রেলমন্ত্রীর পদ থেকে পীযূষ গয়ালকে সরানোর দাবি তুলেছে কংগ্রেস। —ফাইল চিত্র।
মুম্বইয়ের বোইসর থেকে সুরেশ ভগত তাঁর স্ত্রী ও ছোট্ট মেয়ে আক্রুতিকে নিয়ে শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনে চেপেছিলেন। বাড়ি উত্তরপ্রদেশের দেওরিয়া গ্রামে। রুটিরুজির জন্য মুম্বই যেতে হয়েছিল। গোরক্ষপুরের জন্য রওনা হওয়া শ্রমিক স্পেশাল যখন বহু কষ্টে জবলপুরে পৌঁছল, তত ক্ষণে আক্রুতি ট্রেনের মধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
জবলপুরে বাবা-মায়ের সঙ্গে আক্রুতিকে নামিয়ে জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ডাক্তারেরা সুরেশের কন্যাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। আক্রুতির দেহ করোনা পরীক্ষার জন্য মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
শুধু আক্রুতি নয়। শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন চালুর পর ৯ মে থেকে ২৭ মে পর্যন্ত ৮০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আরপিএফ-এর তরফ থেকে এই হিসেব প্রকাশ্যে আসার পরে কংগ্রেস আজ রেলমন্ত্রীর পদ থেকে পীযূষ গয়ালকে সরানোর দাবি তুলেছে।
রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌত বলেন, ‘‘অন্তত ৪০টি শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন দেরিতে পৌঁছেছে। একটি ট্রেন গন্তব্যে পৌঁছতে ৯ দিন সময় নিয়েছে। ট্রেনে ৮০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আমি প্রধানমন্ত্রীকে বলব, পীযূষকে মন্ত্রকবিহীন মন্ত্রী করে রাখা হোক। কারণ তাঁর জমানার আগে রেলের এমন বেহাল দশা শোনা যায়নি। উনি বরং বিজেপির জন্য চাঁদা তোলাতেই মন দিন।’’ কংগ্রেসের জয়রাম রমেশের কটাক্ষ, ‘‘উনি মন্ত্রকবিহীন মন্ত্রী হিসেবেও খারাপ কাজ করবেন।’’
আরও পড়ুন: পরিযায়ীদের কাজের জায়গায় ফেরাতে ট্রেন
সীমিত সংখ্যক বিশেষ ট্রেন ছাড়া যখন অন্য কোনও ট্রেনই চলছে না, তখন কেন দেরিতে পৌঁছচ্ছে ট্রেন? রেল মন্ত্রকের যুক্তি, ৮০ শতাংশ ট্রেনই উত্তরপ্রদেশ-বিহারে যাচ্ছে। রাজ্যগুলি সকাল থেকে দুপুরের মধ্যে ট্রেন ঢোকার অনুমতি দিচ্ছে। ফলে একই সময়ে পরপর ট্রেন সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ছে। শ্রমিকদের এক-একটি বগি থেকে নামিয়ে স্ক্রিনিং করার পরে প্ল্যাটফর্ম থেকে ছাড়া হচ্ছে বলে একটি ট্রেন স্টেশন ছাড়তে দেড় থেকে দু’ঘণ্টা সময় লেগে যাচ্ছে। তবে কোনও ট্রেন ন’দিন পরে গন্তব্যে পৌঁছেছে বলে রেল মন্ত্রক মানতে নারাজ। রেলের যুক্তি, ৩৮৪০টির মধ্যে মাত্র ৪টি ট্রেন ৭২ ঘণ্টার বেশি সময় নিয়েছে।
আরও পড়ুন: মোদী ২-এর বর্ষপূর্তিতে জুটল ফাঁপা ভরসাবার্তা
রেলমন্ত্রীর পদ থেকে পীযূষকে সরানোর দাবি উঠলেও তিনি আজও রাজ্যগুলিকে দোষারোপ করে বলেন, ‘‘অধিকাংশ রাজ্য শ্রমিকদের যত্ন নিয়ে সংগঠিত ভাবে তাঁদের ফেরত যেতে সাহায্য করেছে। কিন্তু কিছু রাজ্যে শ্রমিকেরা ঠিক মতো যত্ন পাননি। ফলে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়তে চেয়েছেন।’’ সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরির পাল্টা অভিযোগ, ‘‘নরেন্দ্র মোদী আচমকা একতরফা চার ঘণ্টার মধ্যে লকডাউন ঘোষণা করে দেওয়ায় শ্রমিকেরা বাড়ি ফেরার সময় পাননি। এখন দায় নেওয়ার বদলে মোদী সরকার সব বোঝা রাজ্যের উপরে চাপাচ্ছে। কোনও দুঃখপ্রকাশও নেই, কোনও অনুশোচনাও নেই।’’
শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন নিয়ে প্রথম থেকেই রেলমন্ত্রীর সঙ্গে বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সংঘাত বেঁধেছিল। রেলমন্ত্রীর দাবি ছিল, তিনি ট্রেন নিয়ে তৈরি। কিন্তু রাজ্যগুলি শ্রমিকদের ফেরত পাঠানোর জন্য ট্রেন চাইছে না। পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যের বিরুদ্ধে আবার রেলমন্ত্রীর অভিযোগ ছিল, তারা ট্রেন রাজ্যে ঢুকতে দিতে চাইছে না। কিন্তু শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন চালুর পরে দেখা গিয়েছে, রেল হয় শ্রমিক, না হলে রাজ্যকে ভাড়া বহন করতে বলছে। ট্রেন ছাড়লেও তা গন্তব্যস্থলের বদলে অন্য জায়গায় পৌঁছে যাচ্ছে। কোনও ট্রেন তিন দিন দেরিতে গন্তব্যে পৌঁছচ্ছে।