দিল্লির আইএএস কোটিং সেন্টারের মৃত তিন পড়ুয়ার মধ্যে দু’জন। (বাঁ দিকে) নবীন ডালভিন। শ্রেয়া যাদব (ডান দিকে)। ছবি: সংগৃহীত।
অধরাই থেকে গেল আমলা হওয়ার স্বপ্ন! আইএএস হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে সুদূর কেরল থেকে দিল্লিতে এসেছিলেন নবীন। কিন্তু শনিবারের একটি দুর্ঘটনা তাঁর প্রাণ কেড়ে নিল। শুধু নবীন নন, সেই ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে আরও দুই আইএএস পড়ুয়ার। যে ঘটনা ঘিরে শনিবার রাত থেকেই উত্তাল রাজধানী।
নবীন ডালভিন। বয়স ২৮। কেরলের এর্নাকুলামের এক মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। কলেজের পড়াশোনা শেষ করে পিএইচডি করতে দিল্লিতে এসেছিলেন নবীন। পটেল নগরে একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতেন। ভর্তি হয়েছিলেন জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে (জেএনইউ)। তবে নবীনের মূল লক্ষ্য ছিল আমলা হওয়া। তাই পিএইচডির পাশাপাশি তিনি ইউপিএসসি পরীক্ষার জন্যও প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ভর্তি হয়েছিলেন দিল্লির একটি নামী আইএএস কোচিং সেন্টারে। প্রতি দিনের মতো শনিবারও কোচিং সেন্টারে গিয়েছিলেন নবীন। ওই সেন্টারের বেসমেন্টে একটি গ্রন্থাগার রয়েছে। সেখানে আইএএস পড়ুয়ারা কোচিংয়ের পাশাপাশি পড়াশোনা করতেন। সকাল ১০ নাগাদ গ্রন্থাগারে এসেছিলেন নবীন। ৩০-৩৫ জন পড়ুয়া ছিলেন ওই গ্রন্থাগারে।
স্থানীয় সূত্রে খবর, অন্য দিন সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে বন্ধ হয়ে যায় গ্রন্থাগারটি। কিন্তু শনিবার বৃষ্টি হচ্ছিল বলেই পড়ুয়ারা গ্রন্থাগারের ভিতরে ছিলেন। তাঁদের সঙ্গে নবীনও ছিলেন। আচমকা সেই বেসমেন্টে হু হু করে জল ঢুকতে শুরু করে। ২-৩ মিনিটের মধ্যে বেসমেন্ট জলে ভরে যায়। বেশির ভাগ পড়ুয়াকেই উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু বেসমেন্টের সেই জলেই ডুবে মৃত্যু হয় নবীনের। শুধু নবীন নন, তাঁর সঙ্গে আরও দুই ছাত্রীরও ডুবে মৃত্যু হয়েছে। তাঁর হলেন শ্রেয়া যাদব (২৫) এবং তানিয়া সোনি (২৫)।
উত্তরপ্রদেশের অম্বেডকর নগরের বাসিন্দা শ্রেয়া। তিনিও আমলা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে দিল্লিতে এসেছিলেন। রাজেন্দ্র নগরের ওই কোচিং সেন্টারে এ মাসেই ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু আমলা হওয়ার আগেই সব শেষ। পুলিশ জানিয়েছে, শ্রেয়ার বাড়ির লোকজনকে তাঁর মৃত্যু খবর জানানো হয়েছে। শ্রেয়া ছাড়াও এই ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে তানিয়া সোনির। তিনিও মাস কয়েক আগে তেলঙ্গানা থেকে দিল্লিতে এসেছিলেন। আইএএসের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। বেসমেন্ট থেকে প্রথমে শ্রেয়া এবং তানিয়ার দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে নবীনের দেহ উদ্ধার হয়।
তিন জনের মৃত্যুর প্রতিবাদে কোচিং সেন্টারের সামনে শনিবার রাত থেকে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন অন্যান্য পড়ুয়ারা। রবিবার সকালেও প্ল্যাকার্ড হাতে সেন্টারের সামনে বসে থাকতে দেখা যায় তাঁদের। ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে দিল্লিতে আপ বনাম বিজেপি তরজা শুরু হয়েছে। এই ঘটনার জন্য আপ সরকারের অব্যবস্থাকেই দায়ী করেছে বিজেপি। আপ মন্ত্রী অতিশী ঘটনায় উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।