হাই কোর্টে প্রশ্নের মুখে দিল্লির সরকার ও পুরনিগম। —ফাইল চিত্র।
কোচিং সেন্টারে তিন পড়ুয়ার মৃত্যুর ঘটনায় উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের দাবিতে জনস্বার্থ মামলা হয়েছে দিল্লি হাই কোর্টে। বুধবার সেই মামলার শুনানিতে আদালতের তীব্র ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হল দিল্লির আপ সরকার ও আপ পরিচালিত দিল্লি পুরনিগমকে। রাজেন্দ্র নগরের কোচিং সেন্টারে দুর্ঘটনার দায় কার? সেই ব্যাখ্যা দিতে দিল্লি পুরনিগমের ডিরেক্টরকে বৃহস্পতিবারই হাই কোর্টে হাজিরা দিতে নির্দেশ দিয়েছে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মনমোহন ও বিচারপতি তুষার রাও গেদেলার বেঞ্চ।
মামলার শুনানির সময় হাই কোর্টে একের পর এক ধমক খেতে হল পুরনিগমকে। দিল্লির পুর প্রশাসনের তরফে সার্বিক পরিকাঠামোতেও যে বদলের প্রয়োজন, সে কথাও মনে করিয়ে দিয়েছে আদালত। হাই কোর্টের মন্তব্য, শহরের পরিকাঠামো ভেঙে পড়েছে। ছ’তলা ভবন বানানোর অনুমতি দেওয়া হলেও, পুরনিগমের ইঞ্জিনিয়ারেরা জলনিকাশির জন্য অতিরিক্ত পাম্পের দিকে গুরুত্ব দেননি।
একই সঙ্গে দিল্লির সরকার সব কিছু বিনামূল্যে দেওয়ার যে রেওয়াজ চালু করেছে, সেই নিয়েও মন্তব্য করে আদালত। হাই কোর্টের মন্তব্য, এই ব্যবস্থার জন্যই সরকার পরিকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য পর্যাপ্ত টাকা জোগাড় করে উঠতে পারছে না। আদালত বলে, “পুর প্রশাসন দেউলিয়া হয়ে গিয়েছে। যদি আপনাদের বেতন দেওয়ারই টাকা না থাকে, তা হলে পরিকাঠামো উন্নয়ন কী ভাবে করবেন? আপনারা চান সব কিছু বিনা খরচে দিতে। ফলে আপনাদের হাতে টাকা আসছে না, খরচও করতে পারছেন না।”
গত সপ্তাহেই দিল্লির রাজেন্দ্র নগরের এক কোচিং সেন্টারের বেসমেন্টে জল ঢুকে মৃত্যু হয়েছে তিন পড়ুয়ার। প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায়, ওই ভবনের মালিক ও কোচিং সেন্টারের মালিক একাধিক নিয়ম ভেঙেছিলেন। এমনকি, যে বেসমেন্টটিকে গ্রন্থাগার হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছিল, সেটিরও কোনও অনুমোদন ছিল না পুরনিগম থেকে। ছিল না দমকলের ছাড়পত্রও।
কোচিং সেন্টারে দুর্ঘটনার পরও দিল্লি পুরনিগমের পদস্থ অফিসারদের বিরুদ্ধে কেন কোনও কড়া পদক্ষেপ করা হল না, সে বিষয়ে জানতে চায় আদালত। হাই কোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির বেঞ্চের মন্তব্য, “দেখে মনে হচ্ছে, নির্দেশিকা মেনে চলার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করেন না পুরনিগমের আধিকারিকেরা।”
উল্লেখ্য, কোচিং সেন্টারের অঘটনের পর এখনও পর্যন্ত এক জন জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ারকে চাকরি থেকে সরিয়েছে পুরনিগম। অপর এক জন অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়রকে সাসপেন্ড (নিলম্বিত) করা হয়েছে। সেই প্রসঙ্গ টেনেই আদালতের মন্তব্য, “আপনারা শুধু নিচুতলার কর্মীদের বিরুদ্ধে চাকরি থেকে সরাচ্ছেন। কিন্তু যাঁরা পদস্থ আধিকারিক, যাঁদের দায়িত্ব ছিল নিচুতলার কর্মীদের কাজের দেখভাল করা, তাঁদের কী হবে? পুরনিগমের কাউকে কি জেলে পাঠানো হয়েছে?” পদস্থ আধিকারিকদের যে শুধু বাতানুকূল ঘরে বসে না থেকে বাইরের কাজ পরিদর্শনেও যাওয়া উচিত, সে কথাও মনে করিয়ে দেয় হাই কোর্ট।
শুধু তা-ই নয়, পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে আদালত। ঘটনার পর থেকে পুলিশ এখনও পর্যন্ত সাত জনকে গ্রেফতার করেছে। তার মধ্যে এক গাড়িচালকও রয়েছেন। পুলিশের দাবি, কোচিং সেন্টারের পাশে জলমগ্ন রাস্তা দিয়ে ওই ব্যক্তি জোরে গাড়ি চালিয়ে গিয়েছিলেন। ফলে জলের একটি ঢেউ গিয়ে পড়েছিল কোচিং সেন্টারের বেসমেন্টে। ওই গাড়িচালকের গ্রেফতারি নিয়ে আদালতের প্রশ্ন, “কী করছে পুলিশ? এ এক অদ্ভুত তদন্ত চলছে।”