দেশে ক্রমশ বেড়ে চলেছে করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা। রোগ নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন পরিকল্পনা নিচ্ছে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলি। এই পরিস্থিতিতে গোটা দেশকে পথ দেখাচ্ছে ‘ভিলওয়াড়া মডেল’।
ইতিমধ্যেই এই মডেলের প্রশংসা করেছেন কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেট সচিব রাজীব গৌবাও। কিন্তু এই ‘ভিলওয়াড়া মডেল’ যাঁর মস্তিষ্কপ্রসূত, তিনি কে জানেন?
রাজস্থানের ভিলওয়াড়ার জেলাশাসক রাজেন্দ্র ভট্ট। তিনি আগে রাজ্য সরকারের অফিসার ছিলেন। ২০০৭ সালে আইএএস হিসাবে পদোন্নতি হয় তাঁর। চাকরি আর চার বছর রয়েছে।
সবার সঙ্গে তাঁর এতটাই ভাল সম্পর্ক যে, পুলিশের বিভিন্ন পদস্থ অফিসার থেকে শুরু করে, রাজ্য সরকারের বিভিন্ন অফিসার- সকলকে নিয়ে একসঙ্গে চলতে তাঁর কোনও অসুবিধা হয় না।
রাজস্থানের জয়পুর থেকে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার দূরে ভিলওয়াড়া জেলা। সেখানে ১৮ থেকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২৬ জন। ক্রমে ‘হটস্পট’ হয়ে উঠেছিল ভিলওয়াড়া।
বিপদ আঁচ করে নড়েচড়ে বসে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর। করোনা মোকাবিলায় ওই জেলাশাসকেরই পরিকল্পনায় গৃহীত হয় নানা ব্যবস্থা। আর তাতেই সংক্রমণের গ্রাফ নামতে থাকে।
কী ভাবে মিলল এই সাফল্য? গোড়াতেই বাকি দেশ থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল ভিলওয়াড়াকে। দেশে লকডাউন ঘোষণার চার দিন আগেই ২০ মার্চ থেকে ২ এপ্রিল পর্যন্ত সেখানে কার্ফু জারি করে প্রশাসন।
জেলাশাসক জানিয়েছেন, কার্ফু জারি করার আগে প্রতিটা ডেয়ারি ফার্মে লোক পাঠানো হয়েছিল। প্রতি দিন কত পরিমাণ দুধের প্রয়োজন, এবং তা যথাযথ ভাবে মজুত রয়েছে কি না, তা জেনে নিয়েছিলেন তিনি।
কার্ফু জারি করলেও ছাড় দেওয়া হয় অত্যাবশ্যক পণ্যে। পরে কার্ফুর মেয়াদ বাড়ানো হয় ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত।
ভিলওয়াড়ার জেলাশাসক রাজেন্দ্র ভট্ট জানান, এই সময়ে কারও খাদ্যের অভাব যাতে না ঘটে, তার জন্য প্রতিটি বাড়িতে আনাজ, ফল, দুধ এবং ওষুধ পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব নেয় প্রশাসনই।
একইসঙ্গে ভিলওয়াড়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালের ১৭ জন স্বাস্থ্যকর্মীর মধ্যে সংক্রমণ দেখা দেওয়ায় পুরো হাসপাতালটাই সিল করা হয়। পাশাপাশি কঠোর ভাবে ‘কনটেনমেন্ট স্ট্র্যাটেজি’ নেওয়া হয়।
কী রকম? হাসপাতালের এক কিলোমিটার পরিধি জুড়ে কনটেনমেন্ট জ়োন ও তিন কিলোমিটার জুড়ে বাফার জ়োন তৈরি করা হয়।
একই ভাবে করোনা-আক্রান্তদের বাড়ির চারপাশে কনটেনমেন্ট জ়োন ও বাফার জ়োন তৈরি করা হয়। রোগ নির্ণয়ের জন্য বিশেষ দল তৈরি করা হয়। ভিলওয়াড়ার প্রত্যেকেরই করোনা পরীক্ষার বন্দোবস্ত করা হয়।
স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, শহর ও গ্রাম মিলিয়ে ভিলওয়াড়ায় মোট সাড়ে ছ’লক্ষ বাড়িতে ২৪ লক্ষ মানুষের পরীক্ষা করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন ২৭টি হোটেলের ১৫৪১টি ঘরে কোয়রান্টিন কেন্দ্র তৈরি করেছে।
২২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হস্টেলগুলিতে ১১,৬৫৯টি বেডও এ ভাবে কাজে লাগানো হয়েছে। শহর ও গ্রামাঞ্চলে এখনও কাজ করে চলেছেন ‘করোনা ক্যাপ্টেন’ ও ‘করোনা ফাইটার’রা।
তবে সারা দেশ ‘ভিলওয়াড়া মডেল’-এর প্রশংসা করলেও, এখনই এটা নিয়ে অতটা উচ্ছ্বসিত হতে নারাজ জেলাশাসক রাজেন্দ্র ভট্ট। পরিস্থিতি এখনও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। সাফল্য মিলেছে কি না, তা জানতে অন্তত ১ মে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চান তিনি।