নর্দমা থেকে অঙ্কিত শর্মার দেহ উদ্ধার করা হচ্ছে। ছবি: পিটিআই।
রাজধানীর বুকে চার দিন ব্যাপী তাণ্ডবে নাম জড়িয়ে গেল আম আদমি পার্টির (আপ) নেতা তাহির হুসেনের। ইট-পাথর এবং পেট্রোল বোমা নিয়ে হিংসায় শামিল হওয়ার পাশাপাশি আইবি অফিসার অঙ্কিত শর্মার মৃত্যুতে তাঁর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। তাহির হুসেন এবং তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গরা মিলেই তাঁদের ছেলেকে খুন করেছে বলে অভিযোগ তুলছে অঙ্কিত শর্মার পরিবার।
বুধবার সকালে চাঁদ বাগের একটি নর্দমা থেকে ২৬ বছরের আইবি অফিসার অঙ্কিত শর্মার মৃতদেহ উদ্ধার হয়। পুলিশি তদন্তে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কাজ সেরে বাড়ি ফেরার সময় এক দল লোক তাঁর উপর হামলা করে। বেধড়ক মারধর করা হয় তাঁকে। তাতেই মৃত্যু হয় অঙ্কিতের। যদিও বাড়ির সামনে থেকেই অঙ্কিতকে টেনে নিয়ে যাওয়া হয় বলে অভিযোগ তাঁর পরিবারের।
সেই নিয়ে কাটাছেঁড়ার মধ্যেই সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় একাধিক ভিডিয়ো সামনে এসেছে। তাতে মারতে মারতে অঙ্কিতকে তাহির হুসেনের বাড়ির মধ্যে নিয়ে যাওয়া হয় বলে অভিযোগ তুলেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। তাঁরা জানিয়েছেন, ইটবৃষ্টির মধ্যেই রাস্তা দিয়ে ফিরছিলেন অঙ্কিত। সেইসময় তাঁকে মারতে মারতে কিছু লোকজন তাঁকে তাহির হুসেনের বাড়ির মধ্যে টেনে নিয়ে যান। মারধরের পর তাহির হুসেনের বাড়ির পিছনে যে নর্দমা রয়েছে, সেখানে অঙ্কিতের দেহ ফেলে দেওয়া হয় বলেও দাবি করেছেন কেউ কেউ। অঙ্কিতের দেহ নর্দমা থেকেই পরে উদ্ধার করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান।
আরও পড়ুন: খাজুরি খাস, মৌজপুর খাঁ খাঁ করছে, লোটাকম্বল নিয়ে পালাচ্ছেন মানুষ
এই ঘটনায় ইতিমধ্যে একাধিক ভিডিয়ো সামনে এসেছে, যার একটিতে নর্দমার শেষ প্রান্তে তাহির হুসেনের বাড়ির দেওয়ালের ওপার থেকে নর্দমার পাড়ে সাদা কাপড়ে মোড়া কিছু একটা ধরাধরি করে আনতে দেখা গিয়েছে কয়েক জনকে। এমন ভাবে ধরাধরি করে আনা হচ্ছে ওই সাদা কাপড়ে মোড়া বস্তুটিকে, যাতে মনে হচ্ছে ভারী কিছু এনে ফেলা হচ্ছে সেখানে। আনন্দবাজার ডিজিটাল অবশ্য ওই ভিডিয়োর সত্যাতা যাচাই করেনি।
এই ভিডিয়ো নিয়েই শোরগোল।
রাস্তায় সংঘর্ষ চলাকালীন তাহির হুসেনের বাড়ির ছাদ থেকে বোমা ও ইটবৃষ্টি হয় বলেও অভিযোগ সামনে এসেছে। এমনকি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিয়োয় তাঁর বাড়ির ছাদে পেট্রল বোমা, গুলতি এবং ইটের টুকরো জমা থাকতেও দেখা গিয়েছে। কয়েক জনকে নিয়ে ছাদের উপর থেকে লাঠি হাতে তাহির ছোটাছুটি করছেন এমন ভিডিয়োও সামনে এসেছে। যদিও সেইসময় তাঁর বাড়ির ভিতর থেকে কালো ধোঁয়া বেরোতে দেখা গিয়েছে। তাতে তাঁর বাড়িতেও হামলা চালানো হয় বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে।
তবে দিল্লির বিক্ষোভ এবং অঙ্কিত শর্মার মৃত্যু, কোনও কিছুতেই তাঁর হাত নেই বলে জানিয়েছেন তাহির হুসেন। সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেন, ‘‘হিংসা রোখার চেষ্টা করছিলাম আমি। অনেকে কার্নিস বেয়ে আমার বাড়ির উপরে উঠে আসছিলেন। তাদের আটকানোর চেষ্টা করি। ২৪ ফেব্রুয়ারি আমার বাড়িতে তল্লাশি চালায় পুলিশ। তার পর বাড়ি থেকে অন্যত্র সরিয়ে আনা হয় আমাদের। ২৫ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৪টে পর্যন্ত ওই বাড়িতে পুলিশই ছিল। বাড়িতে হামলা হতে পারে জেনে আমিই পুলিশকে ওই এলাকায় থাকতে বলেছিলাম। বলেছিলাম, বাড়ি খালি থাকলে অপকর্ম হতে পারে সেখানে। কী হয়েছে পুলিশই বলতে পারবে। আমি তাদের সবরকম ভাবে সাহায্য করতে রাজি আছি।’’
আরও পড়ুন: লাগামছাড়া হিংসার নিশানায় মুসলিমরাই, দাবি মার্কিন কমিশনের, অভিযোগ খারিজ দিল্লির
অঙ্কিত শর্মার মৃত্যুর সঙ্গেও তিনি কোনও ভাবে জড়িত নন বলে জানান তাহির হুসেন। তিনি বলেন, ‘‘আইবি অফিসার অঙ্কিত শর্মার মৃত্যুর খবরে খুব কষ্ট পেয়েছি আমি। ন্যয্য বিচার প্রাপ্য ওঁর। আমি এই ঘটনার সঙ্গে কোনও ভাবেই জড়িত নই। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত হওয়া উচিত।’’
বাইরে থেকে লোক এসে দিল্লিতে ঝামেলা পাকিয়েছে বলে গত কয়েক দিনে একাধিক বার দাবি করেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল। তাহির হুসেনের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে আপ জানিয়েছে, হিংসার ঘটনায় যিনিই জড়িত থাকুন, তিনি যে দলেরই হোন, কাউকে রেহাই দেওয়া চলবে না।