—ফাইল চিত্র।
গোটা দেশ তখন লকডাউনে। তা সত্ত্বেও মে মাসের গোড়াতেই ভারতের অন্তত ৬৪ লক্ষ মানুষ করোনা সংক্রমণের শিকার হয়ে গিয়েছিলেন। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)-এর করা সেরো সমীক্ষা (রক্তের নমুনা পরীক্ষা)-র রিপোর্ট এমনই বলছে। অথচ ওই সমীক্ষা শুরুর সময়ে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের হিসেবে, দেশে করোনা সংক্রমিতের সংখ্যা ৭০ হাজারও পেরোয়নি। বিশেষজ্ঞদের মতে, সংক্রমণ যে তখনই ওই পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে, যথেষ্ট সংখ্যক পরীক্ষার অভাবে তা জানা যায়নি।
১১ মে থেকে ৪ জুন— মূলত তৃতীয় থেকে চতুর্থ পর্বের লকডাউনের সময়ে গোটা দেশে ওই সমীক্ষা চালায় আইসিএমআর। ২১টি রাজ্যের ৭০টি জেলার ৭০০ গ্রাম ও পুর ওয়ার্ডে করা হয়েছিল সমীক্ষা। প্রায় ৩০ হাজার বাড়ি ঘুরে ২৮ হাজার মানুষের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে ইমিউনোগ্লোবিন-জি (আইজিজি) অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করা হয়। সেই সমীক্ষায় শতাংশের হিসেব অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে, মে মাসের গোড়ায় গোটা দেশে করোনা সংক্রমিতের সংখ্যা ছিল ৬৪,৬৮,৩৪৪। লকডাউন চলাকালীন যেখানে এত মানুষ সংক্রমিত ছিলেন, সেখানে আনলকের পরে সংখ্যাটি কয়েক কোটি ছাড়িয়ে গিয়েছে বলেই বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা।
সেরো সমীক্ষার সময়ে পূর্ণবয়স্কদের মধ্যে করোনা সংক্রমণের হার ছিল মাত্র ০.৭৩ শতাংশ। যার অর্থ, দেশ তখন সংক্রমণের একেবারে প্রথম ধাপে দাঁড়িয়ে ছিল। আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ বাড়বে, সেই আশঙ্কাও ছিল। বাস্তবে তা-ই হচ্ছে। এখন দৈনিক এক লক্ষের কাছাকাছি মানুষ সংক্রমিত হচ্ছেন। আন্তর্জাতিক সমীক্ষায় মোট সংক্রমিতের সংখ্যা ৪৬ লক্ষ পেরিয়ে গিয়েছে।
১১ মে সমীক্ষা শুরুর দিনে সরকারি হিসেবে দেশে করোনা সংক্রমিতের সংখ্যা ছিল ৬৭ হাজারের কাছাকাছি। সমীক্ষা শেষের দিনে সংখ্যাটা দাঁড়ায় ২ লক্ষের কাছাকাছি। অথচ সেরো সমীক্ষা ৬৪ লক্ষের হিসেব দিচ্ছে। এই পার্থক্যের জন্য মূলত দায়ী করা হয়েছে যথেষ্ট সংখ্যক পরীক্ষাকেন্দ্র ও পরীক্ষার অভাবকে। সমীক্ষা বলছে, ওই সময়ে গড়ে প্রতি এক জনে পরীক্ষা থেকে বাদ পড়েছেন অন্তত ৮০-১৩০ জন। কিন্তু প্রচুর পরীক্ষার পরিকাঠামো থাকলে বেশি সংখ্যায় রোগীদের চিহ্নিত করে সংক্রমণ আটকানো যেত। সংক্রমণের শীর্ষে থাকা আমেরিকা বা রাশিয়া প্রথমেই পরীক্ষা বাড়ানোর উপরে জোর দিয়েছিল। ভারত সেই পদক্ষেপ দেরিতে করেছে বলেই স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একাংশের মত।
এমসের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক নীরজ নিশ্চল যদিও এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘এই রোগের অতীত ইতিহাস নেই। এসেছে অন্য দেশ থেকে। গোড়ার দিকে আমাদের ধারণাও কম ছিল। ওই সময়ে প্রচুর পরীক্ষা করালেও হয়তো কাঙ্ক্ষিত ফল পেতাম না। তা ছাড়া ধরে-ধরে প্রত্যেকের করোনা পরীক্ষা করানোও সম্ভব নয়। সংক্রমণ হলে তবেই পরীক্ষা করানোর কথা প্রথম