কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচনের প্রার্থী শশী তারুর। ফাইল চিত্র।
সনিয়া ও রাহুল গান্ধীর সঙ্গে কথা বলার পরে তিনি মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। দলের শীর্ষ নেতৃত্ব তাঁকে বার্তা দিয়েছেন, সাংগঠনিক নির্বাচন যেমন ভাবে লড়তে হয়, তেমন ভাবেই তিনি যেন লড়েন। কে কার ‘পছন্দের প্রার্থী’, এ সব অঙ্ক নিয়ে মাথা ঘামানোর প্রয়োজন নেই। সেই প্রস্তুতির অংশ হিসেবে পুজো মিটতেই কলকাতায় আসছেন সর্বভারতীয় কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচনের প্রার্থী শশী তারুর।
কংগ্রেস সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত ঠিক আছে আগামী ১২ অক্টোবর কলকাতায় আসার কথা তারুরের। লোকসভায় তাঁর সতীর্থ এবং প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর সঙ্গে তারুরের কথা হয়েছে। প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির প্রতিনিধিদের ওই দিন তারুরের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক পরিচয়ের জন্য হাজির থাকতে বলা হবে। সভাপতি পদের জন্য ভোট হবে ১৭ অক্টোবর। ওই পদে আর এক প্রার্থী মল্লিকার্জুন খড়্গে কবে কলকাতায় আসবেন বা আদৌ আসবেন কি না, সেই ব্যাপারে অবশ্য এখনও কিছু ঠিক হয়নি। অতীতে সর্বভারতীয় কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে জিতেন্দ্র প্রসাদ, শরদ পওয়ারেরা প্রচারের কাজে এই শহরে এসে প্রদেশ কংগ্রেসের সঙ্গে কথা বলে গিয়েছিলেন।
কংগ্রেসের ভিতরে ও বাইরে নানা মহলে জল্পনা, জনপথের পছন্দের প্রার্থী আসলে খড়্গেই। তাঁর জয় সে কারণেই অলিখিত ভাবে হলেও নিশ্চিত। আর তারুরের গায়ে যে হেতু আগেই ‘বিদ্রোহী’ শিবিরে থাকার তকমা লেগে গিয়েছিল, তাই এমন জল্পনা এখন আরও জোরদার। ঘনিষ্ঠ মহলে তারুর অবশ্য বলছেন, এই জল্পনা আসলে ভিত্তিহীন। তাঁর পক্ষে প্রস্তাবক হিসেবে সই করেছেন সইফুদ্দিন সোজ়, মহসিনা কিদোয়াই, কার্তি চিদম্বরম, সন্দীপ দীক্ষিতের মতো নেতারা। তিনি দলের অন্তর্বর্তী সভানেত্রী সনিয়ার সঙ্গে কথা বলেছেন। ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ কেরলে থাকাকালীন দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে রাহুলের সঙ্গে। এমনকি, কথা হয়েছে প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরার সঙ্গেও। রাহুলেরা তাঁকে পরিষ্কার করেই বলেছেন, এই নির্বাচনে গান্ধী পরিবারের ভূমিকা থাকবে না। দেশের বহু রাজ্যের কংগ্রেস থেকে উপুর্যপুরি অনুরোধ সত্ত্বেও রাহুল নিজেও প্রার্থী হননি। রাহুলদের এই ‘আশ্বাস-বার্তা’ সঙ্গে নিয়েই ভোটের ময়দানে নেমে রাজ্য সফর শুরু করেছেন তারুর। আনুষ্ঠানিক ভাবে তাঁর বক্তব্য, ‘‘এটা আমি এবং খড়গে— দুই ব্যক্তির প্রতিদ্বন্দ্বিতা নয়। একটা বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই, যার মূল উদ্দেশ্য কংগ্রেসকে আরও শক্তিশালী করা।’’
তিরুঅনন্তপুরমের সাংসদ তারুরের প্রথম জীবনের একাংশ কেটেছিল কলকাতাতেই। ফরেন সার্ভিসে যাওয়ার আগে কলকাতায় সেন্ট জ়েভিয়ার্স কলেজের ছাত্র ছিলেন। পরিবার ছিল এই শহরে। তাঁর বোন শোভনা তিরুঅনন্তপুরমে থেকেও এখনও ঝরঝরে বাংলা বলতে পারেন। কলকাতায় সাহিত্য উৎসবে সুযোগ পেলেই ঘুরে যেতে পছন্দ করেন তারুর। খড়্গের তুলনায় বাংলার কংগ্রেসে তাঁকে পছন্দ করার লোকও কম নয়। এ রাজ্যের এক কংগ্রেস নেতার কথায়, ‘‘দু’বছরের মধ্যে দেশে গুরুত্বপূর্ণ লোকসভার নির্বাচন। এখন সামনের দিকে তাকানোর সময়। এমতাবস্থায় ৮০ বছরের খড়্গের তুলনায় তারুর অনেক গ্রহণযোগ্য মুখ। ভারতের সংস্কৃতি, রাজনীতিকে তাঁর মতো প্রাঞ্জল করে তুলে ধরতে কে পারবে? আর গান্ধী পরিবারের ‘পছন্দের লোক’ বনাম ‘বিদ্রোহী’ নেতার লড়াই, এই কথাগুলো আমাদের দলের মধ্যে যাঁরা বলছেন, তাঁরা বিজেপির হাতেই অস্ত্র তুলে দিচ্ছেন!’’
কংগ্রেস রাজনীতির অভিজ্ঞ নেতারা অবশ্য বলছেন, এ সব ক্ষেত্রে ‘উপর’ থেকে বার্তা আসে। ব্যালটে সেই বার্তা মেনেই ভোট হয়ে যায়। তারুরের লড়াই এবং পরিশ্রমের পরিণাম কী হবে, আপাতত তার প্রতীক্ষা জারি থাকছে!