গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
তিন মাস আগে রাজস্থান, ছত্তীসগঢ়, মধ্যপ্রদেশের বিধানসভা ভোটে ভরাডুবির পরেই কংগ্রেসের অন্দরে প্রশ্ন উঠেছিল। এ বার প্রকাশ্যে আনলেন দলের নেতা আনন্দ শর্মা। বৃহস্পতিবার তিনি বললেন, ‘‘জাতগণনার দাবি ইন্দিরা এবং রাজীব গান্ধীর চিন্তাধারার পরিপন্থী। সরকারি চাকরিতে জাতভিত্তিক সুবিধা পাইয়ে দেওয়া বেকারত্বের সমস্যার স্থায়ী সমাধান হতে পারে না।’’
রাহুল গান্ধীর জাতগণনার প্রতিশ্রুতিকে কার্যত চ্যালেঞ্জ জানিয়ে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গেকে পাঠানো চিঠিতে আনন্দ লিখেছেন, ‘‘কংগ্রেস তার ইতিহাসে কখনওই জাতপাতের রাজনীতিকে অনুমোদন করেনি। জাতপাতের রাজনীতি আদতে গণতন্ত্রের পক্ষে ক্ষতিকর।’’ এ প্রসঙ্গে ১৯৮০ সালের লোকসভা ভোটে ইন্দিরার স্লোগান ‘না জাত পর, না পাত পর, মোহর লাগেগি হাত পর’-এর উল্লেখও করেন তিনি।
হিন্দিবলয়ের তিন রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের সময় অনগ্রসর শ্রেণির ভোট ‘পাখির চোখ’ করেছিলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। ভোটের প্রচারে গিয়ে বার বার তিনি বলেছিলেন, বেকারত্ব মোকাবিলার প্রথম পদক্ষেপ হল জাতগণনা। কারণ জাতগণনা হলেই বোঝা যাবে সমাজের কোন অংশের কতখানি আর্থিক উন্নতি প্রয়োজন। কারা চাকরি পাচ্ছেন, কারা পাচ্ছেন না। কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, ছত্তীসগঢ়ে জাতগণনা করা হবে বলেও প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
কিন্তু তিন রাজ্যের ভোটে বিজেপির কাছে পর্যুদস্ত হয়েছিল কংগ্রেস। তার পরেই রাহুলের ওই ‘কৌশল’ নিয়ে দলের অন্দরে প্রশ্ন ওঠে। কংগ্রেস নেতৃত্বের বড় অংশের অভিযোগ, জাতগণনা নিয়ে প্রচার চালাতে গিয়ে চিরাচরিত উচ্চবর্ণের ভোটব্যাঙ্ক পুরোপুরি হাতছাড়া হয়ে গিয়েছে কংগ্রেসের। বদলে ওবিসি ভোটও তেমন জোটেনি। ‘ইন্ডিয়া’র তৎকালীন শরিক নীতীশ কুমারের ‘পাতা ফাঁদে’ পা দিতে গিয়েই কংগ্রেসের ওই বিপর্যয় বলেও অভিযোগ উঠেছিল।
২০২০ সালে কংগ্রেসের অন্দরে ‘সুনেতৃত্বের অভাব এবং সাংগঠনিক সমস্যা’ তুলে ধরে অন্তর্বর্তী তৎকালীন সভানেত্রী সনিয়াকে চিঠি পাঠিয়েছিলেন ২৩ জন নেতা। কংগ্রেসের অন্দরে তাঁরা পরিচিত ‘জি-২৩’ হিসেবে। একদা গান্ধী পরিবারের ঘনিষ্ঠ আনন্দ সেই তালিকারই অন্যতম। ‘জি-২৩’-এর সদস্য গুলাম নবি আজাদ, কপিল সিব্বল, জিতিন প্রসাদ, মিলিন্দ দেওরারা ইতিমধ্যেই দল ছেড়েছেন। ঘটনাচক্রে, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আনন্দের রাজ্য হিমাচলে সম্প্রতি ভাঙনের মুখে দাঁড়িয়েছে কংগ্রেস।