Israel Palestine Conflict

প্যালেস্টাইন প্রশ্নে ভারসাম্য ফেরাল দিল্লি

হামাসের রকেট হামলার পরই তীব্র ভাষায় সন্ত্রাসের নিন্দা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তখনই ঘরোয়া বিরোধী মহলে এই বিতর্ক শুরু হয়েছিল যে, সরাসরি প্যালেস্টাইন-বিরোধিতায় নেমেছে মোদী সরকার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা ও নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০২৩ ০৭:১১
Share:

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।

ইজ়রায়েল-প্যালেস্টাইন প্রশ্নে আজ নিজের সাম্প্রতিক অবস্থান ‘বদল’ করল নয়াদিল্লি। আরব বিশ্বের আবেগের গতিমুখ বুঝেই এই পরিবর্তন বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল।

Advertisement

হামাসের রকেট হামলার পরই তীব্র ভাষায় সন্ত্রাসের নিন্দা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তখনই ঘরোয়া বিরোধী মহলে এই বিতর্ক শুরু হয়েছিল যে, সরাসরি প্যালেস্টাইন-বিরোধিতায় নেমেছে মোদী সরকার যা ভারতের দীর্ঘদিনের বিদেশনীতির পরিপন্থী। ইজ়রায়েলের হাইফা বন্দরের মালিকানা আদানিদের হাতে থাকাটা দিল্লির অবস্থানকে প্রভাবিত করছে কি না, সে প্রশ্নও ওঠে। এর মধ্যে নয়াদিল্লি আরব বিশ্বের রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে কথাবার্তা চালিয়েছে। সম্প্রতি আরব আমিরশাহির বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে ইজ়রায়েল পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করেছেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করও। তারই ফলস্বরূপ আজ বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী বলেন, “এই বিষয়ে দীর্ঘ দিন ধরে আমাদের নীতি ধারাবাহিক ভাবে একই রকম রয়েছে। সার্বভৌম, স্বাধীন এবং টেকসই প্যালেস্টাইন গড়ার জন্য সরাসরি কথাবার্তা শুরু করাকেই ভারত বরাবর উৎসাহ দিয়ে এসেছে। আমার মনে হয়, এই ব্যাপারে আমাদের অবস্থান একই রয়েছে।”

প্রসঙ্গত ৭ অক্টোবর রকেট হামলার পর বিদেশ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে এটিই প্রথম বিবৃতি। ইতিমধ্যে দু’বার মুখ খুলেছেন প্রধানমন্ত্রী। হামাসের হামলাকে ‘সন্ত্রাসবাদী হামলা’ বলে উল্লেখ করে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় তিনি বলেছিলেন, এই কঠিন সময়ে ভারত সর্বতো ভাবে ইজ়রায়েলের পাশে রয়েছে। ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর ফোনে কথা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন এক্স হ্যান্ডল-এ। আজকের অবস্থান ‘বদল’কে, বিদেশ মন্ত্রক অবশ্য বদল বলে স্বীকার করতে চায়নি। মন্ত্রকের শীর্ষ সূত্রের মতে, প্রধানমন্ত্রী সন্ত্রাসবাদী হামলার নিন্দা করেছিলেন। তিনি সার্বিক ভাবে প্যালেস্টাইন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি। তাঁর সন্ত্রাসবিরোধী অবস্থান একই আছে।

Advertisement

কূটনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, সৌদি আরব, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরশাহির মতো দেশগুলি দ্রুত শান্তি ফেরানোর কথা বললেও তাদের বিবৃতিতে হামাস সম্পর্কে নিন্দা নেই। মোদী সরকারের আমলে পশ্চিম এশিয়ার এই দেশগুলির সঙ্গে সম্পর্কে উল্লেখজনক উন্নতি হয়েছে। আমদানি ক্ষেত্রে নির্ভরতা বেড়েছে। পাকিস্তানকে মুসলিম বিশ্বে কোণঠাসা করতে সৌদিকে সময়বিশেষে পাশে পেয়েছে সাউথ ব্লক। ফলে প্রাথমিক ভাবে হামাসকে ‘সন্ত্রাসবাদী’ বলে মোদী ঘরোয়া রাজনীতিতে হিন্দুত্বের ধ্বজা ওড়ালেও আরব মনের সঙ্গে সঙ্গতি রাখতে আজ ‘স্বাধীন সার্বভৌম’ প্যালেস্টাইনের কথা বলেছেন বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র। অর্থাৎ ইজ়রায়েল-পন্থী হিসাবে চিহ্নিত একপেশে অবস্থানের পর একটি ভারসাম্যের কূটনীতিতে ফিরতে দেখা গিয়েছে ভারতকে।

বিষয়টি নিয়ে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও জল গড়াচ্ছে। কংগ্রেস প্রথমে ইজ়রায়েল আক্রমণের তীব্র নিন্দা করেও বলেছিল যে, প্যালেস্টাইনবাসীর ন্যায্য অধিকারের দাবিগুলি আলোচনার মধ্যে দিয়েই সমাধান করা উচিত। এর পরে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির প্রস্তাবে বলা হয়, কংগ্রেস পশ্চিম এশিয়ায় বহু মানুষের মৃত্যুতে দুঃখিত। প্যালেস্টাইনের মানুষের জমি, স্বশাসন ও সম্মানের সঙ্গে জীবনযাত্রার পক্ষে পুরনো অবস্থান মনে করিয়ে দিয়ে কংগ্রেস শান্তি ও আলোচনার দাবি জানায়। যদিও ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে অনেকের মত ছিল, ইজ়রায়েলে সন্ত্রাসবাদের কড়া সমালোচনা করা উচিত। না হলে বিজেপি কংগ্রেসের বিরুদ্ধে তোষণের রাজনীতি ও সন্ত্রাস নিয়ে নরম মনোভাবের অভিযোগ তুলতে পারে। আজ মোদী সরকারের অবস্থান ‘বদলের’ পর কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছে, ‘কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটিতে যা বলেছিল, প্রায় একই কথা কেন্দ্র তার বিবৃতিতে বলতে বাধ্য হল। বিজেপির তো এ বার বার্নল-এর প্রয়োজন হবে!’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement