নরেন্দ্র মোদীর দাবিকে কার্যত নস্যাৎ করলেন অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু। ছবি: পিটিআই।
আক্ষরিক অর্থেই মুখ থুবড়ে পড়েছে অর্থনীতি। প্রথম ত্রৈমাসিকে বৃদ্ধির হার, এমনকি মাথাপিছু জিডিপি-র নিরিখে টেক্কা দিচ্ছে পড়শি মুলুক। বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে ঠাঁই হয়েছে শেষের সারিতে। চড়া বেকারত্বের হারও। তবু আজ নরেন্দ্র মোদীর দাবি, তাঁর জমানার নতুন ভারত অনন্ত সম্ভাবনার দেশ। গত পাঁচ-ছ’বছরে সরকার সমস্ত ক্ষেত্রে যে-ভাবে সাহসী সংস্কারের পথে হেঁটেছে, তা আগে কখনও হয়নি বলেই তাঁর অভিমত।
কিন্তু সেই দাবিকে কার্যত নস্যাৎ করে অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসুর টুইট, “বছর কয়েক আগেও কেউ ভাবতে পারেননি যে, দেশের অর্থনীতি এমন অবস্থায় এসে দাঁড়াবে। এর জন্য কোভিড অবশ্যই অংশত দায়ী। কিন্তু অংশতই। সুতরাং শিক্ষা হল: (অপ্রিয়) পরিসংখ্যান দেখব না বলে চোখ বন্ধ করে থেকে লাভ নেই। ভুল হতেই পারে। কিন্তু তা মেনে নিয়ে সংশোধনের পথে হাঁটা জরুরি। (তার জন্য) দেশে যে মেধা ও দক্ষতা রয়েছে, তার সদ্ব্যবহার প্রয়োজন।”
টুইটে ওই বক্তব্যের সঙ্গে একটি সারণি জুড়ে দিয়েছেন কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তথা কেন্দ্রের প্রাক্তন মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা কৌশিক। সেখানে দেখা যাচ্ছে, কোভিডে প্রতি ১০ লক্ষ জনে মৃত্যু আর ২০২০ সালে আর্থিক বৃদ্ধির হার- দুই মাপকাঠিতেই ভারতের অবস্থা তথৈবচ। প্রথমটি ৮৩। দ্বিতীয়টি (-)১০.৩%। অথচ সেখানে বাংলাদেশে তা ৩৪ এবং ৩.৮%। চিনে ৩ এবং ১.৯%। বৃদ্ধির মুখ না-দেখলেও, সঙ্কোচনের হার কম ভিয়েতনাম, নেপাল, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, তাইল্যান্ড, আফগানিস্তানের। একই সঙ্গে কম কোভিডে মৃত্যুর হার। এমনকি, পড়শি পাকিস্তানের ক্ষেত্রেও এই দুই হার যথাক্রমে ৩০ ও (-)০.৪%।
আরও পড়ুন: কোভিড-পর্বের পর পুরনো ভুলগুলো শুধরে নেওয়ার সুযোগ
প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে যে দীর্ঘ লকডাউনকে বিজেপি মোদীর ‘মাস্টারস্ট্রোক’ বলে দাবি করে, তাতে লাভ কী হল? তার খেসারত গুনে কোমর ভেঙেছে অর্থনীতির। আবার সেই ‘ত্যাগ স্বীকার করেও’ দেশে মৃত্যুর হার পড়শিদের তুলনায় বেশি! ওই একই পরিসংখ্যান তুলে ধরে কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধীর কটাক্ষ, “কী ভাবে অর্থনীতিকে ধ্বংস করার পাশাপাশি সব থেকে বেশি সংখ্যক মানুষকে সংক্রমিত হতে দেওয়া যায়, এ তারই নমুনা।”
অথচ এ দিন কর্নাটকের মাইসুরু বিশ্ববিদ্যালয়ের শততম দীক্ষান্ত সমারোহে ভিডিয়ো-বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, নতুন প্রজন্মের জন্য অফুরান সুযোগের সম্ভার থরে থরে সাজানো হচ্ছে তাঁর আমলে। এই প্রসঙ্গে তিনি গত ৫-৬ বছরে এক গুচ্ছ নতুন আইআইটি, আইআইএম, এমস তৈরির কথা যেমন বলেছেন, তেমনই তুলেছেন স্কুলে ভর্তির হারে মেয়েদের ছেলেদের টেক্কা দেওয়ার প্রসঙ্গ। তাঁর কথায়, “গত ৬-৭ মাস ধরে সংস্কারের গতি এবং পরিসর দুই-ই বাড়ছে।”
আরও পড়ুন: ভাইরাস আরও দু’বছর! নয়া ভ্যাকসিন পরীক্ষার উদ্যোগ
আর করোনা মোকাবিলা প্রসঙ্গে মোদীর দাবি, ভারতের জনসংখ্যা মার্কিন মুলুকের চার গুণ। এমনকি অনেক রাজ্যেও তা বহু দেশের তুলনায় বেশি। তা সত্ত্বেও নমনীয় লকডাউন, মাস্ক ব্যবহার ও রোগ পরীক্ষার মতো বিষয়ে জোর দেওয়ার কারণেই এ দেশে মৃত্যুর হার কম। ৮৮ শতাংশে পৌঁছেছে রোগমুক্তির হার। প্রযুক্তির সহায়তায় প্রতিষেধক দ্রুত পৌঁছে দিতেও কেন্দ্রের পরিকল্পনা তৈরি বলে জানিয়েছেন তিনি।
বিরোধীরা করোনা-যুদ্ধের এই যুক্তি মানতে নারাজ। আর সংস্কার সম্পর্কে সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমে লেখা এক প্রতিবেদনে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী তথা কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরমের অভিযোগ, যদি সত্যিই এত সংস্কার হয়ে থাকে, তবে বৃদ্ধির হারে তার প্রতিফলন কোথায়? মনমোহন সিংহের মতো সাহসী আর্থিক সংস্কারক হিসেবে ইতিহাসে ঠাঁই করে নিতে মোদীকে আগে তাঁর দৌলতে হওয়া টানা বৃদ্ধির হারের প্রমাণ পেশ করতে হবে বলে তাঁর মত।