বিরোধী শিবিরে খুশির জোয়ার। ছবি: এপি।
করোনার চেয়েও মধ্যপ্রদেশে কমল নাথ সরকারের পতন যেন আরও বেশি আতঙ্ক ছড়িয়েছে কংগ্রেসের অন্দরমহলে। জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার অনুগামী যে ২২ জন বিধায়কের পদত্যাগের জেরে আসন টলেছিল কমলের, আজ তাঁরা যোগও দিলেন বিজেপিতে।
১৫ মাস আগে মধ্যপ্রদেশে ১৫ বছরের বিজেপি সরকারকে সরিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল কংগ্রেস। মোদী-ঝড়ের বিরুদ্ধে যে রুখে দাঁড়ানো সম্ভব, কংগ্রেস নেতাদের মধ্যে সেই বিশ্বাসটা জুগিয়েছিল রাজস্থান-ছত্তীসগঢ়ের জয়ও। কিন্তু কমল সরকারের পতনের পরেই এ বার তিনটি বিপদের গন্ধ পাচ্ছেন নেতৃত্ব। প্রথমত, মধ্যপ্রদেশে তিনটি রাজ্যসভা আসনের মধ্যে আপাতত একটিতেই সন্তুষ্ট থাকতে হবে। বিজেপির জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া ও সুমের সিংহ সোলাঙ্কি দু’টি আসনে জিতবেন। তাই তৃতীয় আসনে স্রেফ দিগ্বিজয় সিংহকে জিতিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হবে কংগ্রেসকে। দ্বিতীয়ত, ২৫টি বিধানসভা আসনের উপনির্বাচনে ফের ধাক্কা আসতে পারে। আর তৃতীয়ত, গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ধাক্কাটা লাগতে পারে অন্য রাজ্যেও। আপাতত এটাই বেশি ভাবাচ্ছে কংগ্রেসকে।
জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ এবং তার জেরে মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেসের ক্ষমতা হারানো দেখে এআইসিসি-র নেতারা মনে করছেন, দলের মধ্যে নবীন বনাম প্রবীণ বিবাদ এবং কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সিদ্ধান্তগ্রহণের অক্ষমতারই খেসারত দিতে হল এখানে। বিবাদের জেরে প্রবীণ-ব্রিগেড ব্যাকফুটে চলে গেল কি না, সে প্রশ্নও উঠছে। কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির এক নেতার বিশ্লেষণ, ‘‘রাহুল গাঁধীর পরে সনিয়া গাঁধী ফের কংগ্রেস সভানেত্রীর পদে ফিরে আসায় প্রবীণ ব্রিগেড দলের ক্ষমতা কুক্ষিগত করে ফেলেছিল। তরুণ প্রজন্মের নেতারা ক্রমশ কোণঠাসা হয়ে পড়ছিলেন। জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, সচিন পাইলটদের বদলে অশোক গহলৌত বা দিগ্বিজয় সিংহেরাই প্রাধান্য পাচ্ছিলেন। কিন্তু সিন্ধিয়ার প্রত্যাঘাত প্রবীণ ব্রিগেডকে চাপে ফেলে দিল।’’
আরও পড়ুন: করোনা ঠেকাতে ‘জনতা কার্ফু’, কোন কোন স্বাস্থ্যবিধি মানবেন
রাজস্থানে গহলৌত ও পাইলটের মধ্যে টানাপড়েন চলছে। ছত্তীসগঢ়েও মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেলের সঙ্গে রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী টি এস সিংহ দেওয়ের মতভেদ প্রায়ই প্রকাশ্যে আসছে। কিন্তু রাজ্যে-রাজ্যে দলের মধ্যে এই অসন্তোষ মেটাতে পারছেন না শীর্ষনেতৃত্ব। ফলে কোথায় কখন বোমা ফাটবে, সেই আশঙ্কা থাকছেই। এআইসিসি সদর দফতরে ঢোকার মুখে করোনা-মোকাবিলায় স্যানিটাইজ়ার রাখা হলেও, এই বিপদ কী ভাবে রোখা সম্ভব, তার উত্তর মিলছে না।
সিন্ধিয়ার অনুগামী ২২ বিধায়ক পদত্যাগ করে বিজেপিতে গিয়েছেন। দু’জন বিধায়কের আগেই মৃত্যু হয়েছিল। বিজেপিরও এক জন পদত্যাগ করেছেন। তাই মধ্যপ্রদেশ বিধানসভার ২৩০টি আসনের মধ্যে ২৫টিতে উপনির্বাচন হবে। কংগ্রেসের ঝুলিতে থাকা ২২টি আসনের অধিকাংশই গ্বালিয়র-চম্বল এলাকায়। সেখানে সিন্ধিয়ার প্রভাব রয়েছে। বিজেপির কাছে এখন ১০৭ বিধায়ক। সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য ১১৬ দরকার। ২৫টি আসনের সিংহভাগ জিততেই বিজেপি ঝাঁপাবে। এসপি, বিএসপি, নির্দল মিলিয়ে ৭ জন বিধায়ক। তাঁরা বিজেপি সরকারকে সমর্থনে রাজি হলেও বিজেপি নিজেদের বিধায়কদের জিতিয়ে আনতেই বেশি আগ্রহী বলে মত অনেকের।