প্রতীকী ছবি।
সংশোধিত আইনে টাকার অঙ্ক আর সময়সীমা লেখা রয়েছে স্পষ্ট। তা উল্লেখ করেই রবিবার ব্যাঙ্কে আমানতকারীদের ফের এক বার নিশ্চিন্ত করতে চাইলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। বললেন, কোনও ব্যাঙ্ক দেউলিয়া ঘোষণা করলে কিংবা আর্থিক সঙ্কটের কারণে নির্দিষ্ট সময়ে টাকা ফেরাতে ব্যর্থ হলে, অ্যাকাউন্ট পিছু পাঁচ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ৯০ দিনের মধ্যেই ফেরত পাবেন আমানতকারীরা। এ ভাবে নতুন আইনে বিমার দৌলতে ধুঁকতে থাকা ব্যাঙ্কগুলির এক লক্ষেরও বেশি আমানতকারী প্রায় ১,৩০০ কোটি টাকা পেয়েছেন বলেও মোদীর দাবি।
বিভিন্ন ব্যাঙ্কে আর্থিক জালিয়াতির অভিযোগ, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক বেসরকারিকরণ, বিলগ্নিকরণ এবং মিশিয়ে দেওয়ার উদ্যোগের মতো নানা কারণে বিরোধীদের তোপের মুখে মোদী সরকার। প্রশ্ন উঠেছে, যে ভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক বেসরকারিকরণ ও বিলগ্নিকরণের কথা বলা হচ্ছে, তাতে সেখানে টাকা জমা রেখে কতখানি সুরক্ষিত বোধ করবেন সাধারণ মানুষ? এই অবস্থায় দেশের ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা যে মজবুত এবং সরকার যে আমানতকারীদের সঞ্চয়ের সুরক্ষায় দায়বদ্ধ, কার্যত সেই বার্তাই অর্থমন্ত্রীকে পাশে নিয়ে রবিবার দিতে
চেয়েছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী। মোদীর কথায়, ‘‘গরিব, মধ্যবিত্তের উদ্বেগ মাথায় রেখেই আমরা বিমার সীমা বাড়িয়েছি। আগে কবে এই টাকা মিলবে, তার সময়সীমা ছিল না। আমাদের সরকার তা বেঁধে দিয়েছে। ৯০ দিনের মধ্যে, অর্থাৎ তিন মাস। কোনও ব্যাঙ্ক ডুবলেও, গ্রাহকেরা ওই সময়ের মধ্যেই বিমার টাকা পাবেন।’’
কোনও ব্যাঙ্ক সময়ে সুদ-সহ আমানতের মূল টাকা ফেরত দিতে না পারলে, তা মার যাওয়া রুখতে ১৯৬১ সালের ডিপোজ়িট ইনশিয়োরেন্স অ্যান্ড ক্রেডিট গ্যারান্টি কর্পোরেশন (ডিআইসিজিসি) আইন মারফত বিমার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু এত দিন অ্যাকাউন্ট পিছু পাওয়া যেত এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত। গত অগস্টে আইন সংশোধন করে বিমার অঙ্ক বাড়িয়ে করা হয় ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত। পাশাপাশি বলা হয়, রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কের থেকে আমানতকারীদের টাকা তোলায় নিষেধাজ্ঞা জারির পর ৯০ দিনের মধ্যে শর্ত অনুযায়ী আমানতের বিমার টাকা পাবেন গ্রাহক। প্রশ্ন ওঠে, কারও অ্যাকাউন্টে ৫ লক্ষের বেশি টাকা থাকলে কী হবে? সরকারের পাল্টা দাবি, ৯৮% গ্রাহকেরই অ্যাকাউন্টে টাকার পরিমাণ ৫ লক্ষ বা তার কম। ফলে তাঁদের সকলের জন্য ব্যাঙ্কে টাকা রাখার ঝুঁকি কার্যত শূন্য।
মোদীর মতো ৯০ দিনের বিষয়টিতে জোর দিয়েছেন নির্মলাও। তাঁর দাবি, ‘‘ব্যাঙ্ক লাল বাতি জ্বালার ক্ষেত্রে পাঁচ, ছয়, সাত বছর অপেক্ষার পরেও গ্রাহক টাকা পাননি, এমন ঘটনা আগে ঘটেছে।’’ প্রতিশ্রুতি, এ বার সেই ছবি পাল্টাবে। মোদীর বক্তব্য, নতুন আইনে ধুঁকতে থাকা ব্যাঙ্কগুলির এক লক্ষেরও বেশি আমানতকারী প্রায় ১,৩০০ কোটি টাকা পেয়েছেন। আরবিআইয়ের নিষেধাজ্ঞা চাপানো আরও কিছু ব্যাঙ্কের প্রায় তিন লক্ষ গ্রাহক শীঘ্রই তাঁদের প্রাপ্য পাবেন। বস্তুত, ডিআইসিজিসি প্রথম পর্যায়ে ১৬টি আরবান কোঅপারেটিভ ব্যাঙ্কের গ্রাহকদের দাবি মিটিয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে টাকা মেটানোর কথা ৩১ ডিসেম্বর।
এই সংস্কারকে মাইলফলক বলে দাবি করেছেন শীর্ষ ব্যাঙ্কের গভর্নর শক্তিকান্ত দাসও। তবে একই সঙ্গে আমানতকারীদের প্রতি তাঁর পরামর্শ, রিটার্ন যেখানে বেশি, সেখানে বেশি ঝুঁকিও। তাই চড়া রিটার্নের পিছনে ছোটার সময়ে সতর্ক থাকুন তাঁরা। গভর্নরের কথায়, ‘‘একটি ব্যাঙ্ক বেশি সুদ দিচ্ছে বলেই সেখানে হুড়মুড়িয়ে টাকা রাখার বদলে বরং সতর্ক থাকা দরকার। অভিজ্ঞতা বলে, এর সঙ্গে চড়া ঝুঁকিও জড়িয়ে থাকে।’’ যদিও বাড়তি সুদ দিয়েও ব্যাঙ্কের লাভজনক ব্যবসার ইতিহাস যে রয়েছে, তা-ও মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি। মোদী ও নির্মলা উভয়েরই দাবি, ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থাকে মজবুত রাখতে আমানতকারীদের সঞ্চয় সুরক্ষিত রাখা জরুরি। নির্মলার দাবি, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির অবস্থা এখন এতটাই ভাল যে, তারা নিজেরাই বাজার থেকে টাকা তুলতে পারছে।