Congress

Congress: চিন্তন শিবিরে উধাও জয়ের কৌশল-চিন্তা 

তার বদলে অর্থনীতি, সামাজিক ন্যায়, তরুণ প্রজন্ম, কৃষির মতো বিষয়ে তাত্ত্বিক আলোচনা করে সময় নষ্ট করা হচ্ছে।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

উদয়পুর শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০২২ ০৬:৩০
Share:

উদয়পুরে কংগ্রেসের বৈঠকে সনিয়া-রাহুল গান্ধী। শনিবার। পিটিআই

সবই তো আলোচনা হচ্ছে! কিন্তু দু’বছর পরে লোকসভা ভোটে জেতা যাবে কী ভাবে?

Advertisement

চিন্তন শিবিরের আলোচনায় কংগ্রেসের অন্দরমহল থেকেই মোক্ষম এই প্রশ্নটি উঠে এল। দলের একাধিক নেতার ক্ষোভ, একের পর এক নির্বাচনে দলের হারের কোনও ময়না-তদন্তই চিন্তন শিবিরে হচ্ছে না। সেই ময়না-তদন্ত করে, নির্বাচনে জয়ের রাস্তা খোঁজা দরকার ছিল। তৃণমূল কংগ্রেস, আম আদমি পার্টির মতো আঞ্চলিক দলগুলির সঙ্গে জোট নিয়ে স্পষ্ট নীতি গ্রহণের দরকার ছিল। তার বদলে অর্থনীতি, সামাজিক ন্যায়, তরুণ প্রজন্ম, কৃষির মতো বিষয়ে তাত্ত্বিক আলোচনা করে সময় নষ্ট করা হচ্ছে।

আগামী দু’বছরের মধ্যে ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচন ও তার আগে প্রায় এক ডজন রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন রয়েছে। কংগ্রেস সূত্রের খবর, মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ চহ্বাণ, রাজস্থানের নেতা মোহন প্রকাশ চিন্তন শিবিরে প্রশ্ন তুলেছেন, এই সব ভোটে কংগ্রেস জিততে কী কৌশল নেবে? পশ্চিমবঙ্গ থেকে রাজ্যসভার সাংসদ অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি সওয়াল করেন, বিজেপিকে রুখতে হলে আঞ্চলিক দলের সঙ্গে বিবাদে যাওয়া উচিত নয়। কোনও রাজ্যে আঞ্চলিক দল শক্তিশালী হলে, কংগ্রেসকে তাদের নেতৃত্ব মেনে নিতে হবে। যেমন কংগ্রেসকে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে তৃণমূলকেই বিজেপি-বিরোধী জোটের নেতৃত্বে মেনে নিতে হবে। যে ভাবে কংগ্রেস তামিলনাড়ুতে ডিএমকে, মহারাষ্ট্রে শিবসেনার মতো আঞ্চলিক দলের হাতে নেতৃত্ব ছেড়ে নিজে গৌণ ভূমিকা পালন করছে। কংগ্রেসের কিছু নেতার মত, রাজ্য স্তরে জোটের সিদ্ধান্ত রাজ্যের নেতাদের উপরে ছেড়ে দেওয়া হোক। পাল্টা যুক্তি আসে, রাজ্যের কংগ্রেস নেতারা নিজেদের শক্তি না বুঝেই আঞ্চলিক দলের উপরে দাদাগিরি করতে চান। উল্টো দিক থেকে বলা হয়, দিল্লির নেতারা আঞ্চলিক দলের সামনে সহজেই মাথা নত করে ফেলেন।

Advertisement

রাজনৈতিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে প্রবীণ নেতা মল্লিকার্জুন খড়্গের নেতৃত্বে চিন্তন শিবিরের আগে একটি কমিটি তৈরি হয়েছিল। সেই কমিটির তৈরি খসড়া প্রস্তাব নিয়ে চিন্তন শিবিরে আলোচনা চলছে। সনিয়া, রাহুল ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে সেই আলোচনা শুনেছেন। কংগ্রেস সূত্রের বক্তব্য, শুক্রবার থেকে শুরু করে শনিবারের আলোচনায় একাধিক নেতা দাবিতুলেছেন, ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস ফের ‘একলা চলো’ নীতি নেবে, না কি আঞ্চলিক দলগুলির সঙ্গে জোট করবে, তা স্পষ্ট হওয়া দরকার।

শুক্রবার মল্লিকার্জুন খড়্গে বলেছিলেন, “আগে আমরা নিজেদের ঘর গোছাতে চাই, কংগ্রেসকে আরও সক্রিয় করতে চাই। তার পরে অন্য দলের সঙ্গে কথা হবে। নিজেদের ঘাটতি মেটানোর পরেই আমরা জোটের বিষয়ে আলোচনা করব এবং সামগ্রিক নীতি তৈরি করব। সেই নীতি যারা মানবে, তাদের সঙ্গে জোট হতে পারে। আমরা সকলকে নিয়ে চলতে চাই। যারা ধর্মনিরপেক্ষ সমাজ, সাংবিধানিক মূল্যবোধে বিশ্বাস করে, আমরা তাদের সঙ্গে চলতে চাই।”

চিন্তন শিবিরের অন্দরমহলের আলোচনায় প্রশ্ন উঠেছে, আগে ঘর গোছাব, তার পরে জোট করব—এর অর্থ কী? কত দিন ধরে ঘর গোছানো হবে? কংগ্রেসের সাংগঠনিক সমস্যা না মেটানো পর্যন্ত কি আঞ্চলিক দলের সঙ্গে জোট নিয়ে আলোচনা হবে না? এআইসিসি-র এক সম্পাদক বলেন, “১৯৯৮-এ পাঁচমারির চিন্তন শিবিরে আমরা একলা চলো-র সিদ্ধান্ত নিলেও, ২০০৩-এ আবার ধর্মনিরপেক্ষ জোটের নীতি নিয়েছিলাম। এ বার এতই অস্পষ্টতা, জোট না একলা চলো, কিছুই বোঝা যাচ্ছে না।” আবার অনেকেই বলছেন, সমমনস্ক দলের সঙ্গে চলার কথা বলা হলেও তা ভোটের আগে না ভোটের পরে, তা-ও তো বোঝা যাচ্ছে না।

রাজনৈতিক বিষয়ক কমিটিতে আলোচনার বিষয়সূচিতে সংবিধানকেই আক্রমণ, বহুত্ববাদের রক্ষা, সাম্প্রদায়িক রাজনীতি, জাতিসত্তা পরিচিতি, কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক, উত্তর-পূর্ব ভারত, জম্মু-কাশ্মীরের মতো বিষয় রাখা হয়েছে। সূত্রের খবর, কংগ্রেস নেতারা হারের কারণ নিয়ে আলোচনার দাবি তোলায় খড়্গে জোর গলায় বলেন, নির্দিষ্ট বিষয়সূচির মধ্যেই আলোচনা করতে হবে। সূত্রের খবর, জোট নিয়ে আলোচনা না করে জম্মু-কাশ্মীর, উত্তর-পূর্ব নিয়ে আলোচনা করে কী লাভ হবে, তা নিয়ে পাল্টা প্রশ্ন ওঠে।

রাজস্থান কংগ্রেসের নেতা সচিন পাইলট আজ প্রকাশ্যেই বলেছেন, “সর্বাগ্রে নির্বাচনে জেতা দরকার। ক্ষমতায় এলে, সরকারে এলে তবেই তো আমরা অর্থনীতি, সামাজিক ন্যায় নিয়ে নীতি রূপায়ণ করতে পারব!” অন্য দিকে পঞ্জাবে দল ছাড়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে বলরাম জাখরের পুত্র সুনীল জাখরের মন্তব্য, চিন্তন শিবিরের নির্বাচনে হার নিয়ে ‘চিন্তা শিবির’ হওয়া উচিত ছিল। জাখরের বক্তব্য, চিন্তন শিবির আসলে রাহুল গান্ধীকে ফের ‘রিলঞ্চ’-এর আয়োজন।

সনিয়া গান্ধী আজ এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক, প্রদেশ সভাপতিদের সঙ্গে বৈঠক করে ঠিক করেছেন, মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ফের কংগ্রেস জনজাগরণ অভিযান শুরু করবে। আগামী সপ্তাহে রাজস্থান থেকেই তা শুরু হতে পারে। রাহুল গান্ধী তাতে থাকতে পারেন। সে ক্ষেত্রে মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে আন্দোলনকে সামনে রেখেই ফের মাঠে নামতে উদ্যোগী হবেন রাহুল। বৈঠকে প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরাও সাধারণ মানুষকে প্রভাবিত বা ক্ষতিগ্রস্ত করছে, এমন বিষয়ে আন্দোলনে গুরুত্ব দেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement