ফাইল চিত্র।
জুলাইয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ তো হচ্ছেই না, এমনকি ডিসেম্বরের মধ্যে সমস্ত প্রাপ্তবয়স্ককে টিকা দেওয়া যাবে কি না, তা নিয়েও সংশয়ে নরেন্দ্র মোদী সরকার। আজ লোকসভায় লিখিত প্রশ্নের উত্তরে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডবিয়া জানান, করোনা সংক্রমণের চরিত্র বদলের কারণে নির্দিষ্ট সময়ের (ডিসেম্বরের) মধ্যে দেশের সবাইকে টিকা দেওয়া যাবে কি না, তা এখনই বলা অসম্ভব। বিরোধীদের কটাক্ষ, নোট বাতিলের সময়ে বারবার লক্ষ্যমাত্রা পাল্টেছিল কেন্দ্র। সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাব, বিদেশি টিকা সংগ্রহে ব্যর্থতার মতো নানাবিধ কারণে এ বার টিকাকরণ অভিযানেরও সময়সীমা পাল্টানো শুরু হয়ে গিয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টে সরকার জানিয়েছিল, ৩১ জুলাই পর্যন্ত গোটা দেশে ৫১.৬ কোটি টিকা দেওয়া যাবে। কিন্তু জানুয়ারি থেকে আজ পর্যন্ত ৪২.৭৫ কোটি টিকাকরণ হয়েছে। আজ দেশে টিকাকরণ হয়েছে ৩৯ লক্ষের কাছাকাছি। এই হারে আগামী সাত দিন টিকাকরণ হলে মাসের শেষে লক্ষ্যমাত্রা ছোঁয়া যে সম্ভব নয়, তা স্পষ্ট। সে ক্ষেত্রে কেবল জুলাইয়েই অন্তত পাঁচ কোটি টিকা কম দেওয়া হবে। কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালার বক্তব্য, ‘‘জুলাইয়ে যে লক্ষ্যমাত্রা ছোঁয়া যাবে না, তা আগেই বোঝা যাচ্ছিল। এ বার খোদ স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্বীকার করে নিয়েছেন যে, টিকাকরণ কবে শেষ হবে, তা এখনই বলা অসম্ভব। নীতির ব্যর্থতা ও পরিকল্পনার অভাবেই এই সমস্যা।’’ যদিও মাণ্ডবিয়া পরে দাবি করেছেন যে, সরকার ডিসেম্বরের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্কদের টিকাকরণ সেরে ফেলার বিষয়ে আশাবাদী।
কেন্দ্রের পাল্টা দাবি, রোজ গতি বাড়ছে টিকাকরণের। অগস্ট থেকে টিকার জোগানও বাড়বে। ফলে টিকাকরণের হারও বাড়বে। মোদী সরকারের দাবি, অগস্ট-ডিসেম্বরের মধ্যে হাতে ১৩৫ কোটি টিকা থাকবে। কিন্তু বিরোধীদের প্রশ্ন, টিকার জোগান বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় টাকা খরচ হল কোথায়? চলতি অর্থবর্ষে টিকা সংগ্রহের জন্য ৩৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল কেন্দ্র। সেই খাতে কত খরচ হয়েছে, তা আজ লোকসভায় লিখিত প্রশ্নে জানতে চেয়েছিলেন কংগ্রেসের রাহুল গাঁধী ও তৃণমূল সাংসদ মালা রায়। জবাবে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ভারতী পওয়ার জানান, ‘‘এখনও পর্যন্ত অগ্রিম বরাত দিয়ে টিকা সংগ্রহ করতে ৯৭২৫ কোটি টাকা খরচ হয়েছে।’’ সুরজেওয়ালার প্রশ্ন, ‘‘চলতি অর্থবর্ষের প্রথম চার মাসে টিকা সংগ্রহে মোট বরাদ্দ অর্থের মাত্র ২৭ শতাংশ খরচ হয়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যে বাকি টাকা কি খরচ করতে পারবে সরকার?’’ দেশীয় সংস্থাগুলি কত টিকা উৎপাদন করছে এবং বিদেশ থেকে কত প্রতিষেধক আনার লক্ষ্যমাত্রা কেন্দ্র নিয়েছে, তা জানতে চেয়েছিলেন রাহুল, যাতে ভবিষ্যতে টিকা খাতে খরচের গতিপ্রকৃতি বোঝা যায়। কিন্তু সেই উত্তর এড়িয়ে গিয়েছেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী।
গোড়া থেকেই প্রতিষেধকের অভাবে ভুগছে রাজ্যগুলি। বিরোধীদের মতে, কেন্দ্রের হাতে যথেষ্ট প্রতিষেধক না-থাকার কারণেই এই অবস্থা। প্রতিষেধকের ঘাটতির কারণ সরকারের কাছে জানতে চেয়েছিলেন ডিএমকে সাংসদ দয়ানিধি মারান। তাতে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী পওয়ারের জবাব, ‘‘কোনও রাজ্যেই প্রতিষেধকের ঘাটতি নেই।’’ মারান পরে টুইট করেন, ‘‘প্রথমে এঁরা জানালেন, অক্সিজেনের অভাবে কারও মৃত্যু হয়নি। এখন বলছেন, টিকার ঘাটতি নেই। তা হলে রাজ্যগুলি কেন প্রতিষেধক পাচ্ছে না, তার ব্যাখ্যা দিক সরকার।’’