দিল্লির সেই কোচিং সেন্টার। ছবি: পিটিআই।
দিল্লির কোচিং সেন্টারে বেসমেন্টে জল ঢুকে তিন আইএএস পড়ুয়ার মৃত্যুর ঘটনায় প্রথম প্রতিক্রিয়া জানালেন ওই সেন্টারের কর্তৃপক্ষ। পড়ুয়া মৃত্যুর ঘটনায় শোকপ্রকাশ করে তাঁরা তদন্তে সবরকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন। অন্য দিকে, এই ঘটনায় ধৃত কোচিং সেন্টারের মালিক এবং কো-অর্ডিনেটরকে আদালতে হাজির করানো হলে তাঁদের ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
পুরনো দিল্লির রাজেন্দ্রনগর এলাকায় ছিল ওই কোচিং সেন্টার। সেই কোচিং সেন্টারের বেসমেন্টেই ছিল লাইব্রেরি। সেখানে শনিবার সন্ধ্যায় পড়তে গিয়েছিলেন অন্তত ৩০ থেকে ৩৫ জন পড়ুয়া। আচমকা সেখানে বৃষ্টির জল ঢুকতে শুরু করে। বেরিয়ে আসার জন্য পর্যাপ্ত সময় পাননি অনেকেই। কেউ কেউ সাধারণ ভাবে বেসমেন্ট থেকে উঠে আসতে পেরেছিলেন। বাকিদের উপর থেকে দড়ির সাহায্যে তুলতে হয়েছে। তবে তিন জন পড়ুয়ার দেহ উদ্ধার করা হয় ওই জমা জল থেকে।
এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই শোরগোল পড়ে যায়। কোচিং সেন্টারের বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। এই ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার রাত থেকেই কোচিং সেন্টারের বাইরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন পড়ুয়ারা। ঘটনার পর থেকে ‘চুপ’ ছিলেন ওই কোচিং সেন্টারের কর্তৃপক্ষ। তবে রবিবার সন্ধ্যায় তাঁদের তরফে একটি বিবৃতি জারি করা হয়। সেই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘মৃত পড়ুয়াদের পরিবার এবং প্রিয়জনের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি। ইনস্টিটিউশন গভীর ভাবে দুঃখিত। ঘটনার চলমান তদন্তে সহয়তা করার জন্য আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সমস্ত প্রয়োজনীয় তথ্য আমরা তদন্তকারী সংস্থার সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছি। এই দুর্ঘটনা আমাদের সকলকে স্পর্শ করেছে।’’
কী ভাবে ওই দুর্ঘটনা ঘটেছে, তা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে দিল্লি পুলিশ। তদন্তে উঠে আসছে একের পর চাঞ্চল্যকর তথ্য। এনডিটিভি জানিয়েছে, কোচিং সেন্টারটির বেসমেন্ট বেআইনি ভাবে ব্যবহার করা হচ্ছিল। ২০২১ সালের অগস্ট মাসে দিল্লি পুরসভার কাছ থেকে কোচিং চালানোর অনুমতি পেয়েছিল ওই সংস্থা। সেই সংক্রান্ত নথিতে লেখা রয়েছে, বেসমেন্ট শুধু গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য ব্যবহার করা যাবে। এ ছাড়া গৃহস্থালির জিনিসপত্র গুদামজাত করা যাবে সেখানে। অন্য কোনও কাজে ব্যবহারের অনুমতি না থাকার পরেও কেন সেখানে লাইব্রেরি তৈরি হল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে দিল্লিতে আপ বনাম বিজেপি তরজা শুরু হয়েছে। এই ঘটনার জন্য আপ সরকারের অব্যবস্থাকেই দায়ী করেছে বিজেপি। আপ মন্ত্রী অতিশী ঘটনায় উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। দিল্লির মেয়রের নির্দেশেও তদন্ত শুরু হয়েছে। ঘটনার পর নড়েচড়ে বসেছে পুরসভাও। দিল্লি জুড়ে বেআইনি কোচিং সেন্টারের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে তারা। রাজেন্দ্রনগর এলাকার ১৩টি কোচিং সেন্টার সিল করে দেওয়া হয়েছে বলে খবর।