিক উপদেষ্টারা অবশ্য মানতে চাননি। বাজেট অধিবেশন শুরুর আগে খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দাবি, এখন যা আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি, তাতে দ্রুত টিকাকরণ এবং আর্থিক প্রগতির বিষয়ে ভারতের উপরে আস্থা তৈরি হয়েছে বাকি বিশ্বের।

বাজেট পেশের ২৪ ঘণ্টা আগে আজ সমীক্ষা জানিয়েছে, চলতি বছরে বৃদ্ধির হার ৯.২ শতাংশ ছোঁবে। বেশি ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে না দেখিয়ে, প্রচণ্ড বাস্তবসম্মত হিসেব কষলেও আগামী আর্থিক বছরে (২০২২-২৩) বৃদ্ধির হার ৮ থেকে ৮.৫ শতাংশের মধ্যে থাকবে। কেন্দ্রের দাবি, আন্তর্জাতিক অর্থ ভান্ডারের পূর্বাভাস এর থেকে বেশি। ৮.৫ থেকে ৯ শতাংশ। তবু ‘সাবধানী হিসাবেও’ দ্রুততম বৃদ্ধির তাজ মাথায় থাকবে ভারতেরই।

বাজেট অধিবেশনের প্রথম দিনে সংসদ ভবনের প্রবেশ পথে দাঁড়িয়ে কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুখতার আব্বাস নকভি, স্মৃতি ইরানি-সহ অন্যান্যরা। সোমবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই

কোভিডের প্রথম ঢেউয়ের সময়ে, ২০২০-২১ সালে দেশ জুড়ে লকডাউনের ধাক্কায় জিডিপি-র ৭.৩ শতাংশ সঙ্কোচন হয়েছিল। আজ তা-ও সংশোধন করে কেন্দ্র জানিয়েছে, সঙ্কোচন হয়েছিল ৬.৬ শতাংশ। তেমনই সংশোধন করে কমানো হয়েছে ২০১৯-২০ সালের বৃদ্ধির হারও। সমীক্ষার দাবি, গত বছরের এপ্রিল-জুনে কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কা অনেকটাই কম ছিল। এ কথা বললেও, অর্থ মন্ত্রক মেনে নিয়েছে, গত বছরের অনুমান মতো চলতি অর্থবর্ষে ১০-১২ শতাংশ বৃদ্ধি হবে না।

ভাল খবরের মধ্যেই খারাপ খবর লুকিয়ে থাকে। সমীক্ষা জানিয়েছে, আগামী দিনে মূল্যবৃদ্ধি চিন্তার কারণ হয়ে উঠবে। অশোধিত তেলের দাম বাড়ছে। এখন তা ব্যারেল প্রতি ৯০ ডলার। আগামী বছরে অশোধিত তেলের দাম গড়ে ৭০ থেকে ৭৫ ডলারের মধ্যে থাকবে বলে সরকারের আর্থিক উপদেষ্টাদের অনুমান।

অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, আসল চিন্তার কারণ হল, সরকারি খরচ, লগ্নি, রফতানি, আমদানি কোভিডের আগের জায়গায় পৌঁছে গেলেও, ভারতীয় অর্থনীতির আসল চালিকাশক্তি (বাজারে কেনাকাটা) চলতি আর্থিক বছরেও কোভিডের আগের বছরের তুলনায় কমই থাকবে। দেশের অর্থনীতির ৫৫ শতাংশই হল সাধারণ মানুষ ও বেসরকারি ক্ষেত্রের কেনাকাটার খরচ। কোভিডের আগে, ২০১৯-২০ সালে এর পরিমাণ ছিল ৮৩.২ লক্ষ কোটি টাকা। সমীক্ষায় অনুমান, চলতি অর্থবর্ষে তা ৮০.৮ লক্ষ কোটি টাকায় আটকে থাকবে।

বাজারে চাহিদা না বাড়লে, শিল্পে লগ্নি আসবে না। তা হলে নতুন চাকরি তৈরি হবে কী ভাবে?

নতুন মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা ভি অনন্ত নাগেশ্বরনের যুক্তি, ২০২২-২৩ সালে সিংহভাগ মানুষের টিকাকরণ হয়ে যাবে। বাজারে জোগানের দিকে সংস্কারের সুফল মিলবে। রফতানি বাড়ছে। রাজস্ব আদায় প্রত্যাশার তুলনায় অনেকটাই বেশি। ফলে পরিকাঠামো ক্ষেত্রে খরচের জন্য সরকারের হাতে অর্থ থাকবে। আগামী বছরে বেসরকারি লগ্নির জোয়ারের জন্যও মঞ্চ তৈরি। ব্যাঙ্কের পক্ষেও শিল্পকে ঋণ জোগাতে অসুবিধা হবে না। এই সব কিছুর সাহায্যে বৃদ্ধি চাঙ্গা হলে স্বাভাবিক নিয়মে চাকরি, কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।

কোভিডের প্রথম ধাক্কার সময় থেকেই মোদী সরকার সাধারণ মানুষের হাতে টাকা তুলে দিয়ে বাজারে চাহিদা তৈরির রাস্তায় হাঁটেনি। তার বদলে সহজে ঋণের ব্যবস্থা করে বাজারে জোগান বাড়ানোর রাস্তা বেছে নিয়েছিল। অধিকাংশ অর্থনীতিবিদই বলেছিলেন, মানুষের হাতে টাকা তুলে দিয়ে বাজারে কেনাকাটা বাড়ানো হোক। বিরোধীরা বলছেন, এখন দু’বছর পরে দেখা যাচ্ছে, বাজারে কেনাকাটা কোভিডের আগের জায়গায় পৌঁছয়নি। প্রিন্সিপাল আর্থিক উপদেষ্টা দাবি করেছেন, সরকার ‘বারবেল স্ট্র্যাটেজি’ নিয়ে এক দিকে গরিব মানুষকে সামাজিক সুরক্ষা দিয়েছে। আর এক দিকে অর্থনীতিতে প্রয়োজন মাফিক সাহায্য করেছে। অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোয় এই নমনীয় মনোভাবেরই সুফল মিলেছে।

প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের মন্তব্য, ‘‘এটা বড়াই করার সময় নয়। প্রায়শ্চিত্ত করে সরকারের নীতি বদলানোর সময়। ২০২২-এর ৩১ মার্চে জিডিপি আবার ২০২০-র জায়গায় গিয়ে পৌঁছবে। দু’বছর সময় লাগল দু’বছর আগের জায়গায় ফিরে যেতে! এই দু’বছরে লক্ষ-লক্ষ মানুষের চাকরি গিয়েছে। ৮৪% পরিবারের আয় কমেছে। ৪.৬ কোটি মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে চলে গিয়েছেন। বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে ভারত ১১৬টি দেশের মধ্যে ১০৪ তম স্থানে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement