Corona

খন্দে মুনওয়াকের’ বাদল কোভিডেও

করোনা মিটলে কি ফের খন্দ-শিল্পেই ফিরবেন? উত্তরে সম্মতিসূচক লাজুক হাসলেন শিল্পী। এমনটা অস্বাভাবিকও নয়।

Advertisement

 স্নেহাংশু অধিকারী

শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২০ ০৫:১৭
Share:

বেঙ্গালুরুর রাস্তা ও রাস্তার পাশের দেওয়ালে করোনা-সতর্কতা প্রচারে শিল্পী বাদল ননজুনদাস্বামী।  নিজস্ব চিত্র

জাহাজের ডেকে ডানার মতো দু’হাত মেলে দাঁড়িয়ে রোজ়। মুখে মাস্ক! ফ্রেমে হাজির সার্জিক্যাল মাস্ক-পরা জ্যাকও। তবে ওই সিনেমার মতো রোজ়ের কোমর জড়িয়ে নয়— মোটামুটি দু’গজ দূরত্ব মেপে দূরেই। ভঙ্গিতে কেমন যেন ‘যাব কি যাব না’ ইতস্তত ভাব নায়কের।

Advertisement

গত বছর সেপ্টেম্বরে বেঙ্গালুরুর খন্দে ভরা হিরো হাল্লি ক্রস বাসস্টপের রাস্তায় ‘চাঁদ’ নামিয়েছিলেন শিল্পী বাদল ননজুনদাস্বামী। ‘মুনওয়াকে’ মশগুল মহাকাশচারী, আর তাঁর পাশ দিয়ে ঢিমে তালে বেরিয়ে যাচ্ছে হলুদ-সবুজ। ইসরোর চন্দ্রাভিযানের সপ্তাহে নিমেষে ভাইরাল হয় সেই ভিডিয়ো। এ বার করোনা-থিমে বেঙ্গালুরুর আর টি নগরে রাস্তার পাশে দেওয়ালে ‘টাইটানিক’ আঁকলেন বাদল।

বাদল ভাইরাস। টুইটারে এই নামেই অ্যাকাউন্ট তাঁর। আপাতত খন্দে ভরা বেহাল জীবন দেখানো ছেড়ে করোনা-যুদ্ধে শামিল শিল্পী। মার্চের মাঝামাঝি শুরুটা করেছিলেন নিজের বাড়ির দেওয়াল থেকে। তার পর জে সি নগর থানার সিঁড়ি, বেঙ্গালুরু পুরসভার দেওয়াল, ইতিউতি পার্কিং লট, লকডাউনে বন্ধ দোকানের শাটার, ধুলো-জমা গাড়ির বনেট— কিছুই বাদ দেননি। কোথাও আঁকলেন মাস্ক-সাঁটা ২০২০, তো কোথাও মাস্ক-পতাকা হাওয়ায় ওড়াচ্ছে দামাল কিশোরী। বার্তা একটাই— ‘মাস্ক পরুন এবং দূরত্ব-বিধি মেনে সুস্থ থাকুন।’

Advertisement

আরও পড়ুন: রাস্তা আটকে আন্দোলন নয়: আদালত

এটাও কি ‘ট্রেন্ড’ ফলো করে? ফোনে বাদল বললেন, ‘‘দেশ জুড়ে লকডাউনের শুরুতে নিজেই বাড়ি থেকে বেরোতে ভয় পাচ্ছিলাম। এক দিন বেরিয়ে দেখলাম, অনেকেই নির্বিকার। মাস্ক নেই, পারস্পরিক দূরত্ববিধিরও বালাই নেই। তখনই ঠিক করি মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে রাস্তায় নামতেই হবে।’’ মাঝখানে অবশ্য বেঙ্গালুরু পুরসভার কমিশনারকে ট্যাগ করে টাটানগরের খোলা ম্যানহোলের পাশে ছবি-সহ লিখেছেন #লাইভসম্যাটার। সুদূর আমেরিকা তখন বর্ণ-বিক্ষোভে উত্তাল।

করোনা মিটলে কি ফের খন্দ-শিল্পেই ফিরবেন? উত্তরে সম্মতিসূচক লাজুক হাসলেন শিল্পী। এমনটা অস্বাভাবিকও নয়। চল্লিশ-পেরোনো বাদলের উত্থান যে এই পথ-চিত্রেই! ২০১৫-য় বেঙ্গালুরুর রাস্তায় এলোপাথাড়ি ডিভাইডারে ধাক্কা খেয়ে বাইক থেকে পড়ে গিয়েছিলেন বাদল। মাথায় চোট পান। পরের দিনই অকুস্থলে গিয়ে ওই ডিভাইডারগুলো তেরঙ্গায় রাঙিয়ে দিয়ে আসেন। দিন দুয়েকের মধ্যে ম্যাজিকের মতো কাজ করে স্থানীয় পুরসভা। সেই শুরু। নিজের পকেট থেকেই খরচ করে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রাস্তার বেহাল দশা নিয়েই কাজ করে গিয়েছেন ফ্রিলান্সার বাদল।

মাইসুরুতে অভাবের সংসার থেকে উঠে আসা বাদল প্রথমে একটা অ্যাড এজেন্সিতে চাকরি করতেন। পরে ছেড়েও দেন। বাদল কাজ করেছেন বেশ কিছু কন্নড় ছবির শিল্প নির্দেশক হিসেবে। আঁকা চালিয়ে যেতে এক সময় ভিডিয়ো পার্লারে কাজ করেছেন, ছোট গুমটি ভাড়া নিয়ে ওয়ার্কশপ চালিয়েছেন। এখন তাঁরই নামে তৈরি আর্ট স্পেসে ছবির প্রদর্শনী করছেন তরুণ শিল্পীরা।

করোনা-কালে অবশ্য তিনি একাই ছবি এঁকে বেড়াচ্ছেন। ফোনে বললেন, ‘‘প্রয়োজন হলেও সহকারী কাউকে নিয়ে বেরোতে পারছি না। তাই নিজেই যে-টুকু পারি ১০টা-৫টার ডিউটি করে যাচ্ছি।’’ ফোনে কথার বলার ফাঁকে ফাঁকেই কাশছিলেন শিল্পী। শুকনো কাশি, বেদম। দু’-এক বার ফোন কেটেও দিলেন। করোনা নাকি? কল-ব্যাক করে নিজেই বললেন, ‘‘না, না ও কিছু না। ডাস্ট অ্যালার্জি। ভোগাচ্ছে ক’দিন।’’

তার পর ফের কাশির দমক সামলে বললেন— ‘‘রং আর রাস্তার ধুলো যে আমার এনার্জিও।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement