বাইরে ‘অকাল দীপাবলি’! দিল্লির অস্থায়ী শিবিরে তখন পরিযায়ী শ্রমিকদের পরিবার। ছবি: প্রেম সিংহ
মার্চের ২২ তারিখ যে অবস্থাটা ছিল, তার থেকে তিন গুণ ছড়িয়ে পড়েছে রোগটা। সরকারি হিসেবে, দেশের ২৭৪টি জেলায় এর প্রকোপ ধরা পড়েছে। কোভিড-১৯-এর আগ্রাসন রুখতে দেশকে এ বার ছোট ছোট এলাকাভিত্তিক গণ্ডিতে বেঁধে ফেলার কৌশল নিয়েছে সরকার। এই ভৌগোলিক ক্ষেত্রীয় বিভাজনের উদ্দেশ্য, যেখানে রোগটা ছড়িয়েছে, সেখানে থেকে রোগটা যেন কোনও মতেই অন্য এলাকায় পৌঁছতে না পারে। যাতে নোভেল করোনাভাইরাসের বিস্তারের শৃঙ্খলটা ভাঙা যায়।
সেই লক্ষ্যে ক্যাবিনেট সচিব রাজীব গৌবা আজ দেশের সব জেলাশাসক, পুলিশ সুপার, রাজ্যগুলির স্বাস্থ্যসচিবদের নিয়ে এক ভিডিয়ো বৈঠক করেন। রোগের প্রাদুর্ভাব যে সব এলাকায় সবচেয়ে বেশি, সেখানকার প্রশাসনিক কর্তারা তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা জানান। এই জেলাগুলির মধ্যে রয়েছে, ভিলওয়ারা, আগরা, গৌতম বুদ্ধ নগর, পূর্ব দিল্লি ও বৃহন্মুম্বই পুরসভা।
স্থির হয়েছে, গোটা দেশকে দু’ধরনের জ়োন বা ক্ষেত্রে ভাগ করে লড়াই চালানো হবে। গণ্ডিবদ্ধ এক-একটি ক্ষেত্রকে বলা হচ্ছে ক্লাস্টার। একটি হচ্ছে কন্টেনমেন্ট জ়োন, যেখানে রোগটা বেশি ছড়িয়েছে বা বড় জমায়েতের কারণে রোগ ছড়ানোর আশঙ্কা বেশি। দুই, বাফার জ়োন, যেখানে রোগ ছড়ায়নি। এই দুই ধরনের জ়োনের মধ্যে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে দ্বিতীয় অংশকে বাঁচানো এবং প্রথম ধরনের জ়োনে কঠোর রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থা কায়েম করা।
আরও পড়ুন: পিপিই ব্যবহারেও ‘রেশন’ চাইছে কেন্দ্র
বলা হচ্ছে, কোভিড-১৯ মোকাবিলায় সরকার ‘প্রো-অ্যাকটিভ, কঠোর ও অনমনীয়’ হতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। প্রতিটি গণ্ডিবদ্ধ এলাকায় কাজ হবে পঞ্চমুখী। এক, প্রতিটি ভৌগোলিক গণ্ডিকে বিচ্ছিন্ন রাখা। দুই, সামাজিক সংসর্গ থেকে দূরে থাকার বিষয়টি কঠোর ভাবে পালন করা। তিন, অনেক বেশি ও নিরন্তর নজরদারি। চার, প্রয়োজন বুঝলেই কোয়রান্টিন বা চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। পাঁচ, সংক্রমণের প্রকৃত ছবিটা জানতে সরকার খুব শীঘ্রই ব্যাপক হারে ‘র্যাপিড অ্যান্টিবডি টেস্ট’ শুরু করতে চলেছে।
আন্তর্জাতিক সীমান্ত বা আন্তঃরাজ্য সীমানা যেমন সিল করা হয়েছে তেমনই এক-একটি ছোট এলাকা বা ক্লাস্টারের সীমাও কার্যত সিল করা হবে। অত্যাবশ্যক পরিষেবায় যুক্তরা বাদে আর সকলের ক্ষেত্রে যেখান থেকে বেরনো বা ঢোকা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রিত হবে। বন্ধ থাকবে সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের যান চলাচল, স্কুল-কলেজ ও দফতর। বাড়ি বাড়ি চলবে সমীক্ষা। কারও উপসর্গ দেখা দিলে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অন্তত চার সপ্তাহ কারও করোনা-টেস্ট পজ়িটিভ না-পেলে, তবেই সেই ক্লাস্টারকে নিরাপদ গণ্য করা হবে। তার আগে রোগ-নিয়ন্ত্রণের কঠোর ব্যবস্থাগুলি শিথিল করা হবে না বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ২০ পাতার এক নথিতে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ওই নথিতে আরও একগুচ্ছ পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে। যেমন, কোভিড-১৯ ধরা পড়েছে বা হয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে, এমন সকলকে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা করাতে হবে। পরপর দু’টি পরীক্ষায় ফল নেগেটিভ এলে, তবেই কোনও রোগীকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া যাবে। যাঁদের সামান্য উপসর্গ দেখা দেবে, স্টেডিয়ামগুলিতে তাঁদের কোয়রান্টিনে রাখা হবে। উপসর্গের মাত্রা মাঝারি হলে কোভিড-১৯ চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত হাসপাতালগুলিতে ভর্তি করা হবে। উপসর্গ তীব্র হলে উন্নততর বিশেষ হাসপাতালে নেওয়া হবে।
কোভিড-১৯ ছাড়ানোর ধরনটা অনেকটা এইচ১এন১ ইনফ্লুয়েঞ্জা অতিমারির মতোই। প্রচুর মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লেও, গোটা দেশের সব অংশে এটা সমহারে ছড়াবে, এমনটা হয়তো ঘটবে না এ ক্ষেত্রেও। এই কারণেই দু’ধরনের ক্লাস্টারের জন্য দু’রকম ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এতে রোগের কেন্দ্র হয়ে ওঠা এলাকায় বেশি নজর দেওয়া যাবে। এর জন্য সরকার দ্রুত একটি ‘সঙ্কট মোকাবিলা পরিকল্পনা’ ঘোষণা করতে চলেছে।
রাজীব গৌবার ভিডিয়ো বেঠকে বিভিন্ন জেলার প্রশাসনিক কর্তারা জানান, কোরানা-রোগীর চিকিৎসার জন্য কোথায় কেমন হাসপাতাল রয়েছে। কী ভাবে বেসরকারি ক্ষেত্রকে যুক্ত করে বিভিন্ন হাসপাতালে আইসোলেশন ওয়ার্ড তৈরি করা হয়েছে, হোটেল-হস্টেল-লজকে বানানো হয়েছে নিভৃতবাস।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)