প্রবীর পুরকায়স্থ। — ফাইল চিত্র।
সংবাদমাধ্যম ‘নিউজ়ক্লিক’ এবং তার প্রতিষ্ঠাতা প্রবীর পুরকায়স্থের বিরুদ্ধে ইউএপিএ ধারায় তাদের প্রথম চার্জশিট পেশ করল দিল্লি পুলিশের স্পেশ্যাল সেল। ‘বিভিন্ন চিনা সংস্থার থেকে টাকা নিয়ে দেশের সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতা নষ্ট করার অভিযোগ আনা হয়েছে ৮ হাজার পাতার চার্জশিটে। এ দিন অতিরিক্ত দায়রা জজ হরদীপ কউরের আদালতে চার্জশিট পেশ করে দিল্লি পুলিশের স্পেশ্যাল সেল।
গত বছর ৩ অক্টোবর নিউজ়ক্লিকের সম্পাদক প্রবীর পুরকায়স্থ এবং মানবসম্পদ উন্নয়ন বিভাগের কর্তা অমিত চক্রবর্তীকে গ্রেফতার করে দিল্লি পুলিশের স্পেশ্যাল সেল। পাশাপাশি সংবাদমাধ্যমটির সঙ্গে যুক্ত একাধিক সাংবাদিক, চিত্র সাংবাদিক, ফ্রিল্যান্সার এমনকি কার্টুনিস্টের বাড়িতেও হানা দেয় তারা। বাজেয়াপ্ত করা হয় তাঁদের মোবাইল ও ল্যাপটপও। সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত তদন্তের সব নথি ও বাজেয়াপ্ত করা ইলেকট্রনিক ডিভাইস থেকে পাওয়া তথ্য চার্জশিটে রয়েছে।
আদালতে দিল্লি পুলিশের তরফে স্পেশ্যাল পাবলিক প্রসিকিউটর অখণ্ড প্রতাপ সিংহ এবং সুরজ রথি জানান, চার্জশিটে প্রবীর পুরকায়স্থ এবং পিপিকে নিউজ়ক্লিক স্টুডিয়ো প্রাইভেট লিমিটেডকে আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। অতিরিক্ত চার্জশিট দাখিল করে সেখানে আরও একাধিক ধারা যুক্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন সরকারপক্ষের আইনজীবী। আগামী ১৬ এপ্রিল মামলার পরবর্তী দিন ধার্য করা হয়েছে।
নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন খবর এবং তদন্তমূলক প্রতিবেদন পেশ করার পর থেকেই নিউজ়ক্লিক সংস্থায় একাধিক বার অভিযান চালায় কেন্দ্রের অধীনে থাকা তদন্তকারী সংস্থাগুলি। তারই মধ্যে আমেরিকার একটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে গ্রেফতার করা হয় নিউজ়ক্লিকের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক প্রবীর পুরকায়স্থকে। তার বিরুদ্ধে দেশ জুড়ে সাংবাদিকদের একাধিক সংগঠন প্রতিবাদ জানান। তবে কেন্দ্রীয় সরকার, দিল্লি পুলিশ এবং কেন্দ্রের অধীনস্থ সংস্থাগুলির দাবি, চিনের থেকে টাকা নিয়ে মোদী সরকারের মানহানিকর খবর পরিবেশন করেছেন প্রবীর ও তাঁর সংস্থা। পাশাপাশি কৃষক আন্দোলন, কোভিড সংক্রমণ নিয়ে সংবাদমাধ্যমটির করা বিভিন্ন প্রতিবেদনে মোদী সরকারের মানহানি করা হয়েছে বলে দাবি করেন তদন্তকারীরা। পাশাপাশি তদন্তকারীদের অভিযোগ, চিনের হয়ে প্রচার চালানো এই সংবাদমাধ্যমটিকে আমেরিকার ধনকুবের নেভিল রয় সিংঘম অর্থ সাহায্য করতেন।
এরই মধ্যে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সংক্রান্ত প্যারিসভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘রিপোটার্স উইদাউট বর্ডারস’ (আরএসএফ) এবং আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত লন্ডনভিত্তিক সংস্থা ‘গুয়ের্নিকা ৩৭’ ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে দিল্লি পুলিশের চার উচ্চপদস্থ আধিকারিকের নামে অভিযোগ
করেছে। কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে থাকা দিল্লি পুলিশের সন্ত্রাসদমন শাখার ওই চার আধিকারিকের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করার আবেদন জানিয়েছে দু’টি সংস্থাই। দিল্লি পুলিশের ওই চার শীর্ষ আধিকারিকের নাম না করা হলেও এক বিবৃতিতে ‘রিপোটার্স উইদাউট বর্ডারস’ জানিয়েছে, ওই চার আধিকারিক তাঁদের ইচ্ছে মতো সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছে। ওই চার আধিকারিকের নির্দেশেই নিউজ়ক্লিক-সহ দেশের অন্তত ৪৬ জন সাংবাদিকের বাড়িতে হানা দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কূটনৈতিক শাখা, বিদেশনীতি সংক্রান্ত শাখার কাছে বিশদ তথ্য পেশ করেছেন আরএসএফ এবং গুয়ের্নিকা ৩৭-এর প্রতিনিধিরা।
নরেন্দ্র মোদী জমানায় ভারতে সংবাদমাধ্যম এবং সাংবাদিকেরা একাধিক বার আক্রমণের মুখে পড়েছেন। মোদী জমানায় সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার নিরিখে ভারতের অবস্থান প্রতিবেশী পাকিস্তান বা বাংলাদেশ তো বটেই, গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত একাধিক দেশেরও নীচে নেমে গিয়েছে বলে সাম্প্রতিক তথ্যে দেখা গিয়েছে। এ নিয়ে পশ্চিমের দেশগুলি একাধিক বার মোদী সরকারের সমালোচনা করেছে। নিউজ়ক্লিকের ঘটনায় গত ছ’মাস ধরে দিল্লি পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলি যে ভাবে সংস্থাটির প্রাক্তন সাংবাদিকদের বাড়িতেও হানা দিয়েছে, তার তীব্র নিন্দা করেছিল একাধিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম।