Sitaram Yechuri

কমিটি এড়িয়েও ‘সমন্বয়ে’ উপস্থিত সিপিএম, রাজ্যে রাজ্যে ‘ইন্ডিয়া’ নেতাদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন ইয়েচুরি

অনেকের মতে, সমন্বয় কমিটিতে না-যাওয়ায় ‘ইন্ডিয়া’র বাকি দলগুলি যাতে সিপিএমকে ভুল না-বোঝে, বিজেপি বিরোধী অবস্থান নিয়ে যাতে কোনও প্রশ্ন না-ওঠে, সে কারণেই সীতারাম এই দৌত্য চালাচ্ছেন।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৯:০২
Share:

সীতারাম ইয়েচুরি। —ফাইল চিত্র।

সমন্বয় কমিটিতে না-থাকার সিন্ধান্ত নিলেও ‘ইন্ডিয়া’র নেতাদের সঙ্গে আলাদা আলাদা ভাবে সমন্বয় রেখে চলতে শুরু করল সিপিএম। বিজেপি বিরোধী জোটের মধ্যে থাকা ‘নিরাপদ’ দলগুলির শীর্ষনেতাদের বাড়ি বাড়ি যেতে শুরু করে দিয়েছেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি স্বয়ং।

Advertisement

গত ১৪ সেপ্টেম্বর এনসিপি নেতা শরদ পওয়ারের দিল্লির বাড়িতে গিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেন ইয়েচুরি। তার আগের দিন ওই বাড়িতেই ছিল ‘ইন্ডিয়া’র সমন্বয় কমিটির বৈঠক। জোটের মুম্বই বৈঠকের শেষ দিনে ‘ইন্ডিয়া’র ১৩ জনের সমন্বয় কমিটি ঘোষিত হয়। এ-ও ঘোষণা করা হয়, সিপিএমকে নিয়ে মোট ১৪ জনের কমিটি গঠিত হবে। তাতে ‘সায়’ ছিল সিপিএমেরও। কিন্তু ১৩ তারিখ কমিটির বৈঠকে সিপিএমের পক্ষ থেকে কাউকে পাঠানো হয়নি। কমিটির ১৩ জন সদস্যের মধ্যে তৃণমূলের অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া বাকি সকলেই সে দিন উপস্থিত ছিলেন। ইডি (এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট) সে দিনই কলকাতার দফতরে অভিষেককে তলব করায় তিনি ওই বৈঠকে থাকতে পারেননি। তাঁর আসন শূন্য রেখে ‘প্রতিবাদ’ জানায় ‘ইন্ডিয়া’র সমন্বয় কমিটি।

পওয়ারের বাড়িতে ইয়েচুরির ওই বৈঠকের দু’দিন পর থেকেই শুরু হয় সিপিএম পলিটব্যুরোর বৈঠক। ১৬ এবং ১৭ সেপ্টেম্বরের ওই বৈঠকেই সিদ্ধান্ত হয়, সমন্বয় কমিটিতে দল যোগ দেবে না। আনুষ্ঠানিক ভাবে জানানো হয়, এ ধরনের জোটে কোনও ‘সাংগঠনিক কাঠামো’র পক্ষে নয় সিপিএম।

Advertisement

এর পর গত বুধবার রাতে পটনায় বিহারের মুখ্যমন্ত্রী তথা জেডিইউ নেতা নীতীশ কুমারের সঙ্গে দেখা করে ইন্ডিয়াকে শক্তিশালী করার কথা বলেন সীতারাম। এই নীতীশের বাড়িতেই বিরোধী দলগুলির প্রথম বৈঠক বসেছিল। যদিও তখন ‘ইন্ডিয়া’ নামকরণ হয়নি। বৃহস্পতিবার ইয়েচুরি গিয়েছিলেন আরজেডি নেতা লালুপ্রসাদের বাড়িতে। লালু ছাড়াও ইয়েচুরির কথা হয় লালুপুত্র তথা বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদবের সঙ্গেও।

ইয়েচুরির এই দৌত্যকে জোটের স্বার্থে একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ বলেই মনে করছে সিপিএম। দলের পলিটব্যুরোর সদস্য তথা বাংলার রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘আমরা তো বলেইছি ‘ইন্ডিয়া’কে শক্তিশালী করার পক্ষে আমরা রয়েছি। তার জন্য নেতৃত্বের মধ্যে এই ধরনের সাক্ষাৎ করা আমরা চালিয়ে যাব। তবে আমাদের পার্টির অবস্থান স্পষ্ট, আমরা কোনও সাংগঠনিক কাঠামোতে থাকব না।’’ সিপিএমের বক্তব্য, ‘ইন্ডিয়া’তে ২৮টি দল রয়েছে। সেখানে ১৪ জনের কমিটি মানে প্রথমেই ১৪টি দলকে বাদ দিয়ে দেওয়া। যখন আরও সংখ্যা বাড়ানোর দিকে হাঁটা উচিত, তখন এই বাদ দেওয়াটা সঠিক নয় বলে তারা মনে করে।

রাজনৈতিক মহলের অনেকের বক্তব্য, সমন্বয় কমিটিতে না-যাওয়ায় ‘ইন্ডিয়া’র বাকি দলগুলি যাতে সিপিএমকে ভুল না-বোঝে, বিজেপি বিরোধী অবস্থান নিয়ে যাতে কোনও প্রশ্ন না-ওঠে, সে কারণেই সীতারাম এই দৌত্য চালাচ্ছেন। বাংলা এবং কেরলের রাজনীতির বাস্তবতা থেকেই সমন্বয় কমিটিতে সিপিএমের পক্ষে থাকা সম্ভব ছিল না, এমনটা বলছেন সিপিএম নেতারাই। কারণ বাংলায় তারা তৃণমূল বিরোধিতায় অনড়। আবার কেরলে শাসক সিপিএমের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস। ‘ইন্ডিয়া’র সমন্বয় কমিটিতে রয়েছেন কংগ্রেসের কেসি বেণুগোপাল। যিনি কেরলের ভূমিপুত্র। আলিমু্দ্দিন স্ট্রিট যেমন চায়নি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কোনও কমিটি ভাগ করুক দলের কোনও নেতা, তেমন কেরল রাজ্য কমিটিরও কংগ্রেসের সঙ্গে মাখামাখি নিয়ে আপত্তি রয়েছে। তা ছাড়া সিপিএম গোড়া থেকে এ-ও বলে আসছে, আসন সমঝোতা কখনওই কেন্দ্রীয় ভাবে হবে না। তা রাজ্যের বাস্তবতা অনুযায়ী করতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement