—ফাইল চিত্র।
দেশের কোনও কোনও অংশে কোভিড ১৯ সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ (সেকেন্ড ওয়েভ) শুরু হয়েছে বলে সম্প্রতি জানিয়েছে অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস। সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, ভারতের মতো বিপুল জনসংখ্যার দেশে কোভিড সংক্রমণের ঢেউ দ্বিতীয় বারেই সীমাবদ্ধ থাকবে, নাকি আরও একাধিক ঢেউ আসবে, তা নিশ্চিত হতে আরও কিছুটা সময় দরকার। তাঁদের মতে, দ্বিতীয় ঢেউ অনিবার্যই ছিল, কত দিন এই ঢেউ থাকে সেটাই তাৎপর্যপূর্ণ।
বিশ্বের অনেক দেশেই সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের পরে কোভিড-রেখচিত্র নিম্নগামী হয়েছে। ভারতের ক্ষেত্রে তেমনটা নাও হতে পারে। তার কারণ ব্যাখ্যা করে গবেষকেরা জানাচ্ছেন, ভারতে প্রথম ঢেউয়ের ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, দেশের বিভিন্ন অংশে বিচ্ছিন্ন ভাবে একাধিক বার (মাল্টিপল পিক) সর্বোচ্চ সংক্রমণ ঘটছে। দ্বিতীয় ঢেউয়ের ক্ষেত্রেও তেমন হওয়ারই আশঙ্কা বেশি। ‘দ্য সেন্টার ফর ডিজ়িজ়, ডায়নামিক্স, ইকনমিক্স অ্যান্ড পলিসি’-র ডিরেক্টর রামানন লক্ষ্মীনারায়ণের মতে, ‘‘এই সংক্রমণ এখনও যেমন সর্বত্র সমান ভাবে হচ্ছে না, আগামী দিনেও হবে না।’’ অর্থাৎ, দ্বিতীয় ঢেউয়ের ক্ষেত্রেও বিভিন্ন অংশে একাধিক বার সর্বোচ্চ সংক্রমণেরই আশঙ্কা করছেন তাঁরা।
দ্বিতীয় ঢেউয়েও কি থামবে সংক্রমণ? মনে হয় না! বলছেন গবেষকেরা। কারণ, ভারতের জনসংখ্যার প্রায় ৯৮ শতাংশই সংক্রমণপ্রবণ। ফলে হতেই পারে যে দ্বিতীয় ঢেউ কোনও জায়গায় শেষ হওয়ার পরে সেখানে তৃতীয় ঢেউ শুরু হল। বেলেঘাটা আইডি-র সংক্রামক রোগ চিকিৎসক যোগীরাজ রায় বলেন, ‘‘দ্বিতীয় ঢেউ তো এসেছেই। আরও ঢেউ আসতে পারে। এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল তাকে নিয়ন্ত্রণ করার পথ বার করা।’’
কী ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে, তার ব্যাখ্যা দিয়ে গবেষকেরা জানাচ্ছেন, যে কোনও সংক্রমণের ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, তা কমার মুখে মানুষ যখনই অসতর্ক হয়েছেন, তখনই নতুন করে সংক্রমণ ছড়িয়েছে। স্প্যানিশ ফ্লু-র সময় থেকে এটাই ঘটে আসছে। যত ক্ষণ না কোভিড-রেখচিত্র সমান্তরাল হয় তত ক্ষণ মাস্ক পরা, হাত ধোয়া, দূরত্ব-বিধি মেনে যেতে হবে। চণ্ডীগড়ের ‘পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ’-এর (পিজিআইএমইআর) প্রাক্তন ডিরেক্টর যোগেশ চাওলা বলেন, ‘‘সংক্রমণ বাড়ছে কী কমছে, তা না ভেবে যদি মাস্কটা অন্তত ঠিক করে পরা যায়, তা হলেই সংক্রমণ অনেকটা রোধ করা যাবে। আগে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।’’
তবে অনেকের আবার মত, দ্বিতীয় ঢেউ এলেও তা কয়েকটি জায়গাতেই সীমাবদ্ধ থাকবে। চণ্ডীগড়ের পিজিআইএমইআর-এর এমেরিটাস প্রফেসর সুরিন্দর কুমার জিন্দালের কথায়, ‘‘এলাকার ভৌগোলিক অবস্থান বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে যে, বদ্ধ, ঘিঞ্জি জায়গায় বা কোনও রাজ্যের নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ এসেছে। জায়গাগুলি চিহ্নিত করে সংক্রমণকে সীমাবদ্ধ করতে পারলে এর গতি অনেকটাই থামানো যাবে।’’