ফাইল চিত্র।
রাজ্যে রাজ্যে প্রতিষেধকের ঘাটতি নিয়ে অভিযোগের মুখে টিকার জোগান বাড়াতে মরিয়া কেন্দ্র। সরকারের শীর্ষ সূত্রের খবর, আকাল মেটাতে চলতি বছর জুন থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে আরও পাঁচটি টিকা উৎপাদনকারী সংস্থা ভারতকে প্রতিষেধকের জোগান দেবে। এক সরকারি কর্তার কথায়, ‘‘বর্তমানে দেশে কোভ্যাক্সিন এবং কোভিশিল্ড বাদে অন্য কোনও প্রতিষেধক ব্যবহার হচ্ছে না। জুন থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে আমরা আরও পাঁচটি প্রতিষেধক হাতে পাব বলে আশা করছি। স্পুটনিক ভি, জনসন অ্যান্ড জনসন, নোভাভ্যাক্স, জ়াইডাস ক্যাডিলা-র টিকা ও ভারত বায়োটেকের ইন্ট্রান্যাজ়াল ভ্যাকসিন। এই টিকাগুলিকে ‘নিয়ন্ত্রিত জরুরি প্রয়োগের’ জন্য ছাড়পত্র দেওয়ার আগে সুরক্ষা ও কার্যক্ষমতার দিকটি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখবে কেন্দ্র।’’
সরকারি সূত্রের খবর, কোভিডের যে ২০টি প্রতিষেধক এই মুহূর্তে বিভিন্ন পর্যায়ে পরীক্ষামূলক স্তরে রয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে আগে ছাড়পত্র পাবে স্পুটনিক ভি। তা আগামী দশ দিনের মধ্যেও হতে পারে। সব ঠিক থাকলে জুনের মধ্যে ভারতের বাজারে এসে যাবে স্পুটনিক ভি। অগস্টে আসবে জনসন অ্যান্ড জনসন এবং জ়াইডাস ক্যাডিলা-র প্রতিষেধক, সেপ্টেম্বরের মধ্যে নোভাভ্যাক্স এবং অক্টোবরে ন্যাজ়াল ভ্যাকসিন। এক স্বাস্থ্য কর্তা বলেছেন, ‘‘ভারত যাতে সারা বিশ্বের প্রতিষেধক জোগানের কেন্দ্র হয় এবং দেশের মানুষ জন্য যাতে সর্বোচ্চ মানের প্রতিষেধক পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে, তা নিশ্চিত করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ সরকার। তার জন্য টিকা উৎপাদনকারী সংস্থাগুলিকে সব রকম সহযোগিতার জন্য প্রস্তুত।’’
তবে এই পাঁচ টিকা বাজারে আসার আগে দেশ জুড়ে প্রতিষেধকের হাহাকারে প্রবল সমালোচনার মুখে কেন্দ্র। টিকার অভাবে জায়গায় জায়গায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে টিকাকরণ কেন্দ্র। এই অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উদ্যোগে আজ থেকে শুরু হয়েছে ‘টিকা উৎসব’। চলবে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত। দৈনিক আক্রান্তের রেকর্ড ভেঙে এ দিনই আবার ভারতে ১ লক্ষ ৫২ হাজার ৮৭৯ জন সংক্রমিত হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক। মোদীর বক্তব্য, এই ‘টিকা উৎসব’ কোভিডের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় বড় লড়াইয়ের সূচনা। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘‘প্রত্যেকে অন্য জনকে টিকা দেওয়ানোর দায়িত্ব নিন, চিকিৎসার দায়িত্ব নিন, রক্ষার দায়িত্ব নিন।’’
মোদীর ঘোষণা মতো উত্তরপ্রদেশে, বিহার-সহ বিভিন্ন রাজ্যে চার দিনের এই কর্মসূচির জন্য প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। উত্তরপ্রদেশের ৬ হাজার কেন্দ্রে চলছে ‘টিকা উৎসব’। টিকাকরণ নিয়ে দিনভর ওয়েবিনার করছেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার জানিয়েছেন, ‘টিকা উৎসবে’র এই চার দিনে চার লক্ষ মানুষকে প্রতিষেধক দেওয়া হবে। যদিও পঞ্জাব, রাজস্থান, মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যগুলিতে টিকার জোগান তলানিতে ঠেকার অভিযোগ ‘টিকা উৎসবে’র সাফল্যকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমরেন্দ্র সিংহ জানিয়েছেন, তাঁর রাজ্যে মাত্র পাঁচ দিনের মতো টিকা অবশিষ্ট রয়েছে। রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌতের বক্তব্য, কেন্দ্র টিকা না পাঠালে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তাঁদের হাত প্রায় খালি হয়ে যাবে। একই সুর অরবিন্দ কেজরীবালের গলাতে। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছে, আগামী ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে জোগান শেষ হবে তাঁদেরও। কেন্দ্রের কাছে দিন দুয়েক আগেই টিকার ১০ লক্ষ ডোজ় পাঠানোর আর্জি জানিয়েছিল ঝাড়খণ্ড।
তবে শুধু টিকাকরণই যথেষ্ট মনে না করে কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় নাজেহাল বিভিন্ন রাজ্যে নতুন করে বিধিনিষেধ জারি করছে সরকার। রেস্তরাঁ, থিয়েটার, গণপরিবহণে ভিড় কমানোর নির্দেশের পাশাপাশি বিয়ে বা শ্রাদ্ধের মতো অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রিতের সংখ্যা কমানোর কথা বলেছে দিল্লি সরকার। নবরাত্রি উপলক্ষে ধর্মস্থানে পাঁচ জনের বেশি ভিড় করা যাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে উত্তরপ্রদেশ সরকারও।
করোনা রুখতে কেন্দ্রের ব্যর্থতা নিয়ে আজও মোদীকে বিঁধেছেন রাহুল গাঁধী। কংগ্রেস নেতার টুইট, ‘‘করোনা কাবু হচ্ছে না, টিকার অভাব, চাকরি নেই, কৃষক-শ্রমিকদের দুর্দশার দিকে নজর নেই, ক্ষুদ্র,মাঝারি উদ্যোগ সুরক্ষিত নয়, মধ্যবিত্ত সন্তুষ্ট নয়।’’
কোভিড পরিস্থিতিতে সিবিএসই বোর্ডের দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে গত কয়েক সপ্তাহ যাবৎ বিভিন্ন সমাজমাধ্যমে সরব পড়ুয়ারা। আজ তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছেন প্রিয়ঙ্কা গাঁধীও। শিক্ষামন্ত্রীকে এক চিঠিতে কংগ্রেস নেত্রী লিখেছেন, ‘‘পরীক্ষার্থীদের সম্পূর্ণ সুরক্ষা দেওয়া কার্যত অসম্ভব।...যদি কোনও পরীক্ষাকেন্দ্র করোনা হটস্পট হয়ে যায় তবে তার জন্য সরকার ও বোর্ড দায়ী থাকবে।’’