অলঙ্করণ: শৌভিক দেবনাথ
মালমশলা সব তৈরিই ছিল যেন। অস্ত্রভাণ্ডারে কী না ছিল— ভিডিয়ো, মিম, কার্টুন, প্যারোডি থেকে বলিউডি ডায়লগ... সবই! শুধু অপেক্ষা ছিল ইভিএম খোলার। প্রাথমিক প্রবণতায় তৃতীয় বারের জন্য আপ ক্ষমতায় ফেরার ইঙ্গিত মিলতেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে এল সেই সব ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের ‘গোলাবারুদ’। রাজনৈতিক কর্মী কিংবা নেহাত ‘আম আদমি’, সিংহভাগ সক্রিয় নেটাগরিকের ওয়ালে অফুরন্ত হাসির খোরাক।
বিকেল পর্যন্ত দিল্লির ফল ঘোষণার যা প্রবণতা, তাতে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে তৃতীয় বারের জন্য রাজধানীর রাজ সিংহাসনে বসতে চলেছেন অরবিন্দ কেজরীবাল। জয় ঘোষণা এবং এগিয়ে থাকার নিরিখে ৬২টি আসন পেতে পারে আম আদমি পার্টি (আপ)। প্রধান প্রতিপক্ষ বিজেপির ঝুলিতে ৮টি। উবে গিয়েছে কংগ্রেস। হাতে আসন সংখ্যা শূন্য। যদিও চূড়ান্ত ফল ঘোষণা এখনও হয়নি।
কিন্তু টুইটার, ফেসবুক, হোয়াট্সঅ্যাপ ব্যবহারকারীদের এতদূর পর্যন্ত তর সয়নি। সকাল আটটায় ইভিএম খোলার ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই প্রবণতায় কার্যত স্পষ্ট হয়ে যায় দিল্লির ফল। শুধু জয়ই নয়, বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে কেজরীবালের প্রত্যাবর্তনের ইঙ্গিত মিলতেই সক্রিয় হয়ে ওঠে সোশ্যাল মিডিয়া। সুনামির মতো আছড়ে পড়তে শুরু করে সেই সব হাস্যকৌতুক কিংবা উপহাসের পোস্ট। তার পর সময় যত গড়িয়েছে, তার প্রাবল্য এবং আধিক্য ততই বেড়েছে। তাই নিয়ে মঙ্গলবার দিনভর চলেছে চর্চা, কমেন্টস, রিটুইট, লাইক, শেয়ার।
সোশ্যাল মিডিয়ায় টার্গেট মূলত মনোজ তিওয়ারি। তিনি বিজেপির দিল্লির সভাপতি তথা ভোজপুরী ফিল্মের সুপারস্টার মনোজ তিওয়ারি। তিনি আবার ফল ঘোষণার আগের দিন পর্যন্ত বলে এসেছেন দিল্লিতে বিজেপিই জিতছে। বুথফেরত সমীক্ষাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। পাশাপাশি মোদী-অমিত শাহ জুটিকে কটাক্ষ-উপহাসের বাউন্সার ছুড়তেও ছাড়েননি নেটাগরিকরা। উল্টো দিকে রয়েছে কেজরীবাল-মণীশ সিসৌদিয়া জুটির প্রশস্তিও।
আরও পড়ুন: ‘কাজ দেখেই ভোট’, বিজেপির নাম মুখেও আনলেন না কেজরীবাল
বলিউড সিনেমার কোনও দৃশ্যে কোনও বক্তব্য লিখে সাম্প্রতিক পরিস্থিতির সঙ্গে মেলানো সোশ্যাল মিডিয়ার পরিচিত ট্রেন্ড। এ ছাড়া হিন্দি সিনেমার জনপ্রিয় ডায়লগকে বর্তমান প্রেক্ষাপটে নিয়ে এসে ফেলাটাও সোশ্যাল মিডিয়ার এক অনন্য শিল্পকলা।
এ দিন সেই ধরনের সব মিম-এ ভর্তি হয়ে গিয়েছে টুইটারের দেওয়াল। বাদ যায়নি ফেসবুকও। হোয়াট্সঅ্যাপের গ্রুপে কিংবা ব্যক্তিগত ভাবেও এমন বহু মিম ছড়িয়েছে। তালিকায় ‘হেরা ফেরি’ সিরিজ, ‘থ্রি ইডিয়টস’, ‘জরু কা গুলাম’-এর মতো কমেডি ফিল্মের দৃশ্যের ফোটো-ডায়লগ যেমন রয়েছে তেমনই সাম্প্রতিক কালে রণবীর কপুরের ‘গল্লি বয়’, কিংবা ঋত্বিক রোশন-টাইগার শ্রফের ‘ওয়ার’ ছবির জনপ্রিয় ডায়লগও।
এক সময় কার্টুনের জনপ্রিয়তা কিছুটা কমলেও সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে ফের স্বমহিমায় ফিরে এসেছে। আপের প্রতীক ঝাঁটা বা ঝাড়ু। সেই ঝাড়ু থিমের উপর ভিত্তি করেই অন্তত কয়েকশো কার্টুন ছড়িয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। তার কোনওটিতে ঝাড়ু মেরে সাফ করা হচ্ছে ‘পদ্ম’। কোনও কার্টুনে ঝাঁটা নিয়ে মনোজ তিওয়ারিকে তাড়া করা হচ্ছে তো কোথাও স্টেডিয়ামে ব্যাটের বদলে ঝাঁটা হাতে কেজরীওয়াল। আবার কেজরী-সিসৌদিয়া পদ্মের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন, এমন ছবিও রয়েছে নেট দুনিয়ায়।
আরও পড়ুন: ‘মাফলার ম্যান’ থেকে টানা তিন বার দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী, কামাল করলেন কেজরীবাল
ভোটের আগে একাধিক ভিডিয়ো ছড়িয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়, যা মূলত কালজয়ী বলিউড মুভি শোলের দৃশ্যগুলিতে নেতা-নেত্রীদের মুখ বসিয়ে কারসাজি করা হয়েছিল। তার কয়েকটিতে অমিত শাহকে দেখানো হয়েছিল গব্বর সিং হিসেবে। গব্বরের শাকরেদ হিসেবে ছিলেন মনোজ তিওয়ারি, গৌতম গম্ভীররা। আর কেজরিওয়াল-সিসৌদিয়া হয়েছিলেন অমিতাভ-ধর্মেন্দ্র তথা জয়-বীরুর ভূমিকায়। আপের পক্ষ থেকেই এ সব ছড়ানো হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে নির্বাচন কমিশন এবং পুলিশে নালিশ ঠুকেছিল বিজেপি। আজ ভোটের ফল প্রকাশের পর সেই সব ভিডিয়োও ফের ভেসে উঠেছে সামাজিক মাধ্যমে।
ভোটে এক পক্ষ জিতবে, অন্য পক্ষ হারবে— এটাই স্বাভাবিক। দল-প্রার্থীদের কারও জয় পরাজয়ের উল্লাসও থাকবে। কিন্তু তার মধ্যেও সোশ্যাল মিডিয়ার এই সব হাস্যরস দিনভর চেটেপুটে উপভোগ করেছেন নেটাগরিকরা। বাস্তবের জয় পরাজয়ের বাইরে অন্তর্জালের দুনিয়ায় দিনের শেষে জয়ী যেন সেই সব ভিডিয়ো, মিম, কার্টুনরাই।