CR Patil

দায়িত্বে কি পাটিল, চর্চা প্রীতিভোজে

সূত্রের খবর, গুজরাতের রাজনীতিতে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের বিশ্বস্ত এবং ভরসার লোক হিসেবে পরিচিত পাটিলকেই জাতীয় সভাপতি হিসাবে দেখতে চাইছেন ওই জুটি।

Advertisement

অনমিত্র সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৭:৩৮
Share:

বিজেপি সাংসদ চন্দ্রকান্ত রঘুনাথ পাটিল। —ফাইল চিত্র।

প্রথম ইনিংস শেষ। রাজ্য বিজেপি সভাপতি হিসেবে সাফল্যের সঙ্গে গুজরাতে বিজেপিকে বিধানসভায় ও লোকসভা নির্বাচনে প্রবল ভাবে জিতিয়ে এনেছেন তিনি। তাই জল্পনা উঠেছে, রাজ্য রাজনীতির আঙিনা ছেড়ে কেন্দ্রীয় রাজনীতির ঘূর্ণি পিচেই কি নতুন বছরের প্রথম মাস থেকে ইনিংস শুরু করতে চলেছেন গুজরাতের বিজেপি সাংসদ চন্দ্রকান্ত রঘুনাথ পাটিল ওরফে সি আর পাটিল। আগামী বছরের গোড়ায় জাতীয় সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব শেষ হচ্ছে জে পি নড্ডার। সূত্রের খবর, তাঁর পরিবর্তে গুজরাতের রাজনীতিতে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের বিশ্বস্ত এবং ভরসার লোক হিসেবে পরিচিত পাটিলকেই জাতীয় সভাপতি হিসাবে দেখতে চাইছেন ওই জুটি।

Advertisement

শীতের রাজধানীতে পাটিলকে ঘিরে এই উত্তেজনার অন্যতম কারণ হল তিন দিনে দেওয়া তাঁর তিনটি প্রীতিভোজ। পাটিল বর্তমানে গুজরাতে রাজ্য সভাপতির পাশাপাশি কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রী। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলে তিনি দিল্লির পাশাপাশি আমদাবাদে একটি সরকারি বাড়ি পেয়েছেন। সূত্রের মতে, সেই বাড়ির গৃহপ্রবেশ ও রাজ্য সভাপতি হিসেবে জানুয়ারিতে দায়িত্ব শেষ হতে যাওয়ায় গুজরাতের বিধায়ক ও নেতাদের গত পরশু আমদাবাদের বাড়িতে নৈশভোজে নিমন্ত্রণ করেছিলেন পাটিল। সেই পর্ব মিটতেই, গত কাল খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা ছিল তাঁর দিল্লির সফদরজঙ্গ লেনের বাড়িতে। যাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ ছাড়াও ছিলেন নড্ডা ও গুজরাতের বিজেপি সাংসদ-বিধায়কেরা। সংসদের অধিবেশন দেখার জন্য ওই বিধায়কদের বিশেষ করে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। আর আজ দুপুরে নিজের বাড়িতে দিল্লির সাংবাদিকদের মধ্যাহ্নভোজনে আমন্ত্রণ জানান পাটিল। স্বভাবতই জল্পনা তৈরি হয়েছে যে পরপর তিন দিন এ ভাবে প্রীতিভোজ দেওয়ার মাধ্যমে আসলে কি কোনও বার্তা দিলেন পাটিল?

বিজেপি নেতৃত্ব মুখে কুলুপ দিয়েছে। দল বলছে, জানুয়ারিতে সভাপতি নির্বাচন হলেই জানা যাবে পরবর্তী দলপ্রধান কে হচ্ছেন। এই মুহূর্তে যারা দৌড়ে রয়েছেন তাঁদের মধ্যে রয়েছেন হরিয়ানার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বর্তমানে কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়নমন্ত্রী মনোহরলাল খট্টর। আরএসএস ঘনিষ্ঠ ওই নেতা নরেন্দ্র মোদীর ঘনিষ্ঠ। দু’জনে একসময়ে একই সঙ্গে প্রচারকের দায়িত্ব সামলেছেন। ফলে সভাপতি হয়ে মোদী-শাহ জুটির সঙ্গে কাজ করতে সমস্যা হওয়ার কথা নয় খট্টরের। দৌড়ে রয়েছেন মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বর্তমানে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী, আরএসএস-এর অন্যতম পছন্দের মুখ শিবরাজ সিংহ চৌহান। কিন্তু বিজেপির বর্তমান শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে যে তাঁর সুসম্পর্ক যে নেই তা বিজেপির অন্দরমহলে কান পাতলেই শোনা যায়। উপরন্তু কৃষক আন্দোলন ঠেকাতে কৃষিমন্ত্রী হিসাবে তাঁর ব্যর্থতা নিয়ে উপরাষ্ট্রপ্রতি জগদীপ ধনখড় চলতি সপ্তাহে প্রকাশ্যে সরব হওয়ায় দৌড়ে বেশ অনেকটাই পিছিয়ে গিয়েছেন শিবরাজ। সভাপতির দৌড়ে ছিলেন মরাঠা ওবিসি নেতা বিনোদ তাউড়ে। কিন্তু মহারাষ্ট্র ভোটের আগে টাকা বিতরণের ভিডিয়ো সামনে আসার পর থেকেই কার্যত আত্মগোপন করেছেন ওই নেতা। নাম ছিল ধর্মেন্দ্র প্রধান, ভূপেন্দ্র যাদবের মতো ওবিসি নেতাদেরও। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী ও জাতীয় সভাপতি উভয়েই ওবিসি সমাজ থেকে বেছে নিলে উচ্চবর্ণের ভোট ব্যাঙ্কের কাছে জবাবদিহি করতে হত দলকে।

Advertisement

এই আবহে সভাপতির দৌড়ের একেবারে শেষ পর্বে নতুন মুখ হিসেবে উঠে এসেছেন গুজরাতের ক্ষত্রিয় নেতা ও মোদী-শাহের বিশেষ কাছের লোক সি আর পাটিল। মৃদুভাষী পাটিল দলে তাঁর সাংগঠনিক দক্ষতা ও মসৃণ ভাবে নির্বাচন পরিচালনায় দক্ষ। রাজনীতিকদের মতে, পাটিল জাতীয় সভাপতি হলে মোদী-শাহ জুটির মধ্যে ত্রিপাক্ষিক সমন্বয় বাড়বে। তবে পাটিলকে সভাপতি করা হলে গোটা দলেই গুজরাত লবির প্রাধান্য আরও বেশি করে প্রতিষ্ঠা পাবে। ইতিমধ্যেই দলে মোদী-শাহ জুটির একছত্র কর্তৃত্বকে কেন্দ্র করে চাপা অসন্তোষ রয়েছে। পাটিল সভাপতি হলে বিজেপির গো-বলয়ের হিন্দু নেতৃত্ব, বিশেষ করে যোগী আদিত্যনাথ শিবিরে নতুন করে অস্বস্তি বাড়বে। তা ছাড়া, দলে গুজরাত গোষ্ঠীর প্রাধান্য আরও বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়টি আরএসএস নেতৃত্ব কেমন ভাবে গ্রহণ করে এবং মোদী-শাহ জুটি তা কী ভাবে সামলান, তার উপরে পাটিলের ভাগ্য ঝুলছে, মনে করছেন দলের একাংশ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement