Covishield

কোভিশিল্ডে ছাড়পত্র কি আগামী সপ্তাহেই

ভারতে কোভিশিল্ডের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ ও উৎপাদনের দায়িত্বে রয়েছে পুণের সিরাম ইনস্টিটিউট।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০২০ ০৪:০৬
Share:

—প্রতীকী ছবি

ব্রিটেন ও আমেরিকায় শুরু হয়ে গিয়েছে টিকাকরণ অভিযান। ভারতে কবে শুরু হবে— জল্পনা সব মহলে। এই আবহে কেন্দ্রীয় সরকারের একটি সূত্রে জানানো হয়েছে, সব ঠিক থাকলে আগামী সপ্তাহেই জরুরি ব্যবহারের প্রশ্নে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যাস্ট্রাজেনেকা সংস্থার তৈরি কোভিশিল্ড টিকাকে ছাড়পত্র দেওয়া হতে পারে।

Advertisement

ভারতে কোভিশিল্ডের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ ও উৎপাদনের দায়িত্বে রয়েছে পুণের সিরাম ইনস্টিটিউট। সূত্রের মতে, আগামী সপ্তাহেই সিরামকে জরুরি ভিত্তিতে কোভিশিল্ড টিকা ব্যবহারের প্রশ্নে ছাড়পত্র দেওয়ার বিষয়ে ভাবা হচ্ছে। যা দেখে অনেকেই মনে করছেন, ব্রিটেনে ছাড়পত্র পাওয়ার আগেই হয়তো ভারতে ছাড়পত্র পেতে চলেছে অক্সফোর্ডের টিকা।

চলতি মাসের গোড়ায় ফাইজ়ার, সিরাম ও ভারত বায়োটেক জরুরি ভিত্তিতে টিকা ব্যবহারের জন্য অনুমতি চায় কেন্দ্রের কাছে। সেন্ট্রাল ড্রাগস স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজ়েশন (সিডিএসসিও)-এর বিশেষজ্ঞ কমিটি ওই তিনটি সংস্থাকেই মানবশরীরে প্রয়োগ সংক্রান্ত আরও

Advertisement

তথ্য জমা দিতে নির্দেশ দেয়। টিকা সংক্রান্ত কেন্দ্রের বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রধান ভি কে পল বলেন, “মূলত ওই তিনটি প্রতিষেধক কতটা সুরক্ষিত ও কার্যকরী, সেই সংক্রান্ত তথ্য জমা দিতে বলা হয়েছিল। যাদের মধ্যে একমাত্র সিরামই এখনও পর্যন্ত তা জমা দিয়েছে।’’ যে কোনও ওষুধ বা প্রতিষেধকে ছাড়পত্র দেওয়ার প্রশ্নে এ দেশে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয় ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল অব ইন্ডিয়া (ডিসিজিআই)। তাদের মতে, যদি সিরামের জমা দেওয়া তথ্য যথাযথ বলে মনে হয়, সে ক্ষেত্রে সিরাম সংস্থাকে কোভিশিল্ড প্রতিষেধক জরুরি ভিত্তিতে ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হবে।

আরও পড়ুন: ফিউচারকে নিয়ন্ত্রণে অ্যামাজনের প্রচেষ্টা আইন ভাঙার শামিল: আদালত

আরও পড়ুন: ফের কমল সংক্রমণের হার, আশঙ্কা জাগাচ্ছে কলকাতায় দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা

যদিও ৯ ডিসেম্বরের বৈঠকে বিশেষজ্ঞ কমিটি ব্রিটেন সরকার কোভিশিল্ডকে ছাড়পত্র দেয় কি না, নীতিগত ভাবে তা দেখে নেওয়ার পক্ষপাতী ছিল। কিন্তু গত সোমবার সিরামের পক্ষ থেকে ব্রিটেন ও ব্রাজিলে চলা তৃতীয় দফার পরীক্ষামূলক প্রয়োগের ফলাফল জমা দেওয়ার পরে অবস্থান পরিবর্তন করে বিশেষজ্ঞ কমিটি। তারা এখন ভারতের বাইরে হওয়া তৃতীয় দফার পরীক্ষামূলক প্রয়োগের চূড়ান্ত ফলাফল দেখেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পক্ষপাতী।

একই সঙ্গে ভারতেও তৃতীয় দফায় প্রায় হাজার জনের উপরে কোভিশিল্ডের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করেছে সিরাম। সেই গবেষণা এখনও মাঝপথে রয়েছে। তবে দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ে যে ১৬০০ জনের উপরে টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা হয়েছে, তার রিপোর্টের ভিত্তিতে ওই টিকা কতটা নিরাপদ ও কার্যকরী সেই তথ্যও ডিসিজিআইয়ের কাছে জমা দিয়েছে সিরাম।

আজই সকালে কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী টুইট করে জানতে চান, ভারতবাসী কবে থেকে টিকা পাবেন। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে করা টুইটে রাহুল বলেন, “বিশ্বের ২৩ লক্ষ মানুষ ইতিমধ্যেই কোভিডের টিকা পেয়ে গিয়েছেন। চিন, আমেরিকা, ব্রিটেন, রাশিয়ায় টিকাকরণ শুরু হয়ে গিয়েছে। ভারতের নম্বর আসবে মোদীজি?’’

আজই কেন্দ্রীয় সূত্রে সিরামকে ছাড়পত্র দেওয়ার বিষয়টি সংবাদমাধ্যমে সামনে এসেছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রক সূত্রের মতে, সিরাম-সহ তিনটি সংস্থাকেই বাড়তি তথ্য জমা দিতে বলা হয়। সিরাম ছাড়া আর কেউ এখনও তা জমা দেয়নি। ফাইজ়ার ভারতে ছাড়পত্রের দাবি করলেও এখনও প্রয়োজনীয় নথি জমা দেয়নি। অন্য দিকে ভারত বায়োটেক তাদের কোভ্যাক্সিন প্রতিষেধক তৃতীয় দফায় ৩২ হাজার স্বেচ্ছাসেবকের উপরে প্রয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত ১৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবকের উপরে তা প্রয়োগ হয়েছে। ফলে তাদের গবেষণা শেষ করার বিষয়টি সময়সাপেক্ষ। এই পরিস্থিতিতে সিরাম গবেষণা সংক্রান্ত তথ্যাদি জমা দেওয়ায় তাদের ছাড়পত্র পাওয়ার সম্ভাবনা ক্রমশ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রকের একটি সূত্রের মতে, ইতিমধ্যেই সরকারের পক্ষ থেকে কোভিশিল্ড টিকা উৎপাদন নিয়ে ঘরোয়া ভাবে আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে। যা থেকেও আশা করা হচ্ছে, এ বছরের শেষেই টিকা নিয়ে সুখবর পেতে পারেন দেশবাসী।

আজ কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের বুলেটিন অনুসারে গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ২৩ হাজার ৯৫০ জন, মৃত্যু হয়েছে ৩৩৩ জনের। কাল কিন্তু দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ২০ হাজারের নীচে নেমেছিল। আজ আবার ২২ শতাংশ বেড়ে তা ২৪ হাজার ছুঁইছুঁই। তবে ব্রিটেনে কোভিডের যে নতুন স্ট্রেন থেকে সংক্রমণ ছড়িয়েছে, এখনও পর্যন্ত ভারতে তার অস্তিত্বের সাক্ষ্য মেলেনি। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে গত দু’দিনে মুম্বইয়ে ব্রিটেন থেকে আগত ৭৪৫ জন বিমানযাত্রীকে কোয়ারান্টাইনে পাঠানো হয়েছে। আগামী কাল থেকে ২ জানুয়ারি পর্যন্ত কর্নাটকে রাত-কার্ফু বলবৎ করা হচ্ছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement