manmohan singh

টিকাকরণকে প্রাধান্য দিন, চাই আরও স্বচ্ছতা, মোদীকে পরামর্শ দিয়ে চিঠি দিলেন মনমোহন সিংহ

নিজের দেশের করোনা রোগীদের প্রাধান্য না দিয়ে বিদেশে প্রতিষেধক পাঠানো নিয়ে এর আগে কেন্দ্রকে আক্রমণ করেছিলেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গাঁধী। তা নিয়ে মোদীকে চিঠিও দিয়েছিলেন তিনি।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০২১ ১৮:৩২
Share:

মোদীকে চিঠি মনমোহনের। —ফাইল চিত্র।

প্রতি দিন হু হু করে বেড়ে চলেছে করোনা সংক্রমণ। তার মধ্যেই টিকাকরণে শৈথিল্যের অভিযোগ উঠছে। প্রতিষেধকের জোগান নেই বলে অভিযোগ করছে একাধিক রাজ্য। এমন পরিস্থিতিতে টিকাকরণে জোর দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখলেন তাঁর পূর্বসূরি মনমোহন সিংহ। সুসংহত পদ্ধতিতে রাজ্যগুলির মধ্যে প্রতিষেধক বণ্টনের আর্জি জানিয়েছেন তিনি। আগামী ছ’মাসের মধ্যে কোন সংস্থার কাছ থেকে কত সংখ্যক প্রতিষেধক পাওয়া যাবে, কোন সংস্থাকে কত প্রতিষেধকের বরাত দেওয়া হয়েছে, সেই সমস্ত তথ্য জনসমক্ষে আনার আর্জিও জানিয়েছেন।

Advertisement

নিজের দেশের করোনা রোগীদের প্রাধান্য না দিয়ে বিদেশে প্রতিষেধক পাঠানো নিয়ে এর আগে কেন্দ্রকে আক্রমণ করেছিলেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গাঁধী। তা নিয়ে মোদীকে চিঠিও দিয়েছিলেন তিনি। যদিও প্রতিষেধকে ঘাটতির অভিযোগ স্বীকার করেনি কেন্দ্র। তার মধ্যেই রবিবার দেশে নতুন করে ২ লক্ষ ৬১ হাজার ৫০০ মানুষ নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন। তাতে সংক্রমণের নিরিখে বিশ্বতালিকায় আমেরিকার পরই দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে ভারত। মৃত্যুর নিরিখেও ব্রিটেনকে ছাপিয়ে চলে এসেছে চতুর্থ স্থানে।

এমন পরিস্থিতিতে রবিবার মোদীকে চিঠি লেখেন মনমোহন। তাতে লেখেন, ‘এক বছরেরও বেশি সময় ধরে অতিমারির সঙ্গে যুঝছে ভারত। অন্য শহরে থাকায় কত বাবা-মা সন্তানের মুখ দেখেননি। কত দাদু-দিদা তাঁদের নাতি-নাতনিকে দেখেননি। শ্রেণিকক্ষে পড়ুয়াদের দেখতে পাননি শিক্ষক-শিক্ষিকারা। বহু মানুষ জীবিকা হারিয়েছেন। লক্ষ লক্ষ মানুষকে গ্রাস করেছে দারিদ্র...তা নিয়ে অনেক কিছু করার থাকলেও, এই মুহূর্তে টিকাকরণকেই প্রাধান্য দেওয়া উচিত আমাদের’।

Advertisement

তবে এখানেই থামেননি মনমোহন। দেশবাসীকে সার্বিক ভাবে টিকাকরণের আওতায় আনতে মোদীকে পাঁচটি পরামর্শ দিয়েছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। যেগুলি হল—

১। সবার আগে আগামী ছ’মাসের পরিকল্পনা জনসমক্ষে আনতে হবে সরকারকে। জানাতে হবে, প্রতিষেধক উৎপাদনকারী কোন সংস্থাকে কত বরাত দেওয়া হয়েছে এবং কাদের প্রতিষেধক টিকাকরণে ব্যবহারের জন্য গৃহীত হয়েছে। আগামী ছ’মাসে কত সংখ্যক মানুষকে প্রতিষেধক দেওয়া হবে, তার লক্ষ্যমাত্রা যদি থাকে, তা হলে আগেভাগে বরাত দিয়ে রাখতে হবে, যাতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সেগুলি সরবরাহ করতে পারে ওই সব সংস্থা।

২। সুষ্ঠু এবং সুসংহত পদ্ধতিতে কী ভাবে রাজ্যগুলির মধ্যে ওই প্রতিষেধক বিতরণ করা হবে, সে সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা দিতে হবে। জরুরি পরিস্থিতিতে ব্যবহারের জন্য মোট সরবরাহের ১০ শতাংশ সরিয়ে রাখতে পারে সরকার। তার বাইরে ঠিক কত প্রতিষেধক তাদের হাতে দেওয়া হবে, তা রাজ্যগুলিকে জানাতে হবে, যাতে সেই মতো ব্যবস্থা করে রাখতে পারে তারা।

৩। টিকাকরণের ক্ষেত্রে রাজ্যগুলিকে স্বাধীনতা দেওয়া প্রয়োজন, যাতে ৪৫-এর নীচে বয়স হলেও জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের মধ্যে কাদের প্রাধান্য দেওয়া উচিত, তা ঠিক করা যায়। কারণ বয়স ৪৫ না পেরোলেও কোনও রাজ্যের সরকার সবার আগে শিক্ষক-শিক্ষিকা, বাসচালক, অটোচালক, ট্যাক্সিচালক, পুরসভা ও পঞ্চায়েত কর্মী এবং প্রয়োজনে আইনজীবীদের জরুরি পরিষেবার অন্তর্ভুক্ত করে আগে টিকা দিতে পারে।

৪। গত কয়েক দশকে বিশ্বের মধ্যে অন্যতম বৃহত্তম প্রতিষেধক প্রস্তুতকারী দেশ হিসেবে উঠে এসেছে ভারত। সরকারি নীতি এবং মেধাস্বত্বে সুরক্ষা থাকাতেই তা সম্ভব হয়েছে। এ ব্যাপারে বেসরকারি ক্ষেত্র বেশি ক্ষমতাশালী হলেও, এই আপৎকালীন পরিস্থিতিতে প্রতিষেকের উৎপাদন বাড়াতে প্রয়োজনীয় আর্থিক সাহায্য এবং ছাড় দিতে এগিয়ে আসতে হবে সরকারকে। প্রতিষেধক তৈরির জন্য লাইসেন্সও বাধ্যতামূলক করা দরকার, এইচআইভি-এডসের সময় যেমনটি হয়েছিল। ইজরায়েল ইতিমধ্যেই লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করেছে। ভারতে যে হারে সংক্রমণ বেড়ে চলেছে, তাতে এখানেও অতি শীঘ্র তা চালু হওয়া প্রয়োজন।

৫। এই মুহূর্তে অভ্যন্তরীণ জোগান যেহেতু সীমিত, তাই ইউরোপীয়ান মেডিক্যাল এজেন্সি এবং আমেরিকার খাদ্য ও ঔষধি বিভাগের মতো বিশ্বস্ত সংগঠনের ছাড়পত্র পাওয়া প্রতিষেধক পাওয়া গেলে, তা-ই আমদানি করার পক্ষে সওয়াল করছেন বিশেষজ্ঞরা। এ ক্ষেত্রে আলাদা করে দেশে ট্রায়ালের জন্য জোর না দেওয়াই শ্রেয় বলে মনে করছেন তাঁরা। জরুরি পরিস্থিতিতে তাঁদের এই যুক্তি অবান্তর নয়। তবে তা বেশি দিনের জন্য হতে দেওয়া চলবে না। অল্পদিনের মধ্যেই ভারতে ট্রায়ালের ব্যবস্থা করতে হবে। কোন সংগঠনের ছাড়পত্রের ভিত্তিতে প্রতিষেধক দেওয়া হচ্ছে, তা টিকাপ্রাপকদেরও জানাতে হবে।

টিকাকরণের বর্তমান পদ্ধতি নিয়েও আলাদা করে আপত্তি জানিয়েছেন মনমোহন। তাঁর মতে, কত সংখ্যক মানুষকে প্রতিষেধক দেওয়া হল, তা নিয়ে মাতামাতি না করে দেশের মোট জনসংখ্যার কত শতাংশকে টিকাকরণের আওতায় আনা গেল, তার উপর জোর দিতে হবে সরকারকে। কারণ এখনও পর্যন্ত জনসংখ্যার একটি সামান্য অংশই প্রতিষেধক পেয়েছেন। সঠিক রূপরেখা মেনে চললে দ্রুতই অসাধ্যসাধন হবে বলে মন্তব্য করেছেন মনমোহন। গঠনমূলক পদ্ধতিতে পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতেই কাজ করে এসেছেন তিনি। এ ক্ষেত্রেও তার অন্যথা হবে না বলেও আশা প্রকাশ করেন মনমোহন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement