শ্রমিকদের রাজ্য পেরোনো রুখতে পদক্ষেপ কেন্দ্রের

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের যুগ্মসচিব পুণ্যসলিলা শ্রীবাস্তব বলেন, “লকডাউনের লক্ষ্যই হল দূরত্ব বজায় রাখা। যে যেখানে আছে, সেখানেই থাকুন। শ্রমিকদের এক শহর থেকে অন্য শহরে বা এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে নিয়ে যাওয়া হবে না”।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২০ ০৪:১৩
Share:

লকডাউনের জেরে হেঁটে পাড়ি। ছবি: পিটিআই।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেখানো পথে হেঁটে কেন্দ্রীয় সরকার ঠিকা শ্রমিকদের ভিন্ রাজ্যের কর্মক্ষেত্র থেকে নিজ রাজ্যে ফিরে যাওয়া রুখতে সমস্ত রাজ্য প্রশাসনকে নির্দেশ দিল। দিল্লির মতো বড় শহরগুলি থেকে শ্রমিকরা ট্রেন-বাস না পেয়ে পায়ে হেঁটেই গ্রামের দিকে রওয়ানা দিচ্ছেন। টানা ২১ দিনের লকডাউনের জেরে শহরে রুটিরুজি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গ্রামে ফিরতে চাইছেন তাঁরা। ফলে তাঁদের একাধিক ব্যক্তির সংস্পর্শে আসার সম্ভাবনা দেখা দেওয়ায় সরকারের গোষ্ঠী সংক্রমণ রোখার মূল উদ্দেশ্যটাই ভেস্তে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সেই কারণেই আজ কেন্দ্রের এই নির্দেশ।

Advertisement

আজ কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখে এই শ্রমিকদের জন্য একবার ট্রেন বা বাসের বন্দোবস্ত করে দেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন। প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে চিঠি লিখে পরিযায়ী শ্রমিকদের আশ্রয়, খাবারের বন্দোবস্ত করার দাবি তুলেছেন। সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরির মত, স্কুল-কলেজে এই সব শ্রমিকের অস্থায়ী শিবির খোলা হোক। কিন্তু কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বক্তব্য, কেন্দ্র এই শ্রমিকদের জন্য রেশন ব্যবস্থার মাধ্যমে বিনামূল্যে খাবার ও নিত্য প্রয়োজনীয় বস্তু জোগান দেবে। কিন্তু ট্রেন-বাসের ব্যবস্থা করা হবে না। যে যেখানে রয়েছেন, তাঁকে সেখানেই থাকতে হবে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের যুগ্মসচিব পুণ্যসলিলা শ্রীবাস্তব বলেন, “লকডাউনের লক্ষ্যই হল দূরত্ব বজায় রাখা। যে যেখানে আছে, সেখানেই থাকুন। শ্রমিকদের এক শহর থেকে অন্য শহরে বা এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে নিয়ে যাওয়া হবে না”। গতকালই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভিন রাজ্যে কর্মরত রাজ্যের শ্রমিকদেক দু’বেলা খাওয়া নিশ্চিত করতে ১৮টি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছিলেন। রাহুল গাঁধী আজ বিভিন্ন স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে আটকে পড়া পড়ুয়াদের দুবেলা খাওযার বন্দোবস্ত করতে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী রমেশ পোখরিয়ালকে চিঠি লেখেন। কেন্দ্র আজ রাজ্যগুলিকে ছাত্রাবাস, কর্মরত মহিলাদের হস্টেলে খাবার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের জোগান নিশ্চিত করতে বলেছে।

Advertisement

২১ দিনের লকডাউন ঘোষণার পরেই বড় শহরগুলি থেকে ঠিকা শ্রমিক, দিনমজুররা মূলত খেতে না পাওয়ার আশঙ্কায় গ্রামে রওয়ানা হচ্ছেন। অনেকে এক বা একাধিক রাজ্য পার হতে চাইছেন। দিল্লি থেকে শ্রমিকরা স্ত্রী-সন্তান নিয়ে পায়ে হেঁটে কয়েকশো কিলোমিটার দূরত্ব পেরিয়ে উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন জেলায় পৌঁছনোর চেষ্টা করছেন। এবিপি নিউজে তাঁদের সন্তানদের খেতে না পেয়ে কান্নার খবর তুলে ধরে আজ রাহুল গাঁধী বলেন, আরও সমবেদনার সঙ্গে চিন্তাভাবনা করতে হবে। গত কাল তেলঙ্গানা থেকে রাজস্থান ফেরার চেষ্টায় থাকা ৩০০ শ্রমিককে আটক করেছিল মহারাষ্ট্র পুলিশ। আজও চেন্নাই থেকে নিজের-নিজের রাজ্যে ফিরতে চাওয়া কয়েকটি দলের মোট ২০০ শ্রমিককে অন্ধ্রপ্রদেশের সীমানা থেকে পুলিশ ফিরিয়ে দেয়।

সূত্রের খবর, চেন্নাইয়ের নির্মাণ প্রকল্পগুলিতে কাজ করতে আসা শ্রমিকদের বেশির ভাগই বিহার, ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ, অন্ধ্র ও তেলঙ্গানার। এই ২০০ জনের কারা কোন রাজ্যের, তা এখনও জানায়নি প্রশাসন। প্রিয়ঙ্কা বলেন, “দিল্লির সীমান্তে এখন ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি। যানবাহন, খাবার নেই। অথচ করোনা, অনাহার, রুজির অভাবের আতঙ্কে শ্রমিকরা গ্রামে ফিরতে চাইছেন”।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement