প্রতীকী ছবি।
বহুতল ভবনটি কলকাতা পুলিশের সদর দফতর লালবাজারের নাকের ডগায়। ‘বিকানের’ নামে ওই বহুতলের চারতলায় একটি শেয়ার ট্রেডিং সংস্থার দফতর থেকেই ঝাড়খণ্ডের তিন কংগ্রেস বিধায়কের কাছে হড় অঙ্কের টাকা গিয়েছিল বলে গোয়েন্দাদের সন্দেহ। সেই টাকা উদ্ধারের মামলাতেই ধৃত বিধায়কদের জেরার সূত্র ধরে মঙ্গলবার দুপুরে লালবাজারের উল্টো দিকের ওই বহুতল থেকে আরও তিন লক্ষ ৩১ হাজার ৭০০ টাকা এবং ২২৫টি রুপোর মুদ্রা উদ্ধার করল সিআইডি।
‘বিকানের’ ভবনে যে-শেয়ার ট্রেডিং সংস্থার দফতর থেকে টাকা ও মুদ্রা উদ্ধার হয়েছে, তার মালিক মহেন্দ্র আগরওয়াল পলাতক। অভিযোগ, তাঁর কাছ থেকেই ঝাড়খণ্ডের তিন বিধায়ক আরফান আনসারি, রাজেশ কাছাপ ও নমন বিক্সালের কাছে ৫০ লক্ষ টাকা গিয়েছিল। এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই ওই তিন কংগ্রেস বিধায়ক-সহ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সিআইডি-র দাবি, জেরার মুখে ধৃত বিধায়কেরা কবুল করেছেন যে, ঝাড়খণ্ডের কংগ্রেস এবং জেএমএমের জোট সরকার ফেলে দেওয়ার চক্রান্ত করেই প্রাথমিক ভাবে টাকা দেওয়া হয়েছিল। মোট কত টাকায় রফা হয়েছিল, তা জানার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা।
সিআইডি জানিয়েছে, ওই ৫০ লক্ষ টাকা মহেন্দ্রের অফিস থেকে তিন কংগ্রেস বিধায়কের কাছে পৌঁছে দেন ঝাড়খণ্ডের যুব কংগ্রেস নেতা প্রতীক কুমার। ইতিমধ্যে তাঁকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। টাকা নিয়ে রাঁচী যাওয়ার পথে শনিবার বিকেলে হাওড়ার পাঁচলায় ধরা পড়ে যান ওই বিধায়কেরা। জেরা করে এবং সংশ্লিষ্ট অন্য সূত্রে জানা যায়, ওই কংগ্রেস বিধায়কেরা সদর স্ট্রিটের একটি হোটেলে উঠেছিলেন। হোটেলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজে প্রতীককে স্কুটিতে চেপে হোটেল থেকে বেরোতে এবং ব্যাগ হাতে ঢুকতে দেখা গিয়েছে।
গোয়েন্দারা সোমবার মহেন্দ্রের এক আত্মীয়কে আটক করেন। সল্টলেকের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে পলাতক মহেন্দ্রের হদিস পাওয়া যায়নি। সিআইডি-র খবর, ওই ব্যবসায়ী ভিন্ রাজ্যে রয়েছেন বলে জানিয়েছে তাঁর পরিবার। মঙ্গলবার মহেন্দ্রের অফিসে গিয়ে দেখা যায়, সেটি বন্ধ। দু’ঘণ্টা পরে, বেলা ২টো নাগাদ অফিসের তালা ভেঙে গোয়েন্দার দল ভিতরে ঢোকে। প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে তল্লাশি চালানোর পরে শেষ পর্যন্ত আলমারি এবং ড্রয়ারের তালা ভাঙা হয়। টাকা ও রুপোর মুদ্রা ছিল সেখানেই। সেগুলি বাজেয়াপ্ত করা হয়। পাওয়া গিয়েছে ছ’টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের নথিপত্রও। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান সিআইডি-র আইজি (২) প্রণব কুমার এবং অতিরিক্ত এসএস শান্তি দাস। অফিসটি সিল করে দেয় সিআইডি।
গোয়েন্দা সূত্রের খবর, টাকার উৎস জানতে মহেন্দ্র ছাড়া ওই অফিসের কর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা দরকার। গোয়েন্দাদের অনুমান, হাওয়ালার মাধ্যমে ওই টাকা অসম থেকে শেয়ার ট্রেডিং অফিসে এসেছিল। ঝাড়খণ্ডের কংগ্রেস-জেএমএম সরকার ফেলার জন্য বিধায়ক ‘কেনাবেচা’ করতে সেই অর্থ ব্যবহার করা হচ্ছিল বলে গোয়েন্দাদের অভিযোগ। সিআইডি-র দাবি, ধৃতদের জেরা করে বেশ কিছু প্রভাবশালী রাজনীতিবিদের নাম উঠে এসেছে। তদন্তের স্বার্থে তাঁদেরও ডাকা হবে বলে একটি অংশের দাবি।