প্রধানমন্ত্রীর মুখে সুপ্রিম কোর্টের প্রশংসা শুনে হাতজোড় করলেন প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়। ছবি: টুইটার।
টানাপড়েনের মাঝেই স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে সু্প্রিম কোর্টের প্রশংসা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সৌজন্যের খামতি রাখলেন না প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়। দর্শকাসনে বসে তিনি পাল্টা হাতজোড় করে ধন্যবাদ জানালেন প্রধানমন্ত্রীকে।
সু্প্রিম কোর্টের গুরুত্বপূর্ণ রায়গুলি সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে আঞ্চলিক ভাষায় অনুবাদ করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেই উদ্যোগের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতা দিবসে বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের রায় এ বার পড়া যাবে বিভিন্ন জনের মাতৃভাষাতেও। এ জন্য সুপ্রিম কোর্টকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। আঞ্চলিক ভাষার গুরুত্ব বাড়ছে।’’ তখনই দর্শকাসনে বসে হাতজোড় করেন প্রধান বিচারপতি।
প্রজাতন্ত্র দিবস এবং প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষ্যে এ বছর সুপ্রিম কোর্ট নিজেদের ৯,৪২৩টি রায় আঞ্চলিক ভাষায় অনুবাদ করে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে। প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় জানিয়েছেন, এর মধ্যে ৮,৯৭৭টি রায় হিন্দিতে অনুবাদ করে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘যবে থেকে সুপ্রিম কোর্টের অস্তিত্ব রয়েছে দেশে, তবে থেকে তার দেওয়া ৩৫ হাজার গুরুত্বপূর্ণ রায় সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষায় অনুবাদ করাই আমাদের লক্ষ্য।’’ হিন্দি ছাড়াও সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে তাদের গুরুত্বপূর্ণ রায়গুলি বাংলা, ওড়িয়া, গুজরাতি, তামিল, অহমিয়া, খাসি, গারো, পঞ্জাবি এবং নেপালি ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে।
মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী জানান, আঞ্চলিক ভাষায় শিক্ষাদানের উপর তাঁর সরকার জোর দিয়েছে। এই প্রসঙ্গেই সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুবাদের কথা তুলে দেশের শীর্ষ আদালতকে ধন্যবাদ দেন তিনি। কিরেণ রিজিজু আইনমন্ত্রী থাকার সময় সু্প্রিম কোর্টের সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছিল কেন্দ্রের। বিচারপতি নিয়োগে ‘কলেজিয়াম ব্যবস্থার স্বচ্ছতা’ থেকে সমলিঙ্গে বিয়ের আইনি স্বীকৃতি সংক্রান্ত মামলায় সুপ্রিম কোর্টের অধিকার— বিভিন্ন বিষয়ে শীর্ষ আদালতের সমালোচনা করেছিলেন তিনি।
গত মে মাসে রিজিজুকে কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রীর পদ থেকে সরানো হয়। মনে করা হয়েছিল তার পর টানাপড়েন কিছুটা কমবে। কিন্তু আদতে তা হয়নি। সম্প্রতি রাজ্যসভায় মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক এবং নির্বাচনী আধিকারিক (নিয়োগ, কাজের শর্ত) বিল পেশ করা হয়েছে। সেখানে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, একটি প্যানেলের সুপারিশে শীর্ষ নির্বাচনী আধিকারিকদের নিয়োগ করবেন রাষ্ট্রপতি। সেই প্যানেলে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী, লোকসভার বিরোধী নেতা এবং প্রধানমন্ত্রীর মনোনীত এক জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। দেশের প্রধান বিচারপতিকে সেই প্যানেলে রাখা হয়নি। যদিও ২০২৩ সালের মার্চে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বলা হয়েছিল, দেশের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকদের নিয়োগ যে প্যানেলের সুপারিশে হবে, তাতে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী, লোকসভার বিরোধী দলনেতা এবং সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি। রাজ্যসভায় পেশ করা নতুন বিলে সেই রায়কে মান্যতা দেওয়া হয়নি। এর পরেই টানাপড়েন বাড়ে। আর সেই আবহে স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে মোদীর মুখে সুপ্রিম কোর্টের প্রশংসা তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।