National News

করোনার জেরে বিশেষ সতর্কতা রেলের খাবারেও

আইআরসিটিসি-র দেওয়া নির্দেশ অনুসারে যে-কোনও ধরনের খাবার যাত্রীদের পরিবেশনের সময় হাত ধোয়ার স্যানিটাইজ়ারের স্যাশে দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

Advertisement

ফিরোজ ইসলাম

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০২০ ০৩:৪৬
Share:

ছবি: সংগৃহীত।

আকাশপথের পাশাপাশি রেলেও করোনা-সচেতনতার প্রচার ও অনুশীলন শুরু হয়েছে পুরোদমে। ওই মারণ রোগের সংক্রমণের আশঙ্কা ঠেকাতে ট্রেনযাত্রীদের জন্য খাবার তৈরিতে তো বটেই, তা পরিবেশনে ক্ষেত্রেও বিশেষ ভাবে সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছেন ইন্ডিয়ান রেলওয়ে কেটারিং অ্যান্ড টুরিজ়ম কর্পোরেশন বা আইআরসিটিসি-কর্তৃপক্ষ। বিশেষ ভাবে জোর দেওয়া হয়েছে খাবারের উপকরণ ও রাঁধার প্রক্রিয়া পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা এবং গরম খাবার পরিবেশনের উপরে।

Advertisement

আইআরসিটিসি-র দেওয়া নির্দেশ অনুসারে যে-কোনও ধরনের খাবার যাত্রীদের পরিবেশনের সময় হাত ধোয়ার স্যানিটাইজ়ারের স্যাশে দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বলা হয়েছে, খাবার তৈরি এবং তা পরিবেশনের দায়িত্বে থাকা সব কেটারিং ইউনিটের কর্মীদের কঠোর ভাবে এই নির্দেশ মেনে চলতে হবে।

‘বেস কিচেন’ বা মূল রান্নাঘরে এবং চলন্ত ট্রেনে যাঁরা খাবার পরিবেশন ও খাবার তৈরির সঙ্গে যুক্ত, তাঁদের মুখে মাস্ক এবং হাতে দস্তানা ব্যবহার আবশ্যিক করা হয়েছে। খাবার যাতে কোনও ভাবেই দূষিত হয়ে না-যায়, তা দেখতে বলা হয়েছে বিশেষ ভাবে। কাঁচামাল এবং রান্না করা খাবার সম্পূর্ণ আলাদা ভাবে রাখতে হবে। যে-কোনও কাঁচামাল ব্যবহারের আগে ভাল করে পরিষ্কার করে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে সেখান থেকে কোনও ভাবেই কোনও রকম সংক্রমণ ছাড়াতে না-পারে।

Advertisement

চার নির্দেশিকা

• ‘বেস কিচেনের’ কর্মী ও ট্রেনে খাবার পরিবেশকদের মাস্ক ও দস্তানা ব্যবহার আবশ্যিক। ঘনঘন হাত ধুতে হবে তাঁদের। জ্বর, কাশি বা ঠান্ডা লাগলে সংশ্লিষ্ট কর্মীকে কাজে লাগানো যাবে না।
• কাঁচামাল ও রান্না করা খাবার আলাদা রাখতে হবে। ব্যবহারের আগে কাঁচামাল ভাল করে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
• উপযুক্ত তাপমাত্রায় খাবার সংরক্ষণ করতে হবে। গরম গরম খাবার দিতে হবে যাত্রীদের।
• খাবার পরিবেশনের সময় যাত্রীদের হাত ধোয়ার স্যানিটাইজ়ারের স্যাশে দেওয়া বাধ্যতামূলক।

খাবার তৈরি এবং পরিবেশনের কাজের সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের স্বাস্থ্য এবং পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে কঠোর ভাবে সচেতন থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে আইআরসিটিসি-র নতুন নির্দেশিকায়। ঘনঘন হাত ধুতে বলা হয়েছে ওই সব কর্মীকে। যে-সব কর্মী জ্বর, কাশি বা ঠান্ডা লাগার মতো অসুস্থতায় ভুগছেন, তাঁদের দিয়ে কাজ করাতে বারণ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: ভারতে করোনায় আক্রান্ত আরও পাঁচ জন

