এক টেবিলে: নবীন পট্টনায়কের আমন্ত্রণে মধ্যাহ্নভোজে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অমিত শাহ, নীতীশ কুমার ও ধর্মেন্দ্র প্রধান। ছবি: পিটিআই
রাজধানীর বুকে গোষ্ঠী সংঘর্ষ শুরুর ছ’দিন পরে প্রথম মুখ খুলে প্রকারান্তরে বিরোধীদেরই দায়ী করলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। আজ ভুবনেশ্বরে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ)-এর সমর্থনে এক জনসভায় তিনি বলেন, ‘‘সিএএ-র ফলে মুসলিমরা ভারতের নাগরিকত্ব হারাবেন বলে বিরোধী দলগুলি মিথ্যে প্রচার করছে। তারা মানুষকে প্ররোচনা দিচ্ছে এবং গোষ্ঠী হিংসায় ইন্ধন জোগাচ্ছে।’’
গত রবিবার রাত থেকে সিএএ-পন্থী এবং সিএএ-বিরোধীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয় উত্তর-পূর্ব দিল্লির বিস্তীর্ণ এলাকায়। রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ভার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনস্থ দিল্লি পুলিশের। সোমবার দিল্লি যখন জ্বলছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ তখন ব্যস্ত ছিলেন আমদাবাদে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সফর নিয়ে। মঙ্গলবার থেকে অবশ্য আর তাঁর দেখা মেলেনি। দিল্লিতে ট্রাম্পের কোনও অনুষ্ঠানেই যাননি শাহ। এড়িয়ে গিয়েছেন বীর সাভাকরের নামাঙ্কিত অনুষ্ঠানও। দিল্লির হিংসা নিয়ে মুখও খোলেননি তিনি।
আজ পূর্বাঞ্চলীয় আন্তঃরাজ্য পরিষদের বৈঠকে যোগ দিতে ভুবনেশ্বরে এসেছিলেন শাহ। পরে বক্তৃতা দেন দলীয় জনসভায়। সিএএ প্রণয়নকে ‘ঐতিহাসিক পদক্ষেপ’ বলে উল্লেখ করে শাহের দাবি, ‘‘সিএএ-র জন্য ভারতের এক জন মুসলিমও নাগরিকত্ব হারাবেন না। পাকিস্তান, আফগানিস্তান, বাংলাদেশের নির্যাতিত সংখ্যালঘুদের এ দেশে নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য এই আইন। কারও নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার জন্য এই আইন নয়।’’ সিএএ নিয়ে বিরোধীরা দেশ জুড়ে ‘অসত্য কথা’ প্রচার করছেন বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অভিযোগ, ‘‘কংগ্রেস, কমিউনিস্ট, এসপি, বিএসপি এবং মমতা দিদি এই আইন নিয়ে দেশে ভুল তথ্য প্রচার করছেন।’’
দিল্লির হিংসার জন্য শাহ যে ভাবে বিরোধীদের কাঠগড়ায় তুলেছেন, তাকে দায় ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা হিসেবেই দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকে। তাঁদের মতে, রাজধানীতে হিংসার ঘটনায় দিল্লি পুলিশের ব্যর্থতা প্রকট হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ থেকে শাহের ইস্তফা দাবি করেছে কংগ্রেস-সহ বিরোধীরা। এই আবহে আক্রমণকেই আত্মরক্ষার অস্ত্র করে হিংসা নিয়ে বিরোধীদের উপরে দোষ চাপালেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
শাহের মতোই দিল্লিতে আজ উস্কানি-তত্ত্ব নিয়ে সরব হয়েছেন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ। তাঁর অভিযোগ, সিএএ পাশের তিন দিনের মাথায় রামলীলা ময়দানে সনিয়া গাঁধী বলেছিলেন, ‘এসপার-ওসপার’ লড়াই করার কথা। একই ভাবে উস্কানি দিয়েছিলেন রাহুল গাঁধী ও প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরাও। রবিশঙ্করের কথায়, ‘‘প্রিয়ঙ্কা বলেছিলেন, এখন চুপ থাকলে বাবাসাহেবের সংবিধান নষ্ট হবে। শাহিন বাগে গিয়ে কংগ্রেস নেতারা উস্কানি দিয়েছেন। কংগ্রেসের হিংসার রেকর্ড, ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি সকলের জানা।’’ সনিয়ার ‘রাজধর্ম’ পালনের পরামর্শ সম্পর্কে আইনমন্ত্রী পাল্টা, ‘‘উনি যেন ‘রাজধর্ম’ পালনের জ্ঞান না দেন! কয়েক দশক ধরে প্রতিবেশী দেশের নির্যাতিতদের নাগরিকত্ব দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করে এখন উস্কানি দিচ্ছেন।’’