নরেন্দ্র মোদী। ফাইল চিত্র।
পঞ্জাবে বিধানসভা ভোটের মুখে বিতর্কিত তিন কৃষি আইন প্রত্যাহার করেছেন। কিন্তু তার পরেও ওই রাজ্যে আসন্ন ভোটের জন্য প্রথম বার প্রচারে গিয়ে কৃষক বিক্ষোভের মুখে গাড়ি ঘুরিয়ে দিল্লি ফিরতে হয়েছে নরেন্দ্র মোদীকে। এই আবহে রবিবার শিখ গুরু গোবিন্দ সিংহের প্রকাশ পরবে নতুন করে শিখদের তথা পঞ্জাবের মন জয়ের চেষ্টা করলেন প্রধানমন্ত্রী। ঘোষণা করলেন, শিখ গুরু গোবিন্দ সিংহের পুত্র বা ‘সাহিবজ়াদে’-দের সাহসকে শ্রদ্ধা জানাতে এখন থেকে প্রতি বছর ২৬ ডিসেম্বর ‘বীর বাল দিবস’ হিসেবে পালিত হবে। পঞ্জাবে ভোটের দিন ক্ষণ ঘোষণা হয়ে যাওয়ার পরে আজ এই ঘোষণা করে প্রধানমন্ত্রী ভোটের আদর্শ আচরণ-বিধি ভেঙেছেন বলে অভিযোগ বিরোধীদের।
রাজনীতিবিদরা বলছেন, নরেন্দ্র মোদী এই ঘোষণা করে এক ঢিলে দুই পাখি মারার চেষ্টা করেছেন। এক দিকে, তিনি শিখদের ভাবাবেগ ছোঁয়ার চেষ্টা করেছেন। অন্য দিকে, উস্কে দিতে চেয়েছেন ধর্মীয় ‘সংঘাতের স্মৃতি’। কারণ, সাহিবজ়াদে হিসেবে অভিহিত শিখ গুরু গোবিন্দ সিংহর চার ছেলেই মুঘলদের হাতে নিহত হন। দুই কিশোর পুত্র ১৭০৪ সালের ২১-২৩ ডিসেম্বরে মুঘলদের সঙ্গে চমকৌরের যুদ্ধে নিহত হয়েছিলেন। অন্য দুই বালক পুত্র ২৬ ডিসেম্বর সরহিন্দের নবাবের হাতে নিহত হন। ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে অস্বীকার করায় তাদের হত্যা করা হয়।
এ বার এই দিনটিকেই বীর বাল দিবস হিসেবে পালনের কথা ঘোষণা করে মোদী মুঘলদের ইসলাম ধর্ম চাপিয়ে দেওয়ার ইতিহাস প্রতি বছর স্মরণ করিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করলেন বলে পর্যবেক্ষকদের ধারণা। তাঁদের মতে, কিছু দিন আগে তিনি বারাণসীতে এই একই কারণে আওরঙ্গজ়েবের প্রসঙ্গ টেনে এনেছিলেন। সেই সঙ্গে হিন্দু ভাবাবেগ উস্কে দিয়ে অওরঙ্গজ়েবের বিরুদ্ধে শিবাজির রুখে দাঁড়ানোর কথা বলেছিলেন। আজ একই ভাবে তিনি মুঘলদের বিরুদ্ধে শিখ ধর্মগুরুদের রুখে দাঁড়ানোর কথা স্মরণ করালেন।
শনিবারই উত্তরপ্রদেশ, পঞ্জাব-সহ পাঁচ রাজ্যের নির্বাচন ঘোষণা হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে আদর্শ আচরণ-বিধিও চালু হয়ে গিয়েছে। তৃণমূলের মুখপাত্র সাকেত গোখলের অভিযোগ, “মোদী প্রথম দিনেই নির্বাচনী আচরণ-বিধি ভেঙেছেন। ভোটমুখী রাজ্যে প্রভাব ফেলতে নিজের পদকে কাজে লাগিয়ে এই ঘোষণা করেছেন। নির্বাচন কমিশন অবশ্য অন্য দিকে তাকিয়ে থাকবে।”
এত দিন অকালি দলের সঙ্গে জোটই পঞ্জাবে বিজেপির প্রধান শক্তি ছিল। কিন্তু তিন কৃষি আইনের বিরোধিতা করে অকালিরা এনডিএ ত্যাগ করায় ধাক্কা খাওয়া বিজেপি প্রাক্তন কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিংহ ও অকালিদের বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে। প্রধানমন্ত্রী একগুচ্ছ সরকারি প্রকল্পের উদ্বোধন করে গত সপ্তাহে পঞ্জাব থেকে প্রচার শুরু করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কৃষক বিক্ষোভে কনভয় আটকে যাওয়ায় তাঁকে ফিরে আসতে হয়। এখন আদর্শ আচরণ-বিধি চালু হয়ে যাওয়ায় আর সরকারি প্রকল্প উদ্বোধন করতে যাওয়া সম্ভব নয়। প্রধানমন্ত্রী তাই এ বার অন্য ভাবে পঞ্জাবের মন জয়ের চেষ্টা করতে চাইছেন বলে কংগ্রেস নেতারা মনে করছে। এর বিরোধিতা করা যে মুশকিল, তা-ও মানছেন তাঁরা।
প্রধানমন্ত্রী আজ বলেছেন, ‘মাতা গুজরী, গুরু গোবিন্দ সিংহ ও চার সাহিবজ়াদের বীরত্ব ও আদর্শ লক্ষ লক্ষ মানুষকে শক্তি দেয়। তাঁরা অন্যায়ের সামনে মাথা নত করেননি। তাঁরা সকলের সমাবেশ ও সামঞ্জস্যে ভরা এক পৃথিবীর কথা ভেবেছিলেন। তাঁদের বিষয়ে সকলের জানা উচিত। সেটিই সময়ের চাহিদা।”
পঞ্জাবের বিজেপি নেতাদের ব্যাখ্যা, ধর্মরক্ষায় মুঘলদের সঙ্গে লড়তে গিয়ে শিখ গুরু গোবিন্দ সিংহ তাঁর চার পুত্রেরই বলিদান দিয়েছিলেন। অজিত সিংহ ও জুঝার সিংহ চমকৌরের যুদ্ধে প্রাণ দেন। এর পরে তাঁর দুই বালক পুত্র জোরাওয়ার সিংহ ও ফতেহ সিংহকে সরহিন্দের নবাব জীবন্ত অবস্থায় প্রাচীরে পুঁতে দিয়েছিলেন। তাঁদের মা গুজরীও শহিদ হয়েছিলেন। বিজেপির নতুন শরিক, ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিংহ প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, সাহিবজ়াদেদের সর্বোচ্চ বলিদানের কথা সকলেরই জানা উচিত। কারণ দমন-নিপীড়নের সামনে তাঁরা যে সাহস দেখিয়েছিলেন, তা অদ্বিতীয়। সেই পথে এ এক প্রশংসাযোগ্য পদক্ষেপ।