ফাইল চিত্র।
কেউ কমার্শিয়াল কর্মী তো কেউ কাজ করেন পার্সোনেল বা কর্মী বিষয়ক বিভাগে। রেল মনে করছে, এই সব বিভাগে অফিসারের সংখ্যা তুলনায় বেশি। তাঁদের কয়েক জনকে বসিয়ে দিলেও কাজ চালাতে অসুবিধা হবে না। তাই অতিমারির মধ্যেই দেশে ১২ হাজারেরও বেশি পদ কমানোর নির্দেশ দিয়েছে রেল বোর্ড। ১৬টি জ়োনের কোথায় কত পদ কমাতে হবে, তার লক্ষ্যমাত্রাও বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
পূর্ব রেলে ১৩০০ এবং দক্ষিণ-পূর্ব রেলে ৯০০ পদ হ্রাসের নির্দেশ আছে। কর্মী সংগঠনগুলির মধ্যে এর তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। রেলের দাবি, সরাসরি পদ প্রত্যাহার করা হচ্ছে না। কোথায় কত পদ প্রয়োজন, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যে-সব পদের আর প্রয়োজন নেই, তা প্রত্যাহার করে নিয়ে নতুন যে-সব ক্ষেত্রে কর্মী দরকার, সেখানে পদ সৃষ্টি করা হবে। সম্প্রতি ১৬টি জ়োনের কাছেই ওই নির্দেশ পৌঁছেছে। সব চেয়ে বেশি পদ ফিরিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে উত্তর রেলকে। সেখানে ২৩৫০টি পদ রদের কথা। তার পরেই রয়েছে পূর্ব এবং দক্ষিণ রেল। ওই দুই জ়োনেই ১৩০০ পদ কমানোর লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
পদ সঙ্কোচনের পরে টাকার অঙ্কে রেলের কত সাশ্রয় হচ্ছে, তা নির্ণয় করার নির্দেশও দিয়েছে বোর্ড। সেই অঙ্ক খতিয়ে দেখে নতুন করে কোথায় কত পদ সৃষ্টি করা হবে, তা জানানো হবে বলে রেল সূত্রের খবর। রেলকর্তাদের একাংশ অবশ্য এই নির্দেশকে ‘স্বাভাবিক প্রক্রিয়া’ বলছেন। তাঁদের বক্তব্য, সময়ের সঙ্গে পদ পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার অঙ্গ হিসেবেই এই কাজ করা হচ্ছে। এতে সরাসরি কারও কাজ হারানোর আশঙ্কা নেই।
রেলের কর্মী সংগঠনগুলি এই বক্তব্য মানতে নারাজ। তাদের অভিযোগ, সারা দেশে এক লক্ষেরও বেশি রেলকর্মী করোনায় আক্রান্ত। অন্তত দু’হাজার কর্মী মারা গিয়েছেন। কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রেলকর্মীদের নানা রকম কাজ করতে হচ্ছে। মাত্র ৩০ শতাংশ কর্মীকে টিকা দেওয়া গিয়েছে। এই অবস্থায় রেল-কর্তৃপক্ষ পদ সঙ্কোচনের নির্দেশ দিয়ে কর্মীদের মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে চাইছেন।
ইস্টার্ন রেলওয়ে মেনস ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অমিত ঘোষ বলেন, "গত বছর রেল সেফটি ক্যাটেগরিতে পদ কমানোর নির্দেশ এসেছিল। যে-ভাবে লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে পদ কমাতে বলা হয়েছে, তাতে অন্য উদ্দেশ্যের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। কর্মী সঙ্কোচন করে দায় ঝেড়ে ফেলাই কর্তৃপক্ষের আসল উদ্দেশ্য।"
রেলকর্তারা এই অভিযোগ মানতে চাইছেন না। তাঁদের বক্তব্য, স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র ব্যবহার শুরু হওয়ায় বহু বিভাগেই কর্মী উদ্বৃত্ত। সেই সব কর্মীকে নতুন ধরনের কাজে কোথায় ব্যবহার করা প্রয়োজন, তা খতিয়ে দেখতেই এই উদ্যোগ। কর্তৃপক্ষের এই বক্তব্য মানতে রাজি নয় শ্রমিক সংগঠনগুলো। তাদের অভিযোগ, নানা ছুতোয় কর্মী কমানোই রেলের উদ্দেশ্য। তারা এই নিয়ে আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি চালাচ্ছে।