100 days work

১০০ দিনের টাকা নিয়ে ফের তৃণমূল-বিজেপি যুদ্ধ, ‘বঞ্চনা’ বনাম ‘বেনিয়ম’ দাবির ‘সত্য’প্রকাশ সংসদে

গত বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই বাংলা ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে বঞ্চিত বলে অভিযোগ তুলে চলেছে তৃণমূল। অন্য দিকে, বেনিয়ম হয়েছে বলে দাবি বিজেপির। সেই যুদ্ধ এ বার নতুন রূপ নিল।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০২৪ ১৪:৫২
Share:

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

একশো দিনের কাজের প্রকল্প বাবদ রাজ্যের টাকা দিচ্ছে না কেন্দ্রীয় সরকার। তৃণমূলের তরফে এই অভিযোগের বয়স তিন বছরের বেশি হয়ে গেল। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই বারংবার এই অভিযোগ তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ তাঁর দলের নেতারা। অন্য দিকে, কেন্দ্রীয় সরকার তো বটেই, বিজেপি নেতারাও পাল্টা দাবি করেছেন, ‘বেনিয়ম’ করার জন্যই রাজ্যের প্রাপ্য টাকা আটকে রেখেছে কেন্দ্র। একই সঙ্গে, বাংলা যাতে পুরনো হিসাব না দেওয়া পর্যন্ত নতুন করে ওই খাতে টাকা না পায়, সেই মর্মে দাবি তুলেছেন বাংলার বিজেপি নেতারাও।

Advertisement

লোকসভা নির্বাচনের পরে ‘বর্ধিত শক্তি’ নিয়ে তৃণমূল একশো দিনের কাজের টাকা সংক্রান্ত অভিযোগ নিয়ে যে আরও জোরদার আন্দোলনে নামতে চায়, তার ইঙ্গিত মিলেছে বুধবার সকাল থেকেই। একের পর এক নেতা-মন্ত্রী সমাজমাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ তুলে চলতি অর্থবর্ষেও যে বাংলার জন্য ওই খাতে কোনও বরাদ্দ রাখা হয়নি, সেই অভিযোগ করছেন। প্রসঙ্গত, বাংলাকে যে এই অর্থবর্ষে কোনও টাকা দেওয়া হচ্ছে না, তা কবুল করেছে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকই। শুধু তা-ই নয়, এর আগের দু’টি অর্থবর্ষেও বাংলার জন্য বরাদ্দ যে ‘শূন্য’ ছিল, তা-ও লিখিত জবাবে সংসদে জানিয়েছেন মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী কমলেশ পাসোয়ান।

তৃতীয় নরেন্দ্র মোদী সরকার গঠনের পরে প্রথম লোকসভা অধিবেশনেই একশো দিনের কাজের বরাদ্দ নিয়ে প্রশ্ন তোলে তৃণমূল। একত্রে লিখিত প্রশ্ন জমা দেন দলের সাংসদ সৌগত রায়, খলিলুর রহমান, মালা রায় এবং দেব। সেই সঙ্গে ওই বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন কেরলের সাংসদ তথা লোকসভায় কংগ্রেসের মুখ্যসচেতক কদিকুন্নিল সুরেশ। মূল প্রশ্ন ছিল, কেন্দ্রীয় সরকার কি পশ্চিমবঙ্গ এবং কেরলের মতো আরও রাজ্যের এমজিএনআরইজিএ প্রকল্পের টাকা আটকে রেখেছে? গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী বুধবার লিখিত জবাব দিয়েছেন। তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, কেরল নয়, শুধু পশ্চিমবঙ্গের টাকাই আটকে রাখা হয়েছে। বলা হয়েছে, ২০২১-’২২, ২০২২-’২৩ এবং ২০২৩-’২৪ অর্থবর্ষের টাকা পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া অন্য কোনও রাজ্যের পাওনা নেই।

Advertisement

ওই জবাবে এটাও উল্লেখ করা হয়েছে যে, ২০২১-’২২ অর্থবর্ষে বাংলাকে কেন্দ্র ওই প্রকল্প বাবদে ৪,১৩৭ কোটি টাকা এবং পরের অর্থবর্ষে ১,৪১৬ কোটি টাকা দেয়। এর পরে টাকা দেওয়া বন্ধ হয় ২০২২ সালের ৯ মার্চ থেকে। তার কারণ হিসাবে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের দাবি, কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশ না মানার জন্যই বরাদ্দ বন্ধ করা হয়েছে। ওই প্রকল্পের জন্য তৈরি ২০০৫ সালের আইনের ২৭ ধারায় এ ভাবে টাকা আটকে দেওয়ার সংস্থান রয়েছে বলেও দাবি করা হয়েছে। অন্য দিকে, তৃণমূলের পক্ষে বারংবার দাবি করা হয়েছে, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে পরাজয়ের পরই বিজেপি ‘প্রতিহিংসাপরায়ণ’ হয়ে বাংলার প্রাপ্য টাকা আটকে রেখেছে।

