আরএসএসের সাধারণ সম্পাদক দত্তাত্রেয় হোসাবলে। ছবি: পিটিআই।
ভারতের সংবিধানে ‘সংখ্যালঘু’ সম্পর্কে ভাবনার পুনর্বিবেচনা করা উচিত বলে সওয়াল করলেন আরএসএসের সাধারণ সম্পাদক দত্তাত্রেয় হোসাবলে। লোকসভা নির্বাচনের ঠিক আগে নাগপুরে আরএসএসের তিন দিনের অখিল ভারতীয় প্রতিনিধি সভায় আজ হোসাবলে আগামী তিন বছরের জন্য দ্বিতীয় বার সঙ্ঘের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। দায়িত্ব নিয়েই তিনি বলেছেন, ‘‘যখন কাউকে সংখ্যালঘু বলা হয়, তখন সমাজে বিভাজন তৈরি হয়।’’
বিজেপি নেতাদের মন্তব্যকে হাতিয়ার করে বিরোধীরা আগেই অভিযোগ তুলেছেন, লোকসভায় দুই-তৃতীয়াংশ আসনে জিতে ফিরে সংবিধান বদলাতে চাইছেন বলেই নরেন্দ্র মোদী এ বার ৩৭০ আসন জয়ের লক্ষ্য নিয়েছেন। আজ হোসাবলে বলেছেন, ‘‘সংবিধানে সংখ্যালঘু বিষয়ে যে ভাবনা রয়েছে, তা পুনর্বিবেচনা করা জরুরি। এই দেশ তো সকলের। কিন্তু গত কয়েক দশক ধরে কিছু সম্প্রদায়কে সংখ্যালঘু বলার প্রথা চলছে। সঙ্ঘ বরাবর এই সংখ্যালঘু রাজনীতির বিরোধিতা করে এসেছে।’’
আরএসএস কি মুসলিম, খ্রিস্টানদের সংখ্যালঘু তকমা কেড়ে সংবিধানে সংখ্যালঘুদের অধিকারে হস্তক্ষেপ করতে চাইছে? হোসাবলে বলেছেন, ‘‘সাধারণত মুসলিম, খ্রিস্টানদের সংখ্যালঘু বলা হয়। সমস্ত সঙ্ঘ প্রধান তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন। ওই সম্প্রদায় থেকেও অনেকে সঙ্ঘের কর্মী আছেন। আমরা তাঁদের শো-পিসের মতো দেখাই না। আমরা জাতীয়তার ভিত্তিতে সবাইকে হিন্দু বলে মনে করি। যাঁরা নিজেদের ধর্মের জন্য এই ধারণা মানেন না, তাঁদের সঙ্গে আমাদের মত বিনিময় চলে।’’
নাগরিকত্ব সংশোধন আইন চালু করে মুসলিমদের বাদ দিয়ে অন্যান্যদের ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে বিরোধীরা অভিযোগ তুলেছেন। অযোধ্যায় রামমন্দিরের পরে এ বার কাশীর জ্ঞানবাপী মসজিদ এবং মথুরার ইদগা নিয়ে হাওয়া গরম হচ্ছে। ঠিক এই সময় হোসাবলের নতুন করে আরএসএসের সাধারণ সম্পাদকের পদে ফিরে আসায় মোদী সরকার তথা বিজেপির সঙ্গে সঙ্ঘের সমন্বয় আরও মসৃণ হবে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মত। তাঁদের মতে, এই মসৃণ সমন্বয়ের জন্যই সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত মোদী-ঘনিষ্ঠ হোসাবলেকে ২০২১-এ আরএসএসের সাধারণ সম্পাদকের পদে নিয়ে এসেছিলেন।
আজ হোসাবলে উত্তরাখণ্ডে অভিন্ন দেওয়ানি বিধিকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, সকলের সঙ্গে আলোচনা করে গোটা দেশে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করা উচিত। তবে মথুরা-কাশীতে অযোধ্যার মতো রাম জন্মভূমি আন্দোলনের প্রয়োজন নেই বলে মত দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, সাধুসন্তরা দাবি তুলেছেন। কিন্তু সব অসুখের একই দাওয়াই নয়। লোকসভা ভোটে আরএসএসের সরাসরি কোনও ভূমিকা থাকবে না বলে দাবি করলেও হোসাবলে জানিয়েছেন, আরএসএস জাতীয়তাবাদের বিষয়ে জনমত গড়ে তোলার কাজ করবে। গত দশ বছরে মোদী সরকারের কাজ নিয়ে তাঁর মন্তব্য, ‘‘দেশে উন্নয়ন হয়েছে। গোটা বিশ্ব এই শতককে ভারতের শতক বলছে। এ বার দেশের মানুষ ভোটে রায় দেবেন।’’
আজ সন্দেশখালি নিয়েও সরব হয়েছেন হোসাবলে। তাঁর বক্তব্য, মহিলাদের উপর এই ধরনের অত্যাচারে সমাজে আক্রোশ তৈরি হয়। মণিপুরের হিংসার ফলে সমাজে ক্ষত তৈরি হয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন হোসাবলে।
২০২৫-এ আরএসএসের শতবর্ষ শুরু হচ্ছে। হোসাবলে বলেছেন, তার আগে দেশের প্রতিটি কোণায় আরএসএসের শাখা ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়েছেন তাঁরা। আরএসএসের সংগঠন, প্রভাব দুই-ই বেড়েছে। এই ‘সংগঠনের জাল’ ও ‘নেটওয়ার্ক’-কে কাজে লাগিয়ে রামমন্দির উদ্বোধনের আগে আরএসএস মাত্র ১৫ দিনে ২০ কোটি পরিবারের ঘরে ‘অক্ষত চাল’ পৌঁছে দিয়েছে। নির্বাচনী বন্ড নিয়ে বিতর্কে এ দিন হোসাবলে বলেন, এটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। কোথাও সংশোধনের প্রয়োজন থাকলে তা করা যেতে পারে।