ছবি পিটিআই।
প্রতিষেধকের ব্যাপারে এক দেশ এক দাম নীতি না নিয়ে উল্টে মোদী সরকার প্রতিষেধক সংস্থাগুলিকে ১.১১ লক্ষ কোটি মুনাফা করার পথ খুলে দিয়েছে বলে অভিযোগ আনল কংগ্রেস। এই নীতি বৈষম্যমূলক ও অসংবেদনশীল বলে আখ্যা দিয়ে অবিলম্বে গোটা দেশে প্রতিষেধকের জন্য এক দাম স্থির করার দাবি জানিয়েছে তারা।
কংগ্রেস নেতা রণদীপ সুরজেওয়ালার অভিযোগ, সিরাম ইনস্টিটিউট ও ভারত বায়োটেক সংস্থাকে বেশি দামে প্রতিষেধক বিক্রির সুযোগ করে দিয়ে আসলে ওই দুই সংস্থাকে ১.১১ লক্ষ কোটি টাকা মুনাফা করার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। পরিসংখ্যান তুলে ধরে রবিবার রণদীপ বলেন, সিরামের কোভিশিল্ড প্রতিষেধক ১৮-৪৪ বছরের ব্যক্তিদের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল থেকে যথাক্রমে ৪০০ ও ৬০০ টাকায় কিনতে হবে। সেখানে ভারত বায়োটেকের কোভ্যাক্সিনের দাম সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের জন্য ৬০০ ও ১২০০ টাকা ধার্য করা হয়েছে। সুরজেওয়ালার দাবি, ‘‘৪৫ বছরের নীচে দেশে ১০১ কোটি মানুষ রয়েছেন। ওই ১০১ কোটির জন্য আমাদের ২০২ কোটি প্রতিষেধক প্রয়োজন রয়েছে। যদি ধরে নেওয়া হয়, এদের মধ্যে অর্ধেক রাজ্য সরকারের মাধ্যমে প্রতিষেধক নেবেন ও বাকি অর্ধেক বেসরকারি হাসপাতাল থেকে নিজেরাই গ্যাঁটের টাকা খরচ করে প্রতিষেধক নেবেন, তা হলে সিরাম ইনস্টিটিউট ও ভারত বায়োটেক যথাক্রমে ৩৫,৩৫০ কোটি ও ৭৫,৭৫০ কোটি টাকা মুনাফা করবে। সব মিলিয়ে মুনাফার পরিমাণ দাঁড়াবে ১,১১,১০০ কোটি টাকা।’’
গোটা দেশ যখন অতিমারির কবলে, রোজ কয়েক হাজার লোক মারা যাচ্ছেন, তখন কী ভাবে এত মুনাফা করতে দিচ্ছে সরকার? প্রশ্ন তুলেছেন সুরজেওয়ালা। তাঁর হুঁশিয়ারি, এর জন্য আগামী দিনে আমজনতার কাছে প্রধানমন্ত্রীকে জবাব দিতে হবে।
রাহুল গাঁধীও টুইটারে সরব হয়ে লিখেছেন, করোনা সংক্রমণের প্রকৃত চিত্রকে গোপন করে প্রধানমন্ত্রীর ভাবমূর্তিকে বাঁচাতেই এখন সর্বশক্তি দিয়ে নেমেছে কেন্দ্র। সংক্রমণের প্রথম দফাতেই অভিযোগ উঠেছিল যে, সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা ও মৃতদের সম্পর্কে তথ্য সঠিক ভাবে লিপিবদ্ধ করা হয়নি। এখন দ্বিতীয় দফায় সংক্রমণের গ্রাফ যখন অতীতের সমস্ত রেকর্ডকে ভেঙে দিয়েছে, তখনও কেন্দ্র ও বিজেপ শাসিত রাজ্যগুলি সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা গোপন করতে ঝাঁপিয়েছে বলে তাঁর অভিযোগ। রাহুলের টুইট, ‘‘সত্যের উপর পর্দা ফেলে, অক্সিজেন অভাবের কথা অস্বীকার করে, প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যা নথিভুক্ত না করে ভারত সরকার প্রধানমন্ত্রীর ভাবমূর্তিকে বাঁচাতে সব ধরনের চেষ্টায় ব্যস্ত।’’ তিনি দলের কর্মীদের সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি ছেড়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।
১ মে থেকে ১৮-৪৪ বছরের জন্য টিকাকরণ অভিযান শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। কিন্তু আজ রাজ্যগুলিকে নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, যারা কোউইন সিস্টেমে নাম লেখাবেন তারাই টিকা পাবেন। টিকাকেন্দ্র ভিড় ও বিশৃঙ্খলা এড়াতে সরাসরি টিকাকেন্দ্রে গিয়ে প্রতিষেধক নেওয়ার আগের সিদ্ধান্ত বাতিল করে কেন্দ্র। আজ কংগ্রেসশাসিত রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রীরা টিকার অভাব সত্ত্বেও ১ মে থেকে ১৮-৪৪ বছরের ব্যক্তিদের টিকাকরণ শুরু করাকে কার্যত দেখনদারির রাজনীতি হিসাবে ব্যাখ্যা করেছেন। রাজস্থানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী রঘু শর্মার কথায়, প্রতিষেধক থাকলে তো মানুষ পাবেন। প্রতিষেধকই নেই, অথচ সরকার টিকাকরণ অভিযান হাতে নিয়ে নিয়েছে। অভিযান হবে কী করে? সিরাম ইনস্টিটিউট রাজস্থান সরকারকে জানিয়েছে, তাদের কাছে কেন্দ্রের যে বরাত রয়েছে সেই বরাত ১৫ মে-র আগে মেটানো সম্ভব হবে না। তার পরে রাজ্যগুলিকে দেওয়া যাবে। তা হলে ১৮-৪৪ বছরের ব্যক্তিদের প্রতিষেধক কোথা থেকে দেবে রাজ্যগুলি? প্রশ্ন কংগ্রেসের।