ধোঁয়া কমাতে দেওয়া হচ্ছে জল। (ডান দিকে) বাজির উপরে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই দীপাবলি উদ্যাপন। মঙ্গলবার নয়াদিল্লিতে। পিটিআই
অন্যান্য বছরের তুলনায় দূষণ হল কম। কিন্তু সূচক অনুযায়ী দীপাবলির পরের দিন সকালেও ‘খারাপ’-ই রইল দিল্লির বাতাস।
রাজধানীতে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের বসানো ৩৩টি মনিটরের তথ্য বলছে, এই বছরে দিল্লির বাতাসে ভাসমান সূক্ষ্ম ধূলিকণার (পিএম ২.৫) মাত্রা ২০২১ সালের থেকে কম হলেও তা দৈনিক নিরাপদ মাত্রার (প্রতি ঘনমিটারে ৬০ মাইক্রোগ্রাম) থেকে বেশিই রয়েছে। বহু বছর ধরেই দেখা যাচ্ছে, শীতের আগে দীপাবলির বাজি আর লাগোয়া রাজ্যগুলিতে ফসলের গোড়া পোড়ানোর ধোঁয়ার দূষণে প্রাণান্তকর অবস্থা হচ্ছে দিল্লির। আগাম সতর্কতা হিসেবে এ বার গোড়াতেই বাজি কেনাবেচা ও পোড়ানোর উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল অরবিন্দ কেজরীওয়ালের সরকার। যদিও বাস্তব বলছে, সেই নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও দিল্লির বিভিন্ন প্রান্তে এ বারও বাজি পুড়েছে। ফলে বায়ুদূষণের সূচক (একিউআই)-ও ঊর্ধ্বগামী হয়েছে।
একিউআই ২৫১ থেকে ৩৫০-র মধ্যে থাকলে বাতাসের মান ‘খারাপ’ বলা হয়। সেই হিসেবে গত কাল সকালেও দিল্লির বাতাস খারাপই ছিল। একিউআই ছিল ৩১২। তবে তা গত চার বছরের দীপাবলির বাতাসের নিরিখে সর্বনিম্ন এবং সাত বছরে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন। গত বছরে দিল্লিতে বায়ুদূষণের সূচক ৩৮২-তে, ২০২০ সালে ৪১৪-তে পৌঁছে গিয়েছিল। ফলে এই তুলনামূলক পরিসংখ্যান প্রথমে কিছুটা স্বস্তি দিয়েছিল। কিন্তু রাতে বাজি পোড়ানো শুরু হতেই ফের সূচক চড়তে থাকে। আজ ভোর ৬টায় দিল্লির একিউআই পৌঁছে যায় ৩২৩-এ। পিএম ২.৫ সূক্ষ্ম ধূলিকণা নিরাপদ মাত্রার চেয়ে পাঁচ থেকে ছ’গুণ বেড়ে যায়। লাগোয়া গুরুগ্রাম, নয়ডা এবং ফরিদাবাদেও বাতাসের মান খারাপ হতে থাকে। দিল্লির পুসা এলাকার বাতাসে পিএম ২.৫-এর পরিমাণ বিপজ্জনক (প্রতি ঘনমিটারে ৪৪৮.৮ মাইক্রোগ্রাম) মাত্রায় পৌঁছে যায়।
তবে আগামিকাল এবং পরশু দূষণের মাত্রা কমবে বলে বিশেষজ্ঞেরা আশাবাদী। সিস্টেম অব এয়ার কোয়ালিটি অ্যান্ড ওয়েদার ফোরকাস্টিং অ্যান্ড রিসার্চ (সফর)-এর প্রজেক্ট ডিরেক্টর গুফরান বেগ বলেন, ‘‘আজ সকাল ১০টা নাগাদ একিউআই ৩৩০ থেকে ৩৬০-এর মধ্যে ঘোরাফেরা করছিল। ২০১৫ সাল থেকে এটাই সম্ভবত সবচেয়ে কম দূষণের দীপাবলি-সপ্তাহ।’’ তাঁর মতে, এ বারের দীপাবলিতে দূষণ তুলনামূলক কম হওয়ার অন্যতম কারণ হল ফসলের গোড়া পোড়ানোর ধোঁয়া বয়ে আনা বাতাসের দিক পরিবর্তন। বছরের এই সময়ে ওই বাতাস উত্তর-পশ্চিমমুখী থাকে। কিন্তু গত কাল থেকে তা দক্ষিণ-পশ্চিমমুখী বইছে। অন্যান্য বছর দীপাবলি আসতে আসতে শীত পড়ে যায়। কিন্তু এ বছর আবহাওয়া এখনও কিছুটা গরম। বাতাস বইছে ঘণ্টায় প্রায় ৯ কিলোমিটার গতিবেগে। ফলে দূষণ এখনও সে ভাবে ঘনীভূত হতে পারেনি।
স্কাইমেট ওয়েদারের আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তন বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট মহেশ পালাওয়ত বলছেন, ‘‘বায়ুদূষণে বাজির একটা ভূমিকা থাকে ঠিকই, তবে এ বছর আবহাওয়া অনুকূল। তাই অন্যান্য বারের মতো এ বছর দীপাবলির পরের দিনে বাতাস অতটা খারাপও হয়নি। আগামী কয়েক দিনও বাতাস বইবে। তবে বায়ুদূষণের সূচকের মাত্রা অনুযায়ী বাতাস ‘খারাপ’ বা ‘খুব খারাপ’ই থাকবে। প্রকৃতির খেয়াল যা-ই হোক, রাজধানীর সুস্বাস্থ্যের জন্য বাজি পোড়ানো কমানো যে প্রয়োজন, সে বিষয়ে অবশ্য একমত বিশেষজ্ঞেরা।