প্রতীকী ছবি।
সংসদে বিজেপি-বিরোধিতার প্রশ্নে এমনিতে ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’ নীতিতেই অভ্যস্ত নবীন পট্টনায়কের দল। কিন্তু রাজনৈতিক সূত্রের খবর, এ বার রাজ্যসভায় তৃণমূল নেতৃত্বকে বিজেডি-র তরফ থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, সরকার-বিরোধী কোনও বিষয় নিয়েই সংসদে আলোচনার নোটিসে তারা সই করবে না। বলা হয়েছে, এ ব্যাপারে দলনেতা নবীন পট্টনায়কের সুস্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে। জগন্মোহন রেড্ডির দল সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধ প্রসঙ্গে দেওয়া ১৬ জনের নোটিসে (চলতি সপ্তাহে আলোচনার জন্য রাজ্যসভার চেয়ারম্যানের কাছে নোটিস দেওয়া রয়েছে) সই করলেও ভবিষ্যতে হাতে-কলমে কতটা মোদী-বিরোধিতায় যাবে, তা নিয়েও যথেষ্ট সংশয় রয়েছে বিরোধী দলগুলির। এই আবহেই বিরোধী শিবিরকে স্বস্তি দিয়ে সূত্রের ইঙ্গিত, সিপিএমের পক্ষ থেকে রাজ্যসভার সাংসদ রঙ্গরাজন তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতাকে জানিয়েছেন, তাঁরা অধিবেশন চলাকালীন বিরোধী সমন্বয়ের জন্য পিছপা নন। রাজ্যসভায় তৃণমূল, কংগ্রেস-সহ বিরোধী দলগুলির সঙ্গেই রয়েছে সিপিএম।
সপ্তদশ লোকসভা শুরু হওয়ার পরে দৃশ্যতই ছত্রভঙ্গ হয়ে গিয়েছিল বিরোধী দলগুলি। প্রত্যেকেই ‘একলা চলো’ নীতি নিয়ে নিজেদের মতো করে বিজেপি বিরোধিতার পথে হাঁটছিল। তৃণমূলও তখন বলে যে, সামনে কোনও ভোট নেই। ফলে প্রত্যেকটি দল নতুন লোকসভায় নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতেই ব্যস্ত থাকবে। কিন্তু ক্রমশ সংসদের ভিতরে (বিশেষ করে রাজ্যসভায়) সমন্বয়ের মাধ্যমে এগোনোর পথে হাঁটছেন কংগ্রেস, তৃণমূল, বাম, এনসিপি, এসপি, ডিএমকে-র মত দলগুলি। তৃণমূল সূত্রে দাবি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে তারাই এই সমন্বয়ের নেতৃত্ব দিচ্ছে। উত্তরপ্রদেশের ভোটের জেরে এসপি এবং বিএসপি-র সঙ্গে কংগ্রেসের তিক্ততা থাকায় কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদের ঘরে এ নিয়ে আলোচনার আসর বসছে না বলে জানা গিয়েছে। অধিবেশনের ফাঁকে রাজ্যসভার লবিতেই আলোচনা সেরে নিচ্ছেন বিরোধী নেতারা।
এর আগে রাজ্যসভার চেয়ারম্যানের কাছে তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন নির্বাচনী সংস্কার নিয়ে এবং এনসিপি-র শরদ পওয়ার সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধ সংক্রান্ত আলোচনার জন্য সংসদীয় ১৬৭ ধারায় নোটিস দিয়েছেন। নোটিসে সই করেছেন অধিকাংশ বিরোধী দলের নেতা। এর পর পরিকল্পনা রয়েছে বিতর্কিত ন্যাশনাল মেডিক্যাল কাউন্সিল বিল (এনএমসি বিল) নিয়ে আলোচনার নোটিস দেওয়ার। উপযুক্ত পরিকাঠামো না থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন কলেজকে অনুমোদন দেওয়া, মেডিক্যাল সিলেবাসকে সময়োপযোগী না করা-সহ
একাধিক অভিযোগ উঠছিল এমসিআই-এর বিরুদ্ধে। এমনকি, দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিলেন এমসিআইয়ের সভাপতি কেতন দেশাই। এর পর এমসিআইকে খর্ব করে নতুন মেডিক্যাল কাউন্সিল গঠন করতে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে এনএমসি বিল লোকসভায় পেশ করা হয়েছিল। কিন্তু ষোড়শ লোকসভার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় বিলটির মেয়াদও ফুরিয়ে যায়। এই নতুন বিলটি নিয়ে বিরোধীদের আপত্তি ছিল। এ বারে লোকসভায় নতুন করে বিলটি এনে সরকার বিলটি পাশ করিয়ে নেয়। রাজ্যসভায় চলতি সপ্তাহে তা পাশ হওয়ার জন্য আসতে পারে। সূত্রের দাবি, সংসদের বাইরে না হলেও অদূর ভবিষ্যতে অধিবেশন চলাকালীন বিষয়ভিত্তিক ভাবে বিরোধীদের মধ্যে সমন্বয় চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।