এই ধর্মঘট ‘আলাদা’, দাবি উদ্যোক্তাদের

কলকাতায় এ দিন শ্রমিক সংগঠনগুলির তরফে অনাদি সাহু, উজ্জ্বল চৌধুরী, বাসুদেব বসুরা জানিয়েছেন, ধর্মঘটের দিন সকাল থেকেই তাঁদের নেতা-কর্মীরা রাস্তায় থাকবেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা ও নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২০ ০১:৪৬
Share:

ধর্মঘটে রাজ্য সরকার যেন বাধা না দেয়, হুঁশিয়ারি ট্রেড ইউনিয়ন নেতৃত্বের। প্রেস ক্লাবে সোমবার।—নিজস্ব চিত্র।

শ্রমিক, কর্মচারী ও কৃষকদের দাবিদাওয়া ছিলই। তার সঙ্গে যোগ হয়ে গিয়েছে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন ও জাতীয় নাগরিকপঞ্জির (এনআরসি) বিরোধিতা। আরও টাটকা প্রতিবাদ চলছে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের উপরে ‘গেরুয়া তাণ্ডবে’র। এই পরিস্থিতিতে কাল, বুধবার দেশ জুড়ে সাধারণ ধর্মঘটের পালে বাড়তি হাওয়া লাগবে বলেই আশা করছে বিভিন্ন শ্রমিক, কৃষক ও ছাত্র সংগঠন।

Advertisement

সিটু, এআইটিইউসি, আইএনটিইউসি-সহ শ্রমিক সংগঠনের সর্বভারতীয় ও রাজ্য নেতৃত্ব এবং বামপন্থী কৃষক সংগঠনগুলির সমন্বয় কমিটির নেতারা সোমবার দিল্লি ও কলকাতায় একই সুরে দাবি করেছেন, অতীতের নানা ধর্মঘটের সঙ্গে এ বারের ধর্মঘটের পরিস্থিতি আলাদা। নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহদের সরকার অর্থনীতির এমন হাল করেছে, যার ফলে সব ধরনের খেটে খাওয়া মানুষ বিপন্ন। সেই সমস্যার সমাধানে নজর না দিয়ে বিজেপির সরকার ধর্মের নামে বিভাজন করছে এবং প্রতিবাদীদের উপরে ফ্যাসিস্ত আক্রমণ চলছে বলে ধর্মঘটীদের অভিযোগ। তাঁদের আশা, মানুষ যে ‘স্বতঃস্ফূর্ত ক্ষোভে’ ফুঁসছেন, তার প্রতিফলন ধর্মঘটে পড়বে। সিটুর তপন সেন, এআইটিউসি-র অমরজিৎ কউরদের দাবি, এ বারের ধর্মঘটে দেশ জুড়ে ২৫ লক্ষ শ্রমিক যোগ দেবেন। তার মধ্যে কয়লা, তেল, প্রতিরক্ষার মতো ক্ষেত্রও আছে। শিবসেনাও এ দিন জানিয়েছে, তাদের শ্রমিক সংগঠন কাল ধর্মঘটে যাবে।

বিগত কয়েক বছরে এমন ধর্মঘটের সময়ে দেশের অধিকাংশ রাজ্যে ক্ষমতায় ছিল বিজেপির সরকার। এখন বেশ কিছু রাজ্যে অ-বিজেপি সরকার ক্ষমতায় এসেছে। তার ফলে প্রশাসনিক স্তরে আগের মতো ধর্মঘট দমনের চেষ্টা হবে না বলেই বাম শ্রমিক ও কৃষক নেতৃত্বের আশা। বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার বরাবরই ধর্মঘটের বিরুদ্ধে। এ বারও ধর্মঘটের দিন সরকারি দফতরে হাজিরার জন্য প্রশাসনিক নির্দেশিকা জারি হয়েছে। কিন্তু ধর্মঘটের বিরোধিতায় রাস্তায় নেমে তৃণমূলের ‘হুঙ্কার’ যে এখনও আগের চেয়ে কম, তা মানছেন বাম ও কংগ্রেস নেতৃত্ব।

Advertisement

কলকাতায় এ দিন শ্রমিক সংগঠনগুলির তরফে অনাদি সাহু, উজ্জ্বল চৌধুরী, বাসুদেব বসুরা জানিয়েছেন, ধর্মঘটের দিন সকাল থেকেই তাঁদের নেতা-কর্মীরা রাস্তায় থাকবেন। মিছিল হবে, পিকেটিং হবে। কৃষক সংগঠনগুলির সমন্বয় কমিটির তরফে কার্তিক পাল, হাফিজ আসম সৈরানি, অভীক সাহাদের দাবি, গ্রামাঞ্চলে ধর্মঘটের প্রচারে তাঁরা ‘ভাল সাড়া’ পেয়েছেন। নানা জায়গায় রাস্তা বা রেল অবরোধ হতে পারে বলেও তাঁরা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। সেই সঙ্গেই তাঁদের বক্তব্য, ‘‘নাগরিকত্ব আইন (সিএএ), এনআরসি-র বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রী রাস্তায় নেমে মিছিল-প্রতিবাদ করছেন। সে সব মুখোশ না মুখ, তার পরীক্ষা হবে ৮ তারিখ। জোর করে ধর্মঘট ভাঙা হলে বুঝতে হবে, তাঁর প্রতিবাদ আসলে মুখোশ!’’

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্রের মতে, ‘‘এক দিকে মুখ্যমন্ত্রী সিএএ-এনআরসি’র বিরুদ্ধে রাস্তায় মিছিল করছেন আবার একই কারণে ধর্মঘটে অনুপস্থিত থাকলে কর্মজীবনের দিন কেটে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন। এটাকে আমরা মোদী সরকারের কাছে বার্তা পাঠানোর কৌশল বলেই মনে করছি।’’ বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান অবশ্য বলেন, ‘‘আদালতের নির্দেশ মাথায় রেখে সরকারি নির্দেশিকাকে রুটিন বলা যেতে পারে। কিন্তু ধর্মঘটের বিষয়কে সমর্থন করছি অথচ ধর্মঘটকে নয়— এই দ্বিচারিতা ছেড়ে তৃণমূল রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট করুক!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement