২৪ এপ্রিল যে দিন থেকে লকডাউন ঘোষিত হয়, টিভিতে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ শোনার পরই চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন। চিন্তা নিজেদের জন্য ছিল না, ছিল সেই সমস্ত মানুষের জন্য যাঁদের দিন আনি দিন খাই অবস্থা।
কী করে চলবে তাঁদের এই সময়টা? কী খাবেন তাঁরা? এ সবই ভাবছিলেন ওই দম্পতি। শেষে নিজেদের সঞ্চিত অর্থ নিয়ে নিজেরাই এগিয়ে এলেন।
রাজস্থানের জোধপুরের বাসিন্দা তাঁরা। নাম পাবুরাম মান্ডা এবং মুন্নি দেবী। ছোটবেলা থেকে চাষাবাদ করেই জীবন কাটিয়েছেন।
চাষবাস থেকে অর্থ সঞ্চয় করে সন্তানকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলেছেন। তাঁদের ছেলে দিল্লির ডেপুটি আয়কর কমিশনার। নাম ভাগীরথ মান্ডা।
জমানো পুঁজি যেটুকু ছিল, সেটা দিয়েই জোধপুরের ওসিয়ান এবং তিনওয়ারি তেহসিলের ৮০টা গ্রামের ছয় হাজার পরিবারের কাছে রেশন পৌঁছে দেওয়ার পণ করেছেন তাঁরা।
বাবা-মা যে এমন উদ্যোগ নিয়েছেন, তা জানতেন না তাঁদের ছেলে ভাগীরথ। লকডাউন শুরু হওয়া থেকে গরিবদের জন্য একই রকম ভাবে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন তিনিও।
কারণ ছোট থেকে কৃষক পরিবারের মানুষ ভাগীরথ। কতটা কষ্ট করে রোজ মাঠে গিয়ে বাবা-মা ফসল ফলাতেন আর কতটা কষ্ট করে সংসার চালাতেন, তা খুব ভাল করেই জানতেন তিনি।
কিন্তু বাবা-মা যে এমন একটা উদ্যোগ নেবেন, তা তিনি বুঝতেই পারেননি। বাবা-মার এমন উদ্যোগের কথা জানতে পারার পর থেকেই আরও গর্বিত তিনি।
তিনি বলেন, “কোভিড-১৯ যে মুহূর্তে সঙ্কট তৈরি করেছে দেশে, গ্রামের গরিব-দুঃস্থদের পাশে দাঁড়াতে আমার বাবা-মা বেশি ভাবেননি। তাঁরা তাঁদের জমানো পুঁজির সবটাই রেশন কিনে গরিবদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন।”
প্রথমে স্থানীয় প্রশাসনের সাহায্য নিয়ে তাঁরা ওই ৮০টি গ্রামের সবচেয়ে গরিব পরিবারগুলো বেছে নেন। সব মিলিয়ে মোট ছয় হাজার পরিবারের কাছে রেশন পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের।
গত ৫ এপ্রিল থেকে এই রেশন পৌঁছনোর কাজ শুরু করেছেন তাঁরা। এখনও পর্যন্ত ২৫টি গ্রামে ২২০০ পরিবারের কাছে রেশন সামগ্রী পৌঁছেও দিয়েছেন। তাঁদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছেন গ্রামেরই কিছু যুবক।
প্রতি পরিবারের জন্য রেশন সামগ্রীর কিট বানানো থেকে শুরু করে, সেগুলো বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কাজে হাত লাগিয়েছেন এই যুবকেরা। কী রয়েছে এই রেশন কিটে?
প্রতিটা কিটে রয়েছে ১০ কেজি আটা, এক কেজি ডাল, এক লিটার রান্নার তেল, বিস্কুটের প্যাকেট, হলুদ, লঙ্কা, ধনের মতো প্রয়োজনীয় গুঁড়ো মশলা এবং সবচেয়ে প্রয়োজনীয় সাবান।
যাতে রেশন দেওয়ার সময় গ্রামের লোকেরা ভিড় না করেন, সে দিকেও যথেষ্ট সচেতন তাঁরা। নির্দিষ্ট সরকারি প্রোটোকল মেনেই রেশন সামগ্রী বিলি করছেন।