কত টাকা আটকে বাংলার, সেই হিসাবও দেওয়া হয়েছে সংসদে পেশ করা গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের জবাবে। অনেক রাজ্যেরই বড় অঙ্কের বকেয়া থাকলেও বাংলার প্রাপ্য সবচেয়ে বেশি। শুধু একশো দিনের কাজের শ্রমিকদের মজুরি বাবদই বাংলার বকেয়া ২,৭৬৫ কোটি টাকা। আর কাজের উপাদান বাবদ বাংলার আটকে থাকা প্রাপ্য ২,৭৮৮ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে একশো দিনের কাজ প্রকল্পে বাংলার বকেয়া ৫,৫৫৩ কোটি টাকা।

সাধারণ বাজেটেও বাংলাকে ‘বঞ্চিত’ করার অভিযোগ তোলা হয়েছে। তৃণমূলের পাশাপাশি অন্যান্য বিরোধী দলও ‘অবিজেপি-শাসিত’ রাজ্যের প্রতি বঞ্চনার অভিযোগ তুলেছেন। যদিও মঙ্গলবারই কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন লোকসভায় দাবি করেন, কোনও রাজ্যকেই বাজেটে বঞ্চিত করা হয়নি। ঘটনাচক্রে, একই দিনে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের বক্তব্যে প্রকাশ পেয়েছে পর পর চারটি অর্থবর্ষে একশো দিনের কাজে দেশের কোন রাজ্যের জন্য কত টাকা বরাদ্দ হয়েছে। ২০২১-’২২ থেকে ২০২৫ সালের ২৫ জুলাই পর্যন্ত বরাদ্দের তালিকায় দেখা যাচ্ছে, বাংলার জন্য পর পর তিনটি অর্থবর্ষে একটি টাকাও বরাদ্দ হয়নি। শেষ বার ২০২১-’২২ সালে বরাদ্দ হয়েছিল ৭,৫০৭.৮ কোটি টাকা। ২০২২-’২৩, ২০২৩-’২৪ এবং ২০২৪-’২৫ অর্থবর্ষে কোনও বরাদ্দ হয়নি। বাংলা ছাড়া ওই তালিকায় রয়েছে শুধু কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল লাক্ষাদ্বীপ। তবে পশ্চিমবঙ্গের মতো লাক্ষাদ্বীপের বিরুদ্ধে কোনও বেনিয়মের অভিযোগ উল্লেখ করা নেই।

বিভিন্ন দলের তরফে বাজেট নিয়ে যে ‌যে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল, মঙ্গলবার সংসদে তার জবাবি বক্তৃতা করেন নির্মলা। আগেই নানা প্রশ্ন তুলেছিলেন তৃণমূলের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। নির্মলা তাঁর বক্তৃতায় অভিষেকের প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে গিয়েছেন অভিযোগ তুলে লোকসভা থেকে ওয়াক আউট করেন তৃণমূল সাংসদেরা। তার পরেই আরও এক বার একশো দিনের কাজ এবং আবাস যোজনা নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি তোলেন অভিষেক। পাশাপাশিই এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে লেখেন, ‘‘১৩৮ দিন, ৩,৩১৯ ঘণ্টার বেশি সময় কেটে গিয়েছে। কিন্তু এখনও শ্বেতপত্র প্রকাশিত হল না।’’ প্রসঙ্গত, গত ১৪ মার্চ শ্বেতপত্রের দাবিতে প্রথম পোস্ট করেছিলেন অভিষেক।

তার পরে বুধবার সকাল থেকে তৃণমূলের তরফে দল বেঁধে নির্মলাকে আক্রমণ শুরু হয়েছে। মন্ত্রী ব্রাত্য বসু, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য থেকে সাংসদ সায়নী ঘোষেদের দাবি, অর্থমন্ত্রীর ‘অসত্য’ দাবি প্রকাশ্যে এসে গিয়েছে। তিনি কোনও রাজ্যকে বঞ্চিত করা হয়নি বলে দাবি করলেও এটা স্পষ্ট যে, বাংলাকে এই অর্থবর্ষেও একশো দিনের কাজ প্রকল্পে কোনও টাকা দিচ্ছে না কেন্দ্র। জবাবে বিজেপির রাজ্যসভা সাংসদ শমীক ভট্টাচার্যের দাবি, ‘‘কেউ কেন্দ্রীয় বরাদ্দ পাওয়াকে অধিকার এবং হিসাব না দেওয়াটা অভ্যাস বলে মনে করে, সেটা চলতে পারে না।’’ মঙ্গলবার সংসদে নতুন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহানও বলেছেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে একশো দিনের কাজ নিয়ে অনেক অনিয়ম হয়েছে। এই তহবিলের টাকা অন্য খাতেও খরচ হয়েছে। যেটা নিয়ম নয়। দুর্নীতির বিরুদ্ধে এফআইআর হয়েছে। আর রাজ্য সরকার অভিযুক্তদের আড়াল করেছে। আমরা জনতার টাকা কাউকে খেতে দিতে পারি না।’’ অতীতে একই কথা বলেছিলেন ওই মন্ত্রকের মন্ত্রী গিরিরাজ সিংহ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement