ধোঁয়াশা: অবস্থার পরিবর্তন নেই রাজধানীতে। রবিবার। ছবি: এএফপি।
সকালের হাল্কা বৃষ্টিতেও হেরফের হল না অবস্থার। আজও রাজধানী ও সংলগ্ন অঞ্চলে দূষণ পরিস্থিতি ‘উদ্বেগজনক’ রইল। ধোঁয়াশার কারণে দৃশ্যমানতা একেবারে কমে যাওয়ায়, আজ দিল্লি বিমানবন্দরে নামার আগে ৩৭টি বিমানের পথ ঘুরিয়ে দেওয়া হল। তার মধ্যে ১২টি এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান।
গত কালের তুলনায় বাতাসের গুণগত মানের সূচক (একিউআই) আরও ঊর্ধ্বগামী ছিল আজ। আজ সকাল ১০টায় একিউআই ছিল ৬২৫, এই মরসুমে যা সর্বোচ্চ। দিল্লির পরিস্থিতিকে আজ ‘অসহনীয়’ বলে ব্যাখ্যা করে মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল বলেছেন, ‘‘বিনা দোষেই ভুগছে দিল্লি’’। তাঁর টুইট, ‘‘উত্তর ভারতে দূষণ অসহনীয় মাত্রায় পৌঁছে গিয়েছে। দূষণ রোধে সরকার সব রকম চেষ্টা চালাচ্ছে। দিল্লিবাসীকে এর থেকে মুক্তি দিতে অবিলম্বে কেন্দ্রকে ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানাচ্ছি। আমরা সব রকম ভাবে সাহায্য করব।’’ প্রতি বছরই শীতে পঞ্জাব, হরিয়ানায় কৃষকরা শস্যের গোড়া পোড়ানোয় দিল্লিতে দূষণের মাত্রা বাড়ে বলে অভিযোগ। এই নিয়ে ওই দুই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কেন্দ্রীয় পরিবেশমন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকরকে বৈঠক করার আবেদন জানিয়েছেন কেজরীবাল। আগামী কয়েক দিন পরিবেশ মন্ত্রক ও কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের কর্তাদের মধ্যে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হওয়ার কথা।
এই অবস্থায় আগামিকাল দিল্লির বাতাসের মান ও প্রতিবেশী রাজ্যে আগাছা পোড়ানোর ফলে হওয়া দূষণ নিয়ে পরিবেশ দূষণ (প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ) কর্তৃপক্ষের তৈরি একটি রিপোর্ট শুনবে সুপ্রিম কোর্ট। দিল্লি সংলগ্ন রাজ্যগুলিকে আগাছা পোড়ানো, কারখানা থেকে বিষাক্ত বর্জ্য নির্গমন ও সাময়িক ভাবে নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। দূষণ আতঙ্কের জেরে দিল্লির অরুণ জেটলি ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ভারত বনাম বাংলাদেশ টি-২০ ম্যাচ নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছিল। যদিও আজ যথাসময়ে শুরু হয় ম্যাচ।
আরও পড়ুন: যজ্ঞ, বীণা ও গাজর, রাজধানীর দূষণের সঙ্গে লড়তে নিদান বিজেপির!
আরও পড়ুন: আমরা ন্যায় চাই, সুপ্রিম কোর্টে ন্যায়ই হবে: অযোধ্যা রায়ের আগে তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য শাহনওয়াজের
দীপাবলির পরে দিল্লির দূষণ এমনই মাত্রাছাড়া আকার নেয় যে শুক্রবার জনস্বাস্থ্য সংক্রান্ত জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে হয় সেখানে। আগামিকাল থেকেই ফের চালু করা হচ্ছে গাড়ির জোড়-বিজোড় নীতি। ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত যা চলবে। নয়ডা, গাজ়িয়াবাদ, গুরুগ্রাম, ফরিদাবাদেও দূষণের মাত্রা ঘোরাফেরা করেছে ‘তীব্র’ থেকে ‘বিপজ্জনক’ সীমায়। ফলে মঙ্গলবারের আগে খুলছে না কোনও স্কুল-কলেজ।
আজ দিল্লি বিমানবন্দর, সাউথ ব্লক, নর্থ ব্লক, লালকেল্লা-সহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলিতে রক্ষীদের জন্য কয়েক হাজার মাস্ক দিয়েছে সিআইএসএফ। শহর জুড়ে একাধিক হাসপাতালে শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি হওয়া রোগীদের আইসিইউতে স্থানান্তরিত করতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। দূষণ রোধে নিয়ম না মানায় গত কাল ৩৮ জনকে গ্রেফতার করা নয়ডা ও গ্রেটার নয়ডায়। জমি বাড়ির দুই কারবারিকে ৫ লক্ষ টাকা করে জরিমানাও করা হয়েছে।
এরই মধ্যে একটি অনলাইন সমীক্ষায় উঠে এসেছে, প্রবল দূষণে দিল্লি ও সংলগ্ন এলাকায় ৪০ শতাংশ বাসিন্দা অন্য শহরে চলে যেতে চাইছেন। পাকাপাকি ভাবে যেতে না চাইলেও ১৬ শতাংশ সাময়িক ভাবে অন্যত্র সরে যেতে চান। মৌসম ভবন জানিয়েছে, আগামী ৭ ও ৮ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় মহার প্রভাবে পঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থান ও দিল্লিতে বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এতে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।