প্রতীকী ছবি।
প্রতি দিন করোনা সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। আতঙ্ক ছড়াচ্ছে গোষ্ঠী সংক্রমণেরও। এই পরিস্থিতিতেও করোনা সংক্রমণের পরীক্ষা নীতি অপরিবর্তিত রাখার কথাই আজ জানিয়ে দিল ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)। শুরু থেকেই অভিযোগ উঠেছে, সংক্রমিত রোগী চিহ্নিত করার প্রশ্নে রক্ষণশীল মনোভাব নিয়ে চলছে মোদী সরকার। সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশ যেখানে করোনা আক্রান্তের খবর আসা মাত্রই বিপুল সংখ্যক লোকের পরীক্ষা করেছে, সেখানে ভারত সম্পূর্ণ উল্টো পথে হাঁটছে। আইসিএমআর-এর এপিডেমিওলজি এবং কমিউনিকেবল ডিজিজ শাখার প্রধান রমন গঙ্গাখেদকর বলেন, পরীক্ষা করার নীতি বেঁধে দেওয়া হয়েছে। সেই নিয়ম মেনেই চলা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, দেশে ইতিমধ্যেই গোষ্ঠী সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। যে-হেতু অধিকাংশ ক্ষেত্রে রোগের উপসর্গ একেবারে শেষ পর্যায়ে দেখা যায়, তাই উপসর্গহীন ব্যক্তিরা নিজের অজান্তেই আশেপাশের লোকের মধ্যে ওই ভাইরাস ছড়িয়ে দেন। সে কারণে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের মধ্যে থেকে নমুনা সংগ্রহ করে ওই রোগ কতটা ছড়িয়েছে, তা নির্ণয় করা উচিত। এটা না করায় আগামী লড়াইটা কঠিন হয়ে পড়ছে বলেই মনে করছেন তাঁরা। ভেলোরের ক্রিশ্চান মেডিক্যাল কলেজের কমিউনিটি মেডিসিনের চিকিৎসক জেকব জনের মতে, শুরুর দিকে কেবল বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের পরীক্ষা করা হয়েছে। এই নীতি কতটা ঠিক, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তাঁর মতে, জনগোষ্ঠীর নমুনা সংগ্রহ না-করায় আগামী দিনে রোগীর সংখ্যা এক ধাক্কায় বেড়ে যাবে। বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, দক্ষিণ কোরিয়া যে ভাবে প্রথমে
যাকে-তাকে পরীক্ষা ও পরবর্তী ধাপে সংক্রমিত ব্যক্তিকে আইসোলেশনে পাঠানোর নীতি নিয়ে সাফল্য পেয়েছে, সেই সুযোগ ভারত হারিয়েছে। যার খেসারত দিতে হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পাল্টা যুক্তি, দক্ষিণ কোরিয়া বা সিঙ্গাপুরের মতো দেশগুলির আকার ভারতের এক-একটি রাজ্যের সমান। আকারে ছোট হওয়ায় নিয়ম রূপায়ণে সমস্যাও কম। গঙ্গাখেদকরের বক্তব্য, ভারতে বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের মাধ্যমে ওই রোগ ছড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতে গোটা দেশ লকডাউন করা ছা়ড়া উপায় ছিল না। কিন্তু তাতে কতটা লাভ হয়েছে? স্বাস্থ্য মন্ত্রকের যুগ্মসচিব লব আগরওয়ালের জবাব, করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে যে রণকৌশল নেওয়া হয়েছে তাতে আশা করা যায়, ভবিষ্যতে লাভ হবে।
অভিযোগ উঠেছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রকের কাছে যথেষ্ট সংখ্যক পরীক্ষা কিট না থাকায় এ ভাবে মেপে পরীক্ষার পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। কেন্দ্র কম সংখ্যক কিটের অভিযোগ খারিজ করেছে। লব জানান, দেশে পর্যাপ্ত কিট রয়েছে। আমেরিকার কাছ থেকে ৫ লক্ষ কিট এসে গিয়েছে। এক লক্ষ কিট বিভিন্ন ল্যাবরেটরিতে রয়েছে। আরও পাঁচ লক্ষ হু-এর কাছে চাওয়া হয়েছে। দেশেও কিট বানানোর কাজ শুরু হয়েছে পুরোদমে। পরীক্ষার প্রশ্নে সরকারের পাশাপাশি এগিয়ে এসেছে একাধিক বেসরকারি সংস্থা। স্বাস্থ্য মন্ত্রক চাইছে, পরীক্ষা হোক সরকারের নজরদারিতে। গঙ্গাখেদকরের মতে, বিষয়টির সঙ্গে সামাজিক বহিষ্কারের ভয় জড়িত। বেসরকারি পরীক্ষাকেন্দ্রে কারও সংক্রমণ ধরা পড়লে তিনি তা চেপে যেতে পারেন। এতে হিতে-বিপরীত হওয়ার আশঙ্কা বেশি।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)