বিদেশি লগ্লি সরে যাচ্ছে ভারত-সহ এশিয়ার বাজার থেকে। গ্রাফিক; তিয়াসা দাস।
ভারতের অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য এই মুহূর্তে যার প্রয়োজন ছিল সবচেয়ে বেশি, বিশ্ব জুড়ে কোভিড-১৯ ভাইরাসের ভয়ঙ্কর সংক্রমণ ও অতিমারির জেরে, সেই বিদেশি লগ্নি এ বার মুখ ঘোরাতে শুরু করেছে। মাসপাঁচেকের সঙ্কটেই ভারতের শেয়ার বাজার থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে ১ হাজার ৬০০ কোটি ডলারেরও বেশি বিদেশি লগ্নি। একই বিপদ ঘনিয়ে এসেছে এশিয়ার অন্য উন্নয়নশীল দেশগুলির উপরেও। ভারত বাদে এশিয়ার অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের শেয়ার বাজার থেকে ইতিমধ্যেই মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে আরও ১ হাজার কোটি ডলারের বিদেশি লগ্নি।
মার্কিন কংগ্রেসে জমা পড়া একটি সাম্প্রতিক রিপোর্ট এই উদ্বেগজনক তথ্য দিয়েছে। কোভিড-১৯ সংক্রমণের কী প্রভাব পড়তে চলেছে বিশ্ব অর্থনীতিতে, তার উপর একটি সমীক্ষা চালিয়ে মার্কিন কংগ্রেসে একটি রিপোর্ট দিয়েছে ‘ইন্ডিপেন্ডেন্ট কংগ্রেসনাল রিসার্চ সেন্টার’। তাতে বলা হয়েছে, ‘‘বিদেশি লগ্নি সরে যাওয়ার ফলে এশিয়ায় খুব বড় ধরনের অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা আরও বেড়ে গিয়েছে।’’
ইউরোপ, আমেরিকার অর্থনীতির অবস্থা ভয়াবহ
কংগ্রেসনাল রিসার্চ সেন্টারের ওই রিপোর্ট এও জানিয়েছে, অতিমারির ভয়াবহ প্রভাব পড়েছে গোটা ইউরোপের অর্থনীতিতেও। জার্মানি, ফ্রান্স, ব্রিটেন, স্পেন ও ইটালির অন্তত ৩ কোটি মানুষ ইতিমধ্যেই রুজি রোজগার হারিয়ে সরকারি সাহায্য নিয়ে বেঁচে থাকার আবেদন জানিয়েছেন। শুধু তাই নয়, ২০২০ সালের প্রথম ত্রৈমাসিকের হিসাব বলছে, ইউরো মুদ্রার উপর নির্ভরশীল ইউরোপের দেশগুলির অর্থনীতির সঙ্কোচন ঘটেছে ৩.৮ শতাংশ। ১৯৯৫-এর পর গত ২৫ বছরে আর কোনও ত্রৈমাসিকে অর্থনীতির এতটা অধঃপতন আর কখনও ঘটেনি।
মার্কিন অর্থনীতির অবস্থাও শোচনীয়। চলতি বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে আমেরিকার জিডিপি পড়েছে ৪.৮ শতাংশ। মহামন্দার সময় ২০০৮ সালের চতুর্থ ত্রৈমাসিকের পর গত ১২ বছরে আমেরিকার জিডিপি এতটা নামেনি।
আরও পড়ুন: আমপানের মোকাবিলায় ফোনে মমতাকে সহযোগিতার আশ্বাস অমিতের
আরও পড়ুন: পুরীর মন্দিরে পান্ডাদের ফোন করছেন ভক্তরা
কোভিড-১৯ সামলাতে গিয়ে বেসামাল বিশ্বের অর্থনীতি
মার্কিন কংগ্রেসে জমা পড়া রিপোর্ট এও জানিয়েছে, কোভিড-১৯-এর টিকা, ওষুধ নিয়ে গবেষণা আর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সে সব বাজারে আনার লক্ষ্যে এবং নাগরিকদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে গিয়ে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলিকে যে পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করতে হয়েছে ও হচ্ছে, তাতে অন্যান্য আর্থিক কর্মসূচিকে চালু রাখা বা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া কার্যত অসম্ভবই হয়ে উঠছে। তার ফলে, এমনকী, প্রায় পঙ্গু হয়ে পড়া বিভিন্ন শিল্পক্ষেত্রের পুনরুজ্জীবনের জন্য যে বিপুল পরিমাণে ঋণ দেওয়ার প্রয়োজন, সেটাও সম্ভব হচ্ছে না। সে জন্য দেশগুলিকে দ্রুত তাদের আর্থিক নীতি বদলাতে হচ্ছে। বার বার বদলাতে হচ্ছে।
প্রভাব পড়ছে দেশগুলির পারস্পরিক সম্পর্কের উপরেও
এর প্রভাব পড়ছে দেশগুলির পারস্পরিক সম্পর্কের উপরেও। উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলির সম্পর্কে চিড় ধরছে। একই ঘটনা ঘটছে ইউরোপেও। ইউরো মুদ্রার উপর নির্ভরশীল ইউরোপের উত্তর ও দক্ষিণ প্রান্তের দেশগুলির সম্পর্কেও এই সব আর্থিক নীতির রদবদলের গভীর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। বিপন্ন হয়ে পড়ছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের নানা ধরনের জোট। অথবা শিল্পজোট। আগামী দিনে ইউরোপের দেশগুলিকে অর্থনীতির দিশা দেখানোর ক্ষেত্রে লাগামটা কোন দেশের হাতে ধরা থাকবে, সেই লাগাম কোন কোন দেশের হাত থেকে হাতছুট হবে, তা নিয়েও সৃষ্টি হয়েছে গভীর অনিশ্চয়তা। চলতি বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে চিন, আমেরিকা, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানে দারুণ ভাবে ধাক্কা খেয়েছে শিল্পোৎপাদন।
এত সব হতাশার ছবির মধ্যেও চিন, ভারত ও ইন্দোনেশিয়ার অর্থনীতি সম্পর্কে কিছুটা আশার আলো দেখিয়েছে মার্কিন কংগ্রেসে জমা পড়া ওই রিপোর্ট। বলেছে, বিশ্ব জুড়ে তীব্র অর্থনৈতিক মন্দার অশনি সঙ্কেতের মধ্যে খুব সামান্য হলেও চিন, ভারত ও ইন্দোনেশিয়ায় আর্থিক বৃদ্ধির ইঙ্গিত মিলেছে।
লোকসানের ধাক্কা সামলাতে হিমসিম বিমানবন্দর, উড়ান সংস্থাগুলির
তবে ভয়াবহ অবস্থা ইউরোপের বিমানবন্দরগুলির। লকডাউন উঠে যাওয়ার পরেও খুব অল্প সংখ্যাক উড়ান চলবে আর উড়ান-পিছু যাত্রীসংখ্যা কমে যাবে বলে ইউরোপের বিমানবন্দরগুলিকে ৪৩০ কোটি ডলার লোকসানের ধাক্কা সইতে হবে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে মার্কিন কংগ্রেসনাল রিসার্চ সেন্টারের রিপোর্টে।
শিল্প বিশেষজ্ঞদের একটি অংশের আশঙ্কা, এই মাসের মধ্যেই বহু আন্তর্জাতিক ও দেশীয় উড়ান সংস্থা দেউলিয়া হয়ে পড়বে। চিনা পর্যটকের সংখ্যা দ্রুত কমে যাচ্ছে বলে দারুণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এশিয়ার দেশগুলির পর্যটন অর্থনীতি।
গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।