দেশের কোভিড পরিসংখ্যান। গ্রাফিক- শৌভিক দেবনাথ।
দ্বিতীয়বারের জন্য এক লক্ষ ছাড়িয়ে গেল দেশের দৈনিক কোভিড সংক্রমণ। করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের জেরে সোমবার প্রথমবারের জন্য আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছিল ১ লক্ষের গণ্ডি। মঙ্গলবার তা একটু কমেছিল। বুধবার তা বেড়ে হয়েছে ১ লক্ষ ১৫ হাজার ৭৩৬। দেশে একদিনে আক্রান্তের নিরিখে এই সংখ্যা যা এখনও অবধি সর্বোচ্চ। এই আক্রান্ত বৃদ্ধির জেরে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে দেশে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের জেরে দিনে দিনে খারাপ হচ্ছে মহারাষ্ট্রের পরিস্থিতি। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে আক্রান্ত হয়েছেন ৫৫ হাজার ৪৬৯ জন। সে রাজ্যের বিভিন্ন জেলার পাশাপাশি খারাপ হচ্ছে মুম্বইয়ের অবস্থা। দৈনিক মৃত্যুও ওই রাজ্যে বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে মৃত্যু হয়েছে ২৯৭ জনের। দেশের মোট সক্রিয় রোগীর প্রায় অর্ধেক শুধু মহারাষ্ট্রেই।
গত এক সপ্তাহে মহারাষ্ট্রের পাশাপাশি কর্নাটক, ছত্তীসগঢ়, দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, পঞ্জাব, তামিলনাড়ুর মতো রাজ্যগুলির পরিস্থিতিরও অবনতি হচ্ছে। এ গুলির মধ্যে সবথেকে খারাপ অবস্থা হয়েছে ছত্তীসগঢ়ে। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে আক্রান্ত হয়েছেন ৯ হাজার ৯২১ জন। করোনার প্রথম পর্বেও এত খারাপ পরিস্থিতি ছিল না ছত্তীসগঢ়ে। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে মৃত্যু হয়েছে ৫৩ জনের। কর্নাটকের মতো দিল্লির অবস্থায় দিনে দিনে খারাপ হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীতে নতুন আক্রান্ত ৫ হাজার ১০০ জন। গত বছর ২৭ নভেম্বরের পর এই প্রথম দিল্লির দৈনিক সংক্রমণ ৫ হাজার ছাড়াল। উত্তরপ্রদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ৫ হাজার ৮৯৫ জন। পঞ্জাব, তামিলনাড়ু, গুজরাত, মধ্যপ্রদেশেও রোজ আক্রান্ত হচ্ছেন ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজারের বেশি। অন্ধ্রপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, রাজস্থান, হরিয়ানাতেও দৈনিক আক্রান্ত ২ হাজার ছাড়িয়েছে। তেলঙ্গানা, বিহার, ঝাড়খণ্ডেও বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা।
এই আক্রান্ত বৃদ্ধি দেশে সক্রিয় রোগীর সংখ্যাকে গত কয়েকদিনে কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে সক্রিয় রোগী বেড়েচে ৫৫ হাজার ২৫০। দেশে এখন সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ৮ লক্ষ ৪৩ হাজার ৪৭৩ জন। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ দেশে দৈনিক মৃত্যুও বাড়িয়ে দিয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে মারা গিয়েছেন ৬৩০ জন। এ নিয়ে মোট ১ লক্ষ ৬৬ হাজার ১৭৭ জনের প্রাণ কেড়েছে করোনাভাইরাস।
করোনাভাইরাসের এই সংক্রমণ রুখতে ইতিমধ্যেই দেশের বিভিন্ন রাজ্য লকডাউনের কড়াকড়ি ফিরিয়ে আনছে। যেমন দিল্লিতে রাত ১০টা থেকে ভোর ৫টা অবধি জারি হয়েছে রাত্রিকালীন কার্ফু। আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে এই কার্ফু। মহারাষ্ট্রেও রাত্রিকালীন কার্ফুর পাশাপাশি সপ্তাহান্তে হচ্ছে পূর্ণ লকডাউন। ছত্তীসগঢ়ের কয়েকটি জেলাতেও জারি হয়েছে লকডাউন। কিন্তু এখনও সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব স্পষ্ট। পাশাপাশি টিকাকরণও চলছে জোর কদমে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৯ লক্ষ ৬৬ হাজার ৫৪৮ জনকে টিকা দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে দেশে করোনা টিকার মোট ডোজ দেওয়া হয়েছে ৮ কোটি ৭০ লক্ষ ৭৭ হাজার ৪৭৪।