প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দিকে অভিযোগের আঙুল, তিনি বা তাঁর সরকার কেউই কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ সম্পর্কে সতর্ক হননি। বিজেপির সাফাই, ১৭ মার্চ প্রধানমন্ত্রী নিজেই মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে কোভিডের দ্বিতীয় ধাক্কা সম্পর্কে সতর্ক করেছিলেন।
মোদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, কোভিড উপেক্ষা করে তিনি পশ্চিমবঙ্গ-সহ পাঁচ বিধানসভা ভোটে একের পর এক জনসভা করেছেন। তার সঙ্গে কুম্ভমেলার লাখো পুণ্যার্থীর ভিড় থেকে কোভিড দাবানলের মতো ছড়িয়েছে। বিজেপির দাবি, মহারাষ্ট্র, ছত্তীসগঢ়, পঞ্জাব, কেরল থেকে কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। প্রথম তিন রাজ্যে না ছিল ভোট, না ছিল কুম্ভ। কেরলে সবথেকে বেশি সভা করেছেন রাহুল গাঁধী ও বাম নেতারা।
ফেসবুক-টুইটারে নিউজ়িল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডের্নের ছবি ঘুরছে। যিনি তাঁর দেশে কোভিডে লাগাম পরিয়েছেন। সঙ্গে হাহুতাশ, আহা, এ দেশেও যদি কেউ এমন প্রধানমন্ত্রী হত। যা শুনে বিজেপির দাবি, নিউজ়িল্যান্ডের জনসংখ্যা তো বেঙ্গালুরুর থেকেও কম।
রাজনীতিকরা বলছেন, গত সাত বছরে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধীরা বহু অভিযোগ তুলেছেন। কিন্তু তার জবাব দেওয়ার বদলে মোদী সরকার হয় পাল্টা যুক্তি দিয়েছে, না হলে বিরোধীদেরই পুরনো ইতিহাস তুলে পাল্টা আক্রমণ করেছে। এ বার কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ে যখন খোদ প্রধানমন্ত্রী মোদীর ভাবমূর্তি ধুয়ে যাওয়ার অবস্থা, তখন বিজেপিকেও পাল্টা সাফাই দিতে নামতে হল। বিজেপি নেতৃত্ব আজ মোদী সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিটি অভিযোগ নিজেরাই তুলে ধরেছে। এবং তার সঙ্গে পাল্টা জবাব দিয়েছে। বিজেপির দাবি, তাদের জবাবটাই ‘আসল সত্য’।
এত দিন প্রধানমন্ত্রী নিজেই গর্ব করে বলছিলেন, ভারত গোটা বিশ্বকে প্রতিষেধক দিয়ে কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাহায্য করছে। এ বার প্রতিষেধকে টান পড়ায় প্রশ্ন উঠেছে, কেন্দ্র কেন দেশের মানুষের জন্য টিকার বন্দোবস্ত না করে বিদেশে টিকা পাঠিয়েছে? এতদিন সরকার ‘ভ্যাকসিন মৈত্রী’-র জয়গান গাইলেও এখন বিজেপির বক্তব্য, যে পরিমাণ টিকা বিদেশে রফতানি হয়েছে, তার ৮৪ শতাংশ রফতানিতে দুই টিকা সংস্থার বাধ্যবাধকতা ছিল। কারণ বিদেশ থেকে অনুদান, উপাদান মিলেছিল। বিরোধীদের প্রশ্ন, তা হলে প্রধানমন্ত্রী এত দিন নিজে এই টিকা-দানের কৃতিত্ব নিচ্ছিলেন কেন?
কংগ্রেস-সহ বিরোধী নেতাদের বক্তব্য, এখন বিজেপির সাফাইয়ের সময় নয়। প্রধানমন্ত্রীর জবাবদিহির সময়। সামনে এসে মুখ খোলার সময়। কিন্তু পরিস্থিতি প্রতিকূল দেখে প্রধানমন্ত্রী আর মানুষের সামনে আসছেন না। তিনি নিজের ভাবমূর্তি বাঁচাতে ব্যস্ত।
কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধীর কটাক্ষ, “প্রতিষেধক, অক্সিজেন, ওষুধের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীও উধাও। শুধু সেন্ট্রাল ভিস্টা, ওষুধের উপরে জিএসটি ও এদিকে-ওদিকে প্রধানমন্ত্রীর ছবি পড়ে রয়েছে।”
সেন্ট্রাল ভিস্টা প্রকল্পে নিয়েও আজ বিজেপি সাফাই দিয়ে বলেছে, এতে ২০ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে বহু বছর ধরে। সেই তুলনায় প্রতিষেধকের জন্য ৩৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। সেন্ট্রাল ভিস্টার খরচের প্রায় দশগুণ অর্থ স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ হয়েছে। কিন্তু বিরোধীদের প্রশ্ন, আপাতত সেন্ট্রাল ভিস্টার কাজ বন্ধ রাখলে ক্ষতি কী?