প্রতীকী ছবি।
কোভিডের টিকা জোগানে নিজেদের বেঁধে দেওয়া লক্ষ্য নিজেরাই ছুঁতে পারল না মোদী সরকার। রাখতে পারল না সুপ্রিম কোর্টকে ‘দেওয়া কথাও’। এই পরিসংখ্যান সামনে আসার পরে তাই প্রশ্ন, পূর্ব ঘোষণা মিলিয়ে ডিসেম্বরের মধ্যে সমস্ত প্রাপ্তবয়স্ককে (১৮ বছর কিংবা তার বেশি) টিকা দেওয়া আদৌ সম্ভব হবে তো? বিশেষত যেখানে তার জন্য টিকার জোগান এখনকার তুলনায় লাগবে অনেক বেশি।
স্বাস্থ্য মন্ত্রক সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দিয়ে জানিয়েছিল, ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে মোট ৫১.৬ কোটি ডোজ় কোভিডের টিকা জোগানো হবে। কিন্তু রবিবার স্বাস্থ্য মন্ত্রক নিজেই জানিয়েছে, এ পর্যন্ত রাজ্যগুলিকে প্রায় ৪৯.৫ কোটি ডোজ় সরবরাহ করা হয়েছে। অর্থাৎ, লক্ষ্যমাত্রা থেকে গিয়েছে দু’কোটিরও বেশি ডোজ় দূরে।
কেন্দ্রের হিসেব অনুযায়ী, এখন দেশে ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সিদের সংখ্যা আনুমানিক ৯৪.৪ কোটি। স্বাস্থ্য মন্ত্রক সুপ্রিম কোর্টে হলফনামায় জানিয়েছিল, ৯৩-৯৪ কোটি জনকে দু’ডোজ় করে দিতে ১৮৬-১৮৮ কোটি ডোজ় টিকা প্রয়োজন। জানুয়ারি থেকে টিকাকরণ শুরু হয়েছে। জুলাইয়ের মধ্যে ৫১.৬ কোটি ডোজ় জোগানো হবে। অগস্ট থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে আরও পাঠানো হবে আরও ১৩৫ কোটি ডোজ় টিকা। এখন কেন্দ্র টিকা জোগানে লক্ষ্যচ্যুত হওয়ায় প্রশ্ন, চলতি বছরের মধ্যে সব প্রাপ্তবয়স্কের টিকাকরণ সম্ভব হবে তো?
বিরোধীদের অভিযোগ, কোভিড সংক্রমণ ফের বাড়তে শুরু করেছে। কিন্তু মোদী সরকার টিকার জোগান বাড়াতে পারছে না। এখনও পর্যন্ত ১৮ বছরের বেশি বয়সিদের মাত্র ১০.৯ শতাংশের দু’ডোজ় টিকাকরণ হয়েছে। একটি ডোজ় পেয়েছেন ৩৮.৭ %।
কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধীর টুইটে কটাক্ষ, “জুলাই চলে গেল। কিন্তু টিকার অভাব গেল না।” স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডবিয়া জবাবে বলেছেন, “দেশে জুলাইয়ে ১৩ কোটির বেশি ডোজ় টিকা দেওয়া হয়েছে।” রাহুল টিকা নিয়ে ‘তুচ্ছ রাজনীতি’ করছেন, তাঁর আরও ‘পরিপক্ক’ হওয়া দরকার বলেও পাল্টা আক্রমণ করেছেন মাণ্ডবিয়া। মন্ত্রীর দাবি, “অগস্টে টিকাকরণে আরও গতি আসবে।”
কিন্তু তাতে লক্ষ্যমাত্রা ছোঁয়া যাবে কি? কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ বলেন, “এ বছরের মধ্যে সব প্রাপ্তবয়স্ককে দু’ডোজ় টিকা দিতে প্রতিদিন গড়ে ৮৫ লক্ষ ডোজ় দিতে হবে। অনেক রাজ্যে আরও বেশি টিকাকরণের ক্ষমতা রয়েছে। একমাত্র সমস্যা টিকার জোগান।”
এক সপ্তাহ ধরে কোভিডের দৈনিক সংক্রমণের হার ফের বাড়ছে। শনিবার কেন্দ্র ১০টি রাজ্যকে সতর্ক করেছে। এই রাজ্যগুলির ৪৬টি জেলায় কোভিড পরীক্ষায় পজ়িটিভ ফল মেলার হার ১০ শতাংশের বেশি। অদূর ভবিষ্যতে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফেরার সম্ভাবনা কমছে। বিরোধীদের দাবি, এর মোকাবিলায় দ্রুত টিকাকরণ জরুরি। স্বাস্থ্য মন্ত্রক রবিবার জানিয়েছে, ১ অগস্ট সকাল ৮টা পর্যন্ত রাজ্যগুলিকে ৪৯.৪৯ কোটি ডোজ় টিকা জোগানো হয়েছে। এর মধ্যে ৮ লক্ষের বেশি টিকা এখনও রাজ্যগুলি হাতে পায়নি। গত ২৪ ঘণ্টায় ৬০ লক্ষের বেশি টিকা দেওয়া হয়েছে।
সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, “মাত্র ১০ শতাংশ মানুষের (দু’ডোজ়) টিকাকরণ হয়েছে। টিকাকরণের গতি যথেষ্ট না বাড়ালে, বছর শেষের মধ্যে সকলের টিকাকরণের লক্ষ্যে পৌঁছনো অসম্ভব। মোদী সরকারের উচিত মিথ্যে সাফল্য প্রচারে কোটি কোটি টাকা খরচ বন্ধ করে বিশ্ব বাজার থেকে টিকা জোগাড় করা।”