আক্রান্তের পাশাপাশি ধারাবাহিক ভাবে বেড়ে মৃত্যু ২৭ হাজার ছাড়াল। গ্রাফিক- শৌভিক দেবনাথ।
লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে চলেছে দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। গত তিন দিনে বাড়ল আরও এক লক্ষ। যার জেরে সোমবার ১১ লক্ষ পেরলো দেশের মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। পাশাপাশি দৈনিক নতুন সংক্রমণ ৩৮-৩৯ হাজারের গণ্ডি ছাড়িয়ে করে ঢুকে পড়ল ৪০ হাজারের ঘরে।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৪০ হাজার ৪২৫ জন নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন। ২৪ ঘণ্টার নিরিখে যা এখনও অবধি সর্বোচ্চ। এক দিনে এত সংখ্যক মানুষ এর আগে আক্রান্ত হননি। এ নিয়ে দেশে মোট আক্রান্ত হলেন ১১ লক্ষ ১৮ হাজার ৪৩ জন। আক্রান্তের সঙ্গে সংক্রমণের হারও ঊর্ধ্বমুখী। প্রতি দিন যে সংখ্যক মানুষের করোনা পরীক্ষা হচ্ছে, তার মধ্যে যত শতাংশের রিপোর্ট কোভিড পজিটিভ আসছে, সেটাকেই বলা হচ্ছে ‘পজিটিভিটি রেট’ বা সংক্রমণের হার। গত কয়েকদিনে সেই হার ছিল ১০ শতাংশের আশেপাশে। কিন্তু গত ২৪ ঘণ্টায় তা বেড়ে হয়েছে ১৫.৮ শতাংশ।
আক্রান্তের পাশাপাশি ধারাবাহিক ভাবে বেড়ে মৃত্যু ২৭ হাজার ছাড়াল। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুসারে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনার জেরে মৃত্যু হয়েছে ৬৮১ জনের। এ নিয়ে দেশে মোট ২৭ হাজার ৪৯৭ জনের প্রাণ কাড়ল করোনাভাইরাস। এর মধ্যে মহারাষ্ট্রেই মারা গিয়েছেন ১১ হাজার ৮৫৪ জন। মৃত্যুর তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা দিল্লিতে প্রাণ গিয়েছে তিন হাজার ৬২৮ জনের। তামিলনাড়তে করোনা প্রাণ কেড়েছে দু’হাজার ৪৮১ জনের। গুজরাতে দু’হাজার ১৪২ জনের। কর্নাটক (১,৩৩১), উত্তরপ্রদেশ (১,১৪৬) ও পশ্চিমবঙ্গে (১,১১২) মৃত্যুর সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে রোজদিন বাড়ছে। এর পর ক্রমান্বয়ে রয়েছে মধ্যপ্রদেশ (৭২১), অন্ধ্রপ্রদেশ (৬৪২), রাজস্থান (৫৫৯), তেলঙ্গানা (৪১৫), হরিয়ানা (৩৪৯), পঞ্জাব (২৫৪), জম্মু ও কাশ্মীর (২৪৪), বিহার (২১৯)। বাকি রাজ্যগুলিতে মৃতের সংখ্যা এখনও ১০০ পেরোয়নি। তবে শেষ ক’দিনে কর্নাটক ও অন্ধ্রপ্রদেশে দৈনিক মৃত্যু সংখ্যা বৃদ্ধি উদ্বেগ বাড়াচ্ছে বিশেষজ্ঞদের।
আক্রান্ত দ্রুত হারে বাড়লেও, ভারতে করোনা রোগীর সুস্থ হয়ে ওঠার পরিসংখ্যানটাও বেশ স্বস্তিদায়ক। আক্রান্ত হওয়ার পর এখনও পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন সাড়ে সাত লক্ষ মানুষ। অর্থাৎ মোট আক্রান্তের ৬২ শতাংশই সুস্থ হয়ে উঠছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ২২ হাজার ৬৬৪ জন সুস্থ হয়েছেন। এ নিয়ে মোট সাত লক্ষ ৮৭ জন করোনার কবল থেকে মুক্ত হলেন।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
শুরু থেকেই মহারাষ্ট্রে বল্গাহীন ভাবে বেড়েছে সংক্রমণ। গোড়া থেকেই এই রাজ্য সংক্রমণের শীর্ষে রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সাড়ে ন’হাজার নতুন সংক্রমণের জেরে সে রাজ্যে মোট আক্রান্ত হলেন তিন লক্ষ ১০ হাজার ৪৫৫ জন। প্রায় পাঁচ হাজার নতুন সংক্রমণে তামিলনাড়ুতে মোট আক্রান্ত হলেন এক লক্ষ ৭০ হাজার ৬৯৩ জন। তুলনায় রাজধানী দিল্লিতে দৈনিক সংক্রমণে কিছুটা হলেও লাগাম পড়েছে। সেখানে মোট সংক্রমিতের সংখ্যা এক লক্ষ ২২ হাজার ৭৯৩ জন।
বিগত কয়েক দিনে কর্নাটকে দৈনিক সংক্রমণ হচ্ছে চার হাজারেরও বেশি। যার জেরে সংক্রমণ তালিকার চতুর্থ স্থানে উঠে এসেছে দক্ষিণের এই রাজ্য। সেখানে মোট আক্রান্ত ৬৩ হাজার ৭৭২ জন। অন্ধ্রপ্রদেশেও গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন পাঁচ হাজার জন। যার জেরে সেখানে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৪৯ হাজার ৬৫০ জন। উত্তরপ্রদেশ (৪৯,২৪৭), গুজরাত (৪৮,৩৫৫), তেলঙ্গানা (৪৫,০৭৬) ও পশ্চিমবঙ্গে (৪২,৪৮৭) আক্রান্তের সংখ্যা রোজদিন উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে চলেছে। এর পর ক্রমান্বয়ে রয়েছে রাজস্থান (২৯,৪৩৪), বিহার (২৬,৫৬৯), হরিয়ানা (২৬,১৬৪), অসম (২৩,৯৯৯), মধ্যপ্রদেশ (২২,৬০০), ওড়িশা (১৭,৪৩৭), জম্মু ও কাশ্মীর (১৩,৮৯৯), কেরল (১২,৪৮০) ও পঞ্জাব (১০,১০০)। ছত্তীসগঢ়, ঝাড়খণ্ড, উত্তরাখণ্ড, গোয়া, ত্রিপুরার মতো রাজ্যে মোট আক্রান্ত এখনও পাঁচ হাজারের আশেপাশে।
পশ্চিমবঙ্গেও রোজ দিন উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে কোভিডে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন দু’হাজারেরও বেশি (২,২৭৮)। যা এক দিনের নিরিখে সর্বোচ্চ। এই নিয়ে রাজ্যে করোনায় মোট আক্রান্ত হলেন ৪২ হাজার ৪৮৭ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে মৃত্যু হয়েছে ৩৬ জনের। রাজ্যে এ পর্যন্ত রাজ্যে মোট মৃত্যু হল এক হাজার ১১২ জনের।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে— দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ৪৯৫৬। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ৫২৬৯। তার আগের দু’দিন ছিল ৩৯৭০ এবং ৪৯৮৭। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ৪৯৪৩ এবং ৫৬১১। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ৪৯৫৬, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)