উপযুক্ত তাপমাত্রায় খাবার সংরক্ষণের পাশাপাশি যাত্রীদের খাবার দেওয়ার সময় তা গরম গরম পরিবেশন করতে বলেছে আইআরসিটিসি। করোনাভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কা ঠেকাতে রেল বোর্ড যে-সব সতর্কতা অবলম্বন করতে বলেছে, সেই অনুসারেই এই নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে বলে জানান আইআরসিটিসি-কর্তারা।

করোনা-যুদ্ধ

রোগের লক্ষণ
ভাইরাস সংক্রমণের পরে ২ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে উপসর্গ দেখা দেয়
• প্রথমে হাঁচি, সর্দি, শুকনো কাশি, গলা ব্যথা, জ্বর, শ্বাস নিতে কষ্ট
• জটিলতা বেড়ে নিউমোনিয়া, প্রবল শ্বাসকষ্ট (অ্যাকিউট রেসপিরাটরি ডিসট্রেস সিন্ড্রোম), কিডনি কাজ করা বন্ধ করে দেয়

রোগ প্রতিরোধে

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকা অনুযায়ী—
• অ্যালকোহল রয়েছে এমন সাবান ও জল দিয়ে দিনে বেশ
কয়েক বার করে হাত ধুয়ে নিন।
• হাঁচিকাশি হলে রুমাল দিয়ে মুখ ঢাকুন।
• যে কোনও ধরনের জমায়েত এড়িয়ে চুলন। সর্দিকাশি হয়েছে এমন লোকজনকে এড়িয়ে চলুন। সামনে গেলেও অন্তত ১ মিটার দূরত্ব বজায় রাখুন।
• মুখে বেশি হাত দেবেন না। চোখ-নাক-মুখ দিয়ে ভাইরাস প্রবেশ করতে পারে শরীরে। হাতের পাতায়
ভাইরাস থাকলে, মুখে হাত দিলে সংক্রমণ ঘটতে পারে।

যদি আপনি করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঘটেছে এমন এলাকায় বাস করেন বা সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে গিয়ে থাকেন, অবশ্য কর্তব্য—
• স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে চলুন
• সামান্য সর্দিকাশি বা মাথা যন্ত্রণা হলে, সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত বাড়িতে থাকুন।
• জ্বর এলে বা শ্বাসকষ্ট হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
• সাম্প্রতিক কালে কোথাও বেড়াতে গিয়ে থাকলে, তা চিকিৎসককে জানান।
• সম্প্রতি কোনও করোনাভাইরাস-আক্রান্তের সংস্পর্শে এসে থাকলে, তা-ও জানান চিকিৎসককে।
• অসুস্থ না হলে বা কোনও অসুস্থ রোগীর সংস্পর্শে না এলে মাস্ক পরার দরকার নেই।
• অবশ্যই ভুয়ো খবর থেকে দূরে থাকুন। প্রয়োজনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ওয়েবসাইট থেকে খবর নিন। ভুল খবর অত্যন্ত বিপজ্জনক।

এর আগে, বার্ড ফ্লু সংক্রমণের সময় রেলের খাবার-তালিকা থেকে সাময়িক ভাবে চিকেন বাদ দেওয়া হয়েছিল। তবে এ বার করোনা সংক্রমণের আশঙ্কার মধ্যে তড়িঘড়ি মেনু বদলের পথে হাঁটছে না রেল। আপাতত সতর্কতার অস্ত্রেই পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে চাইছে তারা। দীর্ঘ পথে ট্রেনযাত্রার সময় সংক্রমণ এড়াতে মাস্ক এবং দস্তানা ব্যবহার ছাড়াও ঘনঘন হাত ধোয়ার উপরে বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement