পড়ুয়ার অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় তদন্তকারীদের হাতে এল নতুন তথ্য। —ফাইল চিত্র।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় নতুন তথ্য তদন্তকারীদের কাছে। মৃত ছাত্রের হস্টেলের ঘর থেকে যে চিঠি পাওয়া গিয়েছিল, সেটি ধৃত এক পড়ুয়া দীপশেখর দত্তেরই লেখা বলে পুলিশের কাছে দাবি করেছেন তিনি নিজে। তদন্তকারীরা সেই দাবি খতিয়ে দেখছেন।
ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় ইতিমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী তথা হস্টেলের আবাসিক সৌরভ চৌধুরী আর দুই বর্তমান পড়ুয়া মনোতোষ ঘোষ এবং দীপশেখরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তদন্তকারীদের সূত্রে খবর, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেলের যে ঘরে প্রথম বর্ষের ওই পড়ুয়া ‘অতিথি’ হিসাবে থাকছিলেন, সেই ঘর থেকে যে ডায়েরিটি উদ্ধার হয়েছিল তাতে একটি চিঠি লেখা ছিল। সেই চিঠিতে হাতের লেখা কার বা চিঠিটি মৃত পড়ুয়াকে দিয়ে জোর করে লেখানো হয়েছিল কি না তা নিয়ে ধৃত তিন জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তদন্তকারীদের সূত্রে খবর, জেরায় দীপশেখর প্রাথমিক ভাবে স্বীকার করেছেন যে, চিঠিটি তাঁরই লেখা।
মৃত পড়ুয়ার হস্টেলের ঘর থেকে পাওয়া চিঠি ঘিরে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু প্রশ্ন উঠেছে। চিঠিতে তারিখ রয়েছে ১০ অগস্ট। ৯ অগস্ট রাতে হস্টেলের তিন তলার বারান্দা থেকে পড়ে গিয়েছিলেন প্রথম বর্ষের ওই পড়ুয়া। এর পর তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এর পর বৃহস্পতিবার হাসপাতালেই মারা যান তিনি। তা হলে চিঠি কবে লেখা হল, তা ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের। চিঠিটির শেষে মৃত পড়ুয়ার নামে দু’টি সই কেন, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়েও। শুধু তা-ই নয়, চিঠিটি যে হেতু ডিনের উদ্দেশে লেখা, তা হলে সেটি ডায়েরির পাতায় কেন লেখা হল? কেন সাদা কাগজে লেখা হল না? উদ্ধার হওয়া চিঠি যদি ওই পড়ুয়ারই হয়ে থাকে, তা হলে তাঁকে ওই চিঠি লিখতে বাধ্য করা হয়েছিল কি না, তা-ও ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানার চেষ্টা চলছে। যদি সত্যিই তাকে দিয়ে জোর করে চিঠি লেখানো হয়ে থাকে, তা হলে তার পিছনে উদ্দেশ্য কী ছিল? এই প্রশ্নও ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের। যদিও মৃত পড়ুয়ার পরিবারের দাবি, এই চিঠির হাতের লেখা তার নয়।
যাদবপুরের হস্টেল থেকে ডায়েরি উদ্ধার হওয়ার পর শনিবার নদিয়ার রানাঘাটে মৃত পড়ুয়ার মামাবাড়ি থেকে দু’টি খাতা তদন্তকারীরা সংগ্রহ করেছেন, যে খাতায় ওই পড়ুয়ার হাতের লেখা রয়েছে। তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, উদ্ধার হওয়া ডায়েরির পাতায় চিঠির পাশাপাশি প্রথম বর্ষের ওই পড়ুয়ার একাধিক সইও মিলেছে। পড়ুয়ার হাতের লেখা এবং সই রয়েছে, এমন বেশ কিছু খাতা, ডায়েরি ও নথি ভাল করে খতিয়ে দেখে জানার চেষ্টা চলছে, চিঠিটির হাতের লেখা এবং সই কার? হাতের লেখা বিশারদকে দিয়ে সেগুলি পরীক্ষা করে দেখা হবে বলে খবর পুলিশ সূত্রে।
(পশ্চিমবঙ্গ শিশু সুরক্ষা কমিশনের উপদেষ্টা অনন্যা চক্রবর্তী রবিবার তাঁর একটি ফেসবুক পোস্টে যাদবপুরের মৃত ছাত্রের নাম না-লিখতে অনুরোধ করেছেন। এই মৃত্যুমামলা অপ্রাপ্তবয়স্কদের উপর যৌন নির্যাতন বিরোধী ‘পকসো’ আইনে হওয়া উচিত বলেও তাঁর অভিমত। কমিশনের উপদেষ্টার অনুরোধ মেনে এর পর আনন্দবাজার অনলাইন মৃত ছাত্রের নাম এবং ছবি প্রকাশে বিরত থাকছে।)