ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী বিষ্ণু দেও সাঁই। — ফাইল চিত্র।
আবার মাওবাদীদের আত্মসমর্পণ নীতিতে পরিবর্তন আনতে চলেছে ছত্তীসগঢ় সরকার। আত্মসমর্পণকারী মাওবাদীদের জন্য ‘সার্বিক’ উন্নয়ন, মোটা অঙ্কের টাকা নগদ পুরস্কার—এমন নানা সুযোগসুবিধাই আপাতত ছত্তীসগঢ় সরকারের নয়া ‘নকশাল আত্মসমর্পণ এবং আক্রান্তদের পুনর্বাসন নীতি ২০২৫’-র তুরুপের তাস। নতুন এই প্রকল্প ঘোষণা করেছেন ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী বিষ্ণু দেও সায়, যা শীঘ্রই কার্যকর হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই প্রকল্পের লক্ষ্য আত্মসমর্পণকারী মাওবাদীদের পুনর্বাসন, চাকরি, আর্থিক সহায়তা এবং আইনি সুরক্ষা প্রদান করা। পাশাপাশি, পুরস্কার দেওয়া হবে নিরাপত্তাকর্মীদেরও।
নতুন আত্মসমর্পণ নীতিতে মাওবাদী সংগঠনের রাজ্য কমিটি, আঞ্চলিক কমিটি, কেন্দ্রীয় কমিটি এবং পলিটব্যুরোর সদস্যদের মতো উচ্চপদস্থ ক্যাডারদের এককালীন পাঁচ লক্ষ টাকা অনুদান দেওয়া হবে। যদিও রাজ্যের তরফে এ সব পরিকল্পনা আগেও করা হয়েছে, তবে এ বার সেই পরিকল্পনাতেই কাঠামোগত নানা পরিবর্তন আনতে চলেছে রাজ্য। যাঁরা লাইট মেশিনগান (এলএমজি)-সহ আত্মসমর্পণ করবেন, তাঁরা পাঁচ লক্ষ টাকা নগদ পুরস্কারও পাবেন। যে সব ক্ষেত্রে মাওবাদী ইউনিটের ৮০ শতাংশ সদস্য একসঙ্গে আত্মসমর্পণ করবেন, সেখানে পুরস্কার দ্বিগুণ করা হবে। পাশাপাশি, আত্মসমর্পণকারী মাওবাদীদের পুনর্বাসনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে সন্তানদের শিক্ষা এবং চাকরির সহায়তা। মাওবাদীদের ধরিয়ে দিতে পুলিশকে সহায়তা করলে সাধারণ নাগরিকেরা ১০ লক্ষ টাকা পাবেন। মাওবাদীদের হামলায় নিহতদের জন্য ১৫-২৫ লক্ষ টাকা আর্থিক সহায়তার কথাও বলা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, নিরাপত্তাকর্মীদের জন্যও পুরস্কার হিসেবে নগদ পাঁচ লক্ষ টাকা অথবা সংশ্লিষ্ট মাওবাদীর মাথার দামের ১০ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
আত্মসমর্পণের পর মাওবাদীদের উপর নজর রাখবে একটি বিশেষ কমিটি। যদি ছয় মাস তাঁদের আচরণে কোনও সন্দেহজনক কিছু না মেলে, তা হলে সমস্ত অভিযোগ প্রত্যাহারের বিষয়টিও বিবেচনা করে দেখা হবে। প্রসঙ্গত, গত বছর থেকেই পর পর বেশ কয়েকটি মাওবাদী হামলার ঘটনার পর সম্প্রতি কড়া হাতে মাওবাদী দমনে নেমেছে সে রাজ্যের সরকার। চলতি সপ্তাহের শুরুতেই দু’টি পৃথক সংঘর্ষের ঘটনায় নিরাপত্তারক্ষীদের গুলিতে নিহত হয়েছেন ৩০ জন মাওবাদী। সেই আবহেই এল মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা। পরিসংখ্যান বলছে, গত ১০ বছরে মাওবাদীদের হাতে নিহত হয়েছেন ছ’হাজারেরও বেশি নিরাপত্তাকর্মী এবং সাধারণ নাগরিক। তবে সেই সংখ্যা এখন ৭০ শতাংশ কমেছে। আগামী দিনে মাওবাদ দেশ থেকে সম্পূর্ণ নির্মূল করাই এখন কেন্দ্রের লক্ষ্